এখন আর রাখঢাক নেই, বাংলাদেশ সরকার এবার ভারতকে সরাসরি ট্রানজিট দিতে চলেছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের ট্রেন চলাচল করবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতীয় ট্রেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলঞতে যাতায়াত করবে। এর মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রেন চলাচল করবে অন্য আরেকটি স্বাধীন দেশের ওপর দিয়ে। বিশ্বে এরকম উদাহরণ আর আছে কিনা আমার জানা নেই।
জানি না আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে কানাডার ওপর দিয়ে কোনো ট্রেন আলাস্কায় যায় কিনা। যদি যায়ও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ উত্তর আমেরিকার এ দুটি দেশের মধ্যে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের নাগরিকরা পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া আসা করতে পারে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দূরে থাকুক, অনেক জায়গায় সীমান্ত রেখার চিহ্নটুকুও দেখা যায় না। ভুল করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে।
আমেরিকা কানাডা থেকে শতগুণ শক্তিশালী হওয়ার পরও আমেরিকার সীমান্তরক্ষীরা কখনও কানাডার অধিবাসীদের ওপর গুলি ছোড়ে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে সবসময় শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার নিরপরাধ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে।
ভারত কখনও বাংলাদেশের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেনি। শুধু ১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়টুকু ছাড়া (যখন ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থ এক হয়ে গিয়েছিল) ভারত সবসময় বাংলাদেশকে শত্রুরাস্ট্র জ্ঞান করে এসেছে। নেপাল ও ভুটানের জনগণ ভিসা ছাড়াই ভারত যেতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের এ সুযোগ কখনও ছিল না। চিরশত্রু পাকিস্তানের সাথে ভারত যে আচরণ করে, বাংলাদেশের সাথেও ভারত একই আচরণ করে। পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে ভারত।
এ রকম একটি বৈরী রাষ্ট্রকে কেন আগ বাড়িয়ে ট্রানজিট দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত কখনও বাংলাদেশকে নেপাল বা ভুটান যাওয়ার জন্য ট্রানজিট দেয়নি। আর এখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট চাইছে। এমনতো নয় যে তাদের চলাচলের জন্য জায়গা নেই। তাদের রাস্তা আছে। তারপরও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আরও একটি বিকল্প পথ চাইছে।
বাংলাদেশে যারা ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে বলে তারা ধূর্ত। তারা একাত্তরে ভারতের সহযোগিতার কথা বলে। কিন্তু স্বাধীনতার পর গত পঞ্চাশ বছরে কি ঘটেছে সেটা বলে না। বিপদে পড়ে কেউ যদি সুদখোরের কাছ থেকে ধার নেয়, চিরকাল সেই মহাজনকে বাপ বাপ করতে হয় না।
আমরা জানি মোগল সম্রাটরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়ে কি ভুল করেছিলেন। আমরা ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে বিপদ ডেকে আনতে চাই না। আমরা জানি তিন বিঘা করিডর নিয়ে কি ঘটেছিল। শেখ মুজিবের নির্বুদ্ধিতায় ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বেড়ুবাড়ী নিয়ে নেয়, কিন্তু বিনিময়ে তিন বিঘা করিডরটি বাংলাদেশকে দেয়নি। কয়েক দশক টালবাহানার পর, বাংলাদেশকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে মাত্র, কিন্তু করিডরটির মালিকানা ভারতেরই রয়ে গেছে।
আমরা আরও জানি যে, ভারত বাংলাদেশের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়। এরা এক সময় শান্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিত। ওরা ভারত থেকে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আবার ভারতে ফিরে যেত। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ওদের পিছু নিলেও ওরা সীমান্ত অতিক্রম করার পর আর কিছু করতে পারতো না। এখনও কুকি চিনাদের সন্ত্রাসী নেতা নাথান বম ও তার দল ভারতে অবস্থান করছে। ভারত তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি এরকম একটি দেশকে আমরা কেন ট্রানজিট দিতে যাবো? আওয়ামী লীগের যারা ট্রানজিটের পক্ষে তারা হয়তো বলবেন একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে একরকম সহযোগিতা করা যায়। তাহলে আমরাও সিলেট থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য ত্রিপুরার ওপর দিয়ে ট্রানজিট চাইতে পারি। এতে আমাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। আপনারা কি ভারতকে রাজী করাতে পারবেন? দেখিতো পারেন কিনা?
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে দেশটির কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছিল ভারত এখন সে পথে এগুচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের সে সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত রুখতে হবে। এতে আমাদের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। সরকার যদি ভারতকে ট্রানজিট দিয়েই দেয় এটা হবে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরকারের প্রথম সরাসরি পদক্ষেপ। এমন হলে আমরা সরাসরি আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করবো। যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে তারা হবে ’রাজাকার’। এখানে কোন যদি কিন্তুর সুযোগ নেই। দেশের স্বাধীনতা কোনো এক্সপেরিমেন্টের বিষয় না। দেশপ্রেমিক জনগণকে সরকারের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিতভাবে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে নির্মূল করতে হবে। এখানে নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোন আপস চলে না।