Logo
Logo
×

অভিমত

কোটা ছাপিয়ে বড় ছবিটা দেখা জরুরি

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম

কোটা ছাপিয়ে বড় ছবিটা দেখা জরুরি

বাংলাদেশের তরুণরা সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন নিয়ে আবার উত্তাল হয়েছে। ছয় বছর আগে দেশজুড়ে আন্দোলন করে কোটা স্থগিত করার পর সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা ফের বহাল করায় তরুণরা আবার রাস্তায় নেমেছে। 

সরকারি চাকরিতে কোটা কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে কারোরই তেমন সন্দেহ নাই। এই আন্দোলনের সফলতাও কাম্য। কিন্তু, আমাদেরকে এই আন্দোলন ছাপিয়ে ভাবতে হবে?

প্রথমত, কি পরিস্থিতি হলে দেশের তরুণরা সরকারি চাকরির কোটা কমানোর জন্য জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিগত এক দশকে দেশের অর্থনীতি এবং শিক্ষাব্যবস্থা দুইই শোচনীয় অবস্থায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি না থাকায় প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি-বাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লাখো লাখো তরুণের বিনিয়োগ করারও সুযোগ নেই। 

এই অবস্থায়, উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন লেখাপড়া ও উন্নত জীবনের আশায়। অন্যদিকে, অল্পশিক্ষিতরা কায়িক শ্রমের মাধ্যমের উপার্জনের আশায় বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। মাঝখানে যারা থাকছেন, তাঁদের সেরা উপায় হচ্ছে কোনোমতে একটা সরকারি চাকরি বাগানো। বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভয়াবহ চিত্র এটি। 

দ্বিতীয়ত, সরকারি চাকরি কেবল নিরাপত্তা দেয় না, ক্ষমতাবলয়ের অংশ করে। এই দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সরকারি চাকুরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্তা থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত চলছে ঘুষ ও দুর্নীতি। একেকজন ক্ষমতার পাহাড় বানাচ্ছেন। এই শ্রেণিটি সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেও দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর অংশ হতে পারা তরুণদের জন্য লটারির টিকেট পাওয়ার মতো।

এই সুবিধাগুলোই নিচ্ছে শাসক গোষ্ঠী। তাঁরা সরকারি চাকরির মুলা ঝুলিয়ে তরুণদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা নষ্ট করছে। বিসিএসের লোভে তরুণেরা বছরের পর বছর দিক পাশ তাকাচ্ছে না। মাত্র কয়েকশো আসনের জন্য লাখো লাখো তরুণ স্বপ্ন দেখছে। 

অথচ, বাস্তব হচ্ছে ওই কয়েকশো বাদে বাকিদের ক্যারিয়ারটা পিছিয়ে যাবে। যখন বিসিএসের বেলুন ফুটো হয়ে যাবে, তিরিশ পার হওয়া ওই তরুণদের ভালো চাকরি কিংবা ব্যবসা করার উদ্যোম থাকবে না। অন্যদিকে, বিসিএস মদিরায় মত্ত থাকায়, দেশের গণতন্ত্র আর অরাজকতা নিয়েও প্রতিবাদ আর ভাবনাগুলো করার অবকাশ থাকবে না। উপরন্তু, শাসক শ্রেণি চাইবে এমন একটি আজ্ঞাবহ গোষ্ঠী তৈরি করতে, যারা বিপুল অর্থ আর ক্ষমতার বিনিময়ে যেকোনো মূল্যে তাঁদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখবে। 

তবুও রাস্তায় নেমে কোটা আন্দোলনের একটা গুরুত্ব আছে। তরুণরা যে শক্তিশালী, দাবি আদায়ে তাঁদের যে বিপুল ক্ষমতা ভুলে যাওয়া সেই ব্যাপারটা আবার স্মরণে আসবে। কিন্তু, যেহেতু এই তরুণদের একটা বড় উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরি, কোটা বিলোপ করে বৈষম্য দূর করার মহৎ উদ্দেশ্য থাকলেও দিনশেষে তাঁরা সরকারের অন্যায্যতা উপেক্ষা করবে, এমনকি আন্দোলনের ভাষায় প্রতিবাদের বদলে থাকবে আকুতি। 

ধরে নেওয়া যাক আন্দোলন সফল হলো। প্রায় সবধরনের কোটা তুলে নেওয়া হলো। তাঁতে কি ইনসাফ কায়েম হবে? কোটা না থাকলেও তো একটা বড় অংশ প্রশ্নপত্র কিনে বা সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে চাকরি নিশ্চিত করবে। এই আমলে এই দুর্নীতি কি কোনোভাবে রোধ করা যাবে? ভোট ছাড়া বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের ভিত্তি তো জনগণ নয় বরং এইসব দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী। ফলে, কোনোভাবেই এই ব্যাবসা বন্ধ হবে না। 

ফলত, কেবল কোটায় আটকে থাকলে আসলে কয়েকশো তরুনকে লটারির টিকেট পাওয়ায় দেয়া ছাড়া আর কোন ফায়দা দেবে না। অবশ্য, তরুণদের ধর্মই প্রতিবাদের। সেই জায়গা থেকে, যেই তরুণটি রাস্তায় নামার সাহস করছে, ক্ষীণ আশা করা যায় তাঁরা গোটা চিত্রটা দেখতে পাবে। 

অবশ্য তরুণদের একা কিছু করার নেই। প্রতিবাদী তরুণদের এগিয়ে নিতে লাগবে প্রতিবাদী ও দৃঢ় রাজনৈতিক দল, সত্যবাদী বুদ্ধিজীবী। মূল দায়টা নিতে হবে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোকেই। এই রাস্তায় নামা তরুণরা যাতে কেবল দাবার ঘুঁটি না হয়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে পরিবর্তনের দূত হয় সেই পথটা তাঁদেরই দেখাতে হবে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন