দুর্নীতিবিরোধী অভিযান দেখে বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ০৫:০২ পিএম
গত কিছুদিন ধরেই একের পর এক দুর্নীতিবাজের গোমর ফাঁস হচ্ছে। ছাগলকাণ্ডে প্রকাশ হয়ে গেলো প্রভাবশালী কর্মকর্তা মতিউরের বিপুল দুর্নীতি। বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে ধরা পড়লো বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এক প্রভাবশালী পুলিশের বনবিভাগীয় কর্মকর্তা পিতা ধরা পড়লেন কোটি কোটি টাকাঁর দুর্নীতির দায়ে। আরও দুই-চারজন কর কর্মকর্তা, সরকারি কর্মচারীর নাম উঠে আসছে। দুদকের তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা।
এর আগে এই সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী দুই ব্যক্তিত্ব- সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ এবং সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর- এদেরও দুর্নীতির নানা তথ্য ফাঁস হয়েছে। দুদকের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে এসেছে তাঁদের বিপুল সম্পত্তি ও দুর্নীতির বিবরণ।
এসব সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে বিনোদন হয়ে এসেছে। কেউ কেউ বিস্মিত হবার ভান করলেও এই আমলে সরকারি অফিসগুলোতে আপাদমস্তক যে দুর্নীতি হয় তা না জানার কারণ নাই। সংবাদমাধ্যম আর দুদকও জানতো, তাঁরা কেবল ইশারার অপেক্ষায় ছিল। সরকারের উচ্চমহল থেকে ইশারায় পাওয়ায় তাঁরা নড়েচড়ে বসেছে। এসব দুর্নীতিবাজদের পতন আনন্দের ব্যাপার হলেও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের এসব দেখে বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই।
প্রথমত, এসব ধরপাকড় আসলে সরকার দলীয় অন্তর্কোন্দলের ব্যাপার বলেই প্রতীয়মান হয়। আওয়ামী লীগের ভেতরে নানা ধরনের কোন্দল আছে, স্বার্থ নিয়ে ঝগড়া আছে। এরাই সুযোগ পেয়ে একজন আরেকজনকে ল্যাং মারে। বেনজীরের মতো লোক আওয়ামী লীগের ক্ষমতা রক্ষায় সিপাহসালার হলেও তাই সময়ের ফেরে এই ধরনের লোকও বিপদে পড়তে পারে।
দ্বিতীয়ত, জবাবদিহিতা না থাকায়, দেশের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সরকারি দলের কর্মী ও সরকারি কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানারকম প্রকল্পে ভাগ না পেলে বা কম পেলে তাঁরা শক্তি প্রদর্শন করছে। এমতাবস্থায়, কিছু ধরপাকড় করে ভয় দেখানো জরুরি। এতে শাসকের প্রতি ভয় বজায় থাকে।
তৃতীয়ত, প্রতিটা স্বৈরাচার নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য ভাবে। তাঁরা দেখাতে চায় যে, দেশের জন্য তাঁরা খুব কঠোর। তাঁর দল বা গোটা দেশ দুর্নীতিতে মজে থাকলেও তিনি সততার প্রতিমূর্তি। এই কারণে নানাসময় কিছু অভিযান চালানো হয়। দেখানোর চেষ্টা করা হয় যে, মহান শাসক কত কঠোর। জানুয়ারিতে আরেকটা তামাশার নির্বাচনের পর দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ওপর চাপ অনেকটা কমে এসেছে। সেই সুযোগে এই শোডাউন।
গণতন্ত্রকামীদের এসব দেখে বিভ্রান্ত না হয়ে মাথায় রাখতে হবে যে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া এবং দেশ ও দেশবাসীর প্রতি জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকা একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশ থেকে দুর্নীতি কখনোই কমবে না।