Logo
Logo
×

অভিমত

কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে বেনজীরের দুর্নীতি, সব নিয়ে প্রশ্ন করা শিখতে হবে

কাকন রেজা

কাকন রেজা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে বেনজীরের দুর্নীতি, সব নিয়ে প্রশ্ন করা শিখতে হবে

চলুন প্রশ্ন করতে শিখি। আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি। প্রশ্ন মানেই উত্তর। উত্তর মানেই জবাবদিহিতা। সেটা নিজের কাছে হলেও। প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখি, নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করি। তারপর সেই প্রশ্ন যেখানে করা দরকার সেখানে করি। অন্তত প্রশ্নটা রেখে যাই। অনেকে বলেন কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আমি লিখছি না কেন। আমি কোনো কিছু লিখার আগে নিজেকে প্রশ্ন করে নিই। কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আমার নিজের কাছে করা প্রশ্নোত্তর পর্ব এখনো শেষ হয়নি। তবে অনেকের বলার মুখে আমি প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা বলতে পারি। 

প্রথম প্রশ্ন হলো কোটা পুনর্বহালের সময়কালটা নিয়ে। যখন বেনজীর মানে নজিরবিহীন দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমগুলো কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকেও কিছুটা লিখতে শুরু করলো, তখন কোটা পুনর্বহাল হলো। এখানেও একটা প্রশ্ন রয়ে যায়। ভারতীয় রেল চলাচল নিয়ে যখন কথা হচ্ছে। বিতর্ক হচ্ছে ট্রানজিট না করিডোর। আলাপ হচ্ছে আমাদের লাভ-লোকসান নিয়ে, তখন এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরু। এখন রেল চলাচল, বেনজীরের দুর্নীতি সব উধাও প্রায় গণমাধ্যম থেকে। লাইভ চলছে কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে। এখানেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। 

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমাধান চাইছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনকে আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আইনে বিশ্বাস করেন বলেই হয়তো, আদালতের সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে আইনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, সেখানে আন্দোলনকারীরা কেন প্রধানমন্ত্রীকেই সমাধান মানছেন, সেখানেও একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। 

প্রশ্নের সাথে হাইপোথিসিস সঙ্গতই এসে যায়। হাইপোথিসিস যে সবসময় সঠিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। তবুও মানুষ তা করে, আমিও প্রশ্নোত্তরে তাই করি। ধরুন, কিছুদিন কোটা আন্দোলন নিয়ে উত্তাল হয়ে রইলো দেশ। এমন একটা পরিস্থিতি, এই মানছি, এই মানছি না। আশা-নিরাশার দোলাচল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাবছেন আরেকটু আন্দোলন হলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। এরমধ্যে বেনজীর দুর্নীতির আলাপ বন্ধ, যাদের দুর্নীতির থলেতে বেড়াল রয়েছে, তারাও সেই বেড়াল সামলে উড়াল দিয়েছেন কিংবা দেওয়ার পথ নিশ্চিত করে ফেলেছেন। 

এ সময়ের মধ্যে অনেকে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের বউয়ের মতো কেনা-বেচার কাজ শেষ করেছেন। মোটামুটি অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, তখন ঘোষণা হলো কোটা প্রথা পুনর্বার বাতিলের। কে করলো সেটাও একটা প্রশ্ন। কিন্তু যাইহোক বাতিল হলো। শিক্ষার্থীরা চিন্তা করলেন তারা জয়ী হয়েছেন। সুতরাং তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য শেষ। তাদের চাকরি মোটামুটি নিশ্চিত। তারা ফিরে গেলেন ক্যাম্পাসে-ক্লাশে। কিন্তু তাদের দায়িত্ব কি এখানেই শেষ? এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য দেখলাম। তিনি ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি ও তারা কি সত্যিকার অর্থেই জানেন ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি কী ছিলো? কেন মানুষ মুক্তি চেয়েছিল? বৈষম্য কি শুধু চাকরিকেন্দ্রিক? 

বললাম তো প্রশ্ন করা শিখতে হবে। প্রশ্ন করা না শিখলে উত্তর জানা যাবে না। উত্তর না জানতে পারলে সত্যিটাও সমুখে আসবে না এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রও প্রস্তুত হবে না। আচ্ছা বুঝলাম শিক্ষার্থীরা চাকরি পেলেন। কিন্তু চাকরি পেয়ে সৎভাবে বাঁচার মতো সহনক্ষমতা কি তাদের আছে? এখানে প্রশ্নটা তৈরি হলো কেন, কারণ হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। সৎভাবে চাকরি করে কি স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন সম্ভব? 

যদি সম্ভব না হয়, তাহলে চাকরি পাওয়াটাই কি শেষ কথা? নাকি চাকরির লক্ষ্য বে-নজির, মতিউর হওয়া? এখানে বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারটিও এসে যায়। কোটা বাতিল হলেই কি চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে? নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের খবরটি সেই প্রশ্নটিকেও সামনে এনেছে। 

সুতরাং প্রশ্ন করতে শিখুন এবং তা ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়েই। প্রশ্ন করাটা জরুরি, না হলেন উত্তর পাওয়া যাবে না, তৈরি হবে না জবাবদিহিতার ক্ষেত্রও। জবাবদিহিতা তৈরি না হলে সবকিছুতেই বে-নজির ঘটনা চাক্ষুষ করতে হবে এবং চাক্ষুষ করেও চুপ থাকতে হবে। 

শেষ কথা। জানি আমাকে অনেকেই সংশয়বাদী বলবেন। বলুন, আপত্তি নেই। সংশয় মানেই প্রশ্ন। আমি তো অন্তত প্রশ্ন করতে শিখেছি এবং তা নিজেকে হলেও। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন