Logo
Logo
×

অভিমত

কেনিয়ার মতো দেশে আইএমএফ কেন ব্যর্থ হচ্ছে, করণীয় কী?

Icon

ড্যানি ব্র্যাডলো

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম

কেনিয়ার মতো দেশে আইএমএফ কেন ব্যর্থ হচ্ছে, করণীয় কী?

কেনিয়ায় হওয়া বিক্ষোভের একটি ছিত্র। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে ব্যর্থ হচ্ছে তার একটি সতর্কতা হচ্ছে কেনিয়ার সাম্প্রতিক বিক্ষোভ। দেশটির জনসাধারণ মনে করছে, সংস্থাটি তার সদস্য দেশগুলিকে তাদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যাগুলি মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারছে না। এই সমস্যাগুলো দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনীতির বদৌলতে আরও তীব্র হচ্ছে।

এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কেনিয়ার ঋণ পরিশোধ করতে প্রয়োজনীয় এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহের সমস্যায় কেবল আইএমএফ-ই একমাত্র দায়ী নয়। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি মোকাবিলায় শাসক শ্রেণির ব্যর্থতা, সরকারি অর্থ ব্যয়ে দায়িত্বহীনতা এবং অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা করে কর্মসংস্থান তৈরি এবং দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে না পারার ব্যর্থতা। 

এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশটি খরা, বন্যা এবং পঙ্গপালের উপদ্রবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও, দেশটির ঋণদাতারা দাবি করছে, তারা দেশটির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন আন্তর্জাতিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সত্ত্বেও বৃহৎ আকারে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে।

কেনিয়াকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে আইএমএফ। কিন্তু এই অর্থায়নের সঙ্গে কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়া, যেগুলোতে ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা নাগরিকদের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। আইএমএফ অবশ্য দাবি করছে, সংস্থাটি তার সদস্য দেশকে যেসব সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সহায়তা করে সেই তালিকায় জলবায়ু, ডিজিটালাইজেশন, লিঙ্গ, শাসন এবং অসমতাও অন্তর্ভুক্ত।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কেনিয়ার ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আফ্রিকার ২১টি দেশ আইএমএফের ঋণ সহায়তা পাচ্ছে। আফ্রিকায় সরকারগুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু এবং সামাজিক পরিষেবার জন্য যে পরিমাণ খরচ করে থাকে, গড়ে আইএমএফের ঋণ তার চেয়ে বেশি। 

আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দেওয়া কঠিন শর্তগুলির কারণে কেনিয়া এবং অন্যান্য আফ্রিকান দেশের নাগরিকরা মনে করেন, এই অত্যন্ত শক্তিশালী আইএমএফ-ই তাদের এই দুর্দশার নেপথ্য কারণ। সে যাগকে, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির আইন, রাজনীতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণায় অবশ্য বিপরীতটা দেখতে পেয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, আইএমএফের কর্তৃত্ব এবং কার্যকারিতা কমে যাওয়াই হলো নাগরিকদের দুর্দশরা আসল কারণ। কিছু অতীত ইতিহাস দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা যায়। 

ইতিহাস

আজ থেকে ৮০ বছর আগে যখন আইএমএফ গঠনের জন্য চুক্তির আলোচনা হয় তখন আশা করা হয়েছিল, এর মূলধন হবে বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। আর এই অর্থ দিয়ে ৪৪টি দেশের আর্থিক এবং অর্থপ্রদানের সমস্যা মোকাবিলা করা হবে। অথচ বর্তমানে আইএমএফ ১৯১টি সদস্য দেশের বাজেট, তহবিল, আর্থিক এবং বৈদেশিক মুদ্রার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি জলবায়ু, লিঙ্গ এবং বৈষম্যের মতো নতুন সমস্যা মোকাবিলা করবে বলেও আশা করা হয়। 

এসব দায়িত্ব পালনের জন্য সদস্য দেশগুলো সংস্থাটিকে বৈশ্বিক জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ সরবরাহ করেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির আকার এবং সদস্য দেশের সংখার তুলনায় সংস্থাটির সম্পদ খুবই কম। 

প্রথমত, সংস্থাটি সদস্য দেশকে তার নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে এবং আইএমএফ ও নাগরিকদের প্রতি আইনি প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে প্রয়োজনের তুলনায় কম আর্থিক সহায়তা করে। ফলে আইএমএফকে কঠোর নীতি অবলম্বন করতে হয়। এই জন্য সদস্য দেশকে কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতিও গ্রহণ করতে হয়। 

দ্বিতীয়ত, সম্পদ কমে যাওয়ার প্রভাবে সার্বভৌমভাবে ঋণ সংকট পরিচালনায় আইএমএফর দরকষাকষির পরিস্থিতি দুর্বল করেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ওই ধরনের সংকটে আইএমএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এটিই আইএমএফকে কোন সময় কোন দেশকে ঋণ সহায়তা বা ঋণ মওকুফ করতে হবে, কোনো দেশের আর্থিক চাহিদার সঙ্গে সম্পদের গ্যাপ কতটুক, আইএমএফ কতটুকু দিলে সেই গ্যাপ পূরণ হবে এবং অন্যান্য ঋণদাতাদের কতটুকু অবদান রাখতে হবে তা নির্ধারণে সাহায্য করে। 

যেমন, ১৯৮২ সালে যখন মেক্সিকো নিজেদের ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঘোষণা দেয় তখন আইএমএফ বলেছিল, তারা ওই ঋণ পরিশোধের শর্ত পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের এক তৃতীয়াংশ দেবে এবং দেশটির বাণিজ্যিক ঋণদাতাকে বাকি অর্থ দিতে হবে। সংস্থাটি ঋণদাতাদের কয়েক মাসের মধ্যে মেক্সিকোর সঙ্গে চুক্তি করতে তাগিদ দিতে সক্ষম ছিল। বিশ্বব্যাপী এটা করার জন্য সংস্থাটির পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা ছিল। আজকের দিনে ওই ধরনের ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ অক্ষম। যেমন, আইএমএফ জাম্বিয়ার চাহিদার চেয়ে ১০ শতাংশের কম অর্থ দিতে পেরেছে। ঋণ খেলাপি হওয়ার চার বছর হয়েছে, অথচ আইএমফের সহায়তা সত্ত্বেও সব ঋণদাতার সঙ্গে জাম্বিয়া পুনর্গঠনে চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি। 

কি করতে হবে?

এই সমস্যার সমাধান হলো, ধনী দেশগুলোকে আইএমএফের নীতি বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দিতে হবে। তাদের অবশ্যই কিছু নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে এবং সংস্থাটিকে আরও গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। 

স্বল্প মেয়াদে আইএমএফ দুটি পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রথমত, সংস্থাটিকে অবশ্যই তার বিশদ নীতি এবং পদ্ধতিগুলি নির্ধারণ করতে হবে। আর সেগুলো তার নিজস্ব কর্মীদের কাছে, সদস্য দেশের কাছে এবং দেশের নাগরিকদের কাছে ব্যাখ্যা করবে যে সংস্থাটি কী করতে পারে এবং করবে। এই নীতিগুলিতে সেই মানদণ্ডগুলি স্পষ্ট করা উচিত যেগুলো দিয়ে আইএমএফ কখন এবং কীভাবে জলবায়ু, লিঙ্গ, অসমতা এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিজেদের তৎপরতায় নেবে তা নির্ধারণ করবে। 

সংস্থাটি কার সাথে পরামর্শ করবে, বাইরের অ্যাক্টররা কীভাবে আইএমএফের সঙ্গে জড়াতে পারে এবং নিজেদের কার্যক্রমগুলির পরকল্পনা এবং বাস্তবায়নে সংস্থাটি কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে তাও তাদের বর্ণনা করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, আইএমএফকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে তার বিস্তৃত নীতির কারণে উত্থাপিত সমস্যাগুলি খুবেই জটিল এবং এতে ভুলের ঝুঁকি বেশি।

তাই আইএমএফের এমন একটি কর্মকৌশল দরকার যা সংস্থাটিকে তার ভুলগুলি চিহ্নিত করতে, তাদের নেতিবাচক প্রভাবগুলিকে সময়মতো মোকাবিলা করতে এবং সেগুলোর পুনরাবৃত্তি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

সংক্ষেপে বললে, আইএমএফকে অবশ্যই একটি স্বাধীন জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

ড্যানি ব্র্যাডলো, ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ার সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব স্কলারশিপের প্রফেসর/সিনিয়র রিসার্চ ফেলো। দ্য কনভারসেশন থেকে অনুদিত। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন