Logo
Logo
×

অভিমত

ট্রাম্পের আমেরিকা কেমন?

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:০১ এএম

ট্রাম্পের আমেরিকা কেমন?

নানা রকম কেলেঙ্কারিতে জড়িত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার জনপ্রিয়তার খবরও জানেন অনেকে। বিশেষত, সম্প্রতি এক উন্মুক্ত বিতর্কে তিনি যখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পর্যুদস্ত করেন, আগামী নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে যান, তখন অনেকেই অবাক হয়েছেন।

অবাক হবার কারণ হল—ট্রাম্প যাদের মধ্যে জনপ্রিয় সেই শ্রেণির মার্কিন নাগরিক সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।

সেই শ্রেণির মার্কিন নাগরিকরা কেমন, তার নিরাপদ ব্যাখ্যা বেশ কঠিন। তবে বিশিষ্ট-অবিশিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকের বক্তব্য এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

মার্কিন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রছ মেয়ার এ প্রসঙ্গে শুধু একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যা বিবেচনা করা অসংগত নয়। প্রশ্ন-উত্তর ওয়েসাইট কোরায় উপস্থাপিত তার প্রশ্নটি হল: ট্রাম্পের বর্তমান রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতা সম্পর্কে কী বলে?

কী বলে তা রছ মেয়ার বলেন নাই।

ওয়েন টার্নার নামে এক ব্যক্তি কোরায় বলেছেন, ‘কর্মক্ষম মস্তিষ্কের যেকেউ দেখতে পাবে একজন ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক গাধা কী।’

গত তিন দশক ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে চুক্তি বিবাদ, মানহানির দাবি, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ। ট্রাম্পের কোম্পানিগুলি শতাধিক ট্যাক্স-বিরোধে জড়িত।

আরেকজন লিখেছেন, ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে ভিন্ন ভোটারদের একটি জোটের মাধ্যমে জিতেছিলেন। এই ভোটারদের মধ্যে ছিল বিদ্বেষী, কম কর দিতে চাওয়া লোকজন ও শ্রমিক শ্রেণির আমেরিকান যারা বিশ্বাস করেছিল যে, কেউ তাদের খোঁজ করছে না। ট্রাম্পই তাদের বন্ধু হয়ে এসেছেন। এই সমর্থকরা ট্রাম্পের মিথ্যাচার, নোংরামি ও জঘন্য আচরণ সম্পর্কে জানত না। ট্রাম্পের ঘৃণ্য কাজ এবং আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি তা দেখানোর আট বছর পরও তার মূল সমর্থকরা অবিচল রয়েছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লজ্জার।

ইউএসএ টুডের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত তিন দশক ধরে ট্রাম্প ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত ও রাজ্য আদালতে অন্তত ১৪৫০টি মামলার বিবাদী ছিল। ফেডারেল আদালতে কমপক্ষে ১৬৯টি মামলায় ট্রাম্পের নাম ছিল। 

কোরায় জন প্যারিস নামে এক ব্যক্তির প্রশ্ন: ট্রাম্প তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে কী করতে পারেন?

উত্তর: খুন হন। আমি সত্যিই আশা করি ট্রাম্প তা করবেন না। কারণ তিনি যদি তা করেন তবে আমাদের ভান করতে হবে যে তিনি এতটা খারাপ ছিলেন না। সময়ের সাথে সাথে মানুষ তার অকথ্য, অকার্যকর প্রেসিডেন্সি ভুলে যাবে এবং যা মনে থাকবে তা হল তাকে হত্যা করা হয়েছিল!

অ্যান্টনি ফস্টার : আপনি কি বিশ্বের কোনো দেশ কল্পনা করতে পারেন যেখানে ট্রাম্পকে রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচনের অনুমতি দেবে? একজন অপরাধী, সিরিয়াল মিথ্যাবাদী, রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রকারী এবং গণহত্যার জন্য দোষী—তাকে কেন কেউ ভোট দিতে চাইবেন? কার্যত বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এমন হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিত বা অন্তত বন্দি করত। তবে আমেরিকায় নয়। ট্রাম্প কেবল আমেরিকাতেই জন্মাতে পারে। এটা বাকি বিশ্বের মধ্যে একটি রসিকতা। কিন্তু ট্রাম্প এখনও জীবিত এবং একটা লাথিও খায়নি। আসলেই একটা রসিকতা!

ড্যানিয়েল আর কিং: পৃথিবীতে অনেক বদমাইশ আছে। আমি সাধারণত তাদের বিষয়ে চিন্তা করি না। তারা অবশ্যই আমাকে রাতে জাগিয়ে রাখে না। 

সিন্ডি উ প্রশ্ন করছেন, ‘ট্রাম্প তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে কী করতে পারেন?’

উত্তর: স্বীকার করুন, তিনি (ট্রাম্প) জানেন না তিনি কী করছেন।

জেসন আরগন: সাম্প্রতিক ইতিহাসে ট্রাম্প হলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি প্রতিদিন ন্যূনতম ৭টি মিথ্যা বলেন। ট্রাম্প মানুষকে প্রতারণা বন্ধ করতে পারবেন না। এটি একটি জীবনগত অভ্যাস। শ্রমিক, ঠিকাদার, রাস্তার মানুষ—সবার সঙ্গেই ট্রাম্প প্রতারণা করেছেন। ট্রাম্প একজন সিরিয়াল যৌন নিপীড়ক। অন্তত ২২ জন মহিলা তার বিচার দাবি করেছেন। সম্ভবত আরও অনেক আছে যাদের ট্রাম্প কিনে নিয়েছেন, অথবা তারা এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। কারণ হয়ত তারাও অপরাধী।

কোরা, এক্স (সাবেক টুইটার), ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে মূলত এমন অল্পকিছু কথাই বারবার পুনরুচ্চারিত হয়। কিন্তু ট্রাম্পের সেই কট্টর সমর্থকদের কদাচিৎ দেখা মেলে।

জেসন আরগন মনে করেন, ট্রাম্প কয়েক মিলিয়ন লোকের মগজ ধোলাই করেছেন যারা মনে করে, ট্রাম্প সিশুর দ্বিতীয় আগমন। তারা তার প্রতিটি দোষ উপেক্ষা করে। তাদের একটি বিশাল বৃত্ত রয়েছে যারা ট্রাম্পের জন্য টেক্সট তৈরি করে, মন্তব্য তৈরি করে, মেমে তৈরি করে, গল্প বলে, ওয়েবসাইট চালায়—সবই অবিরাম মিথ্যা বলে, কৌশল করে এবং প্রতারণার জাল তৈরি করে যা ট্রাম্প প্রতিদিন ঢেলে দেন।

অ্যান্টনি হেপটন: ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বকে তার নীতি থেকে আলাদা করা কি সম্ভব?

উত্তর: তার কোনো নীতিই নেই। তিনি রিপাবলিকান পার্টির একটি হাতিয়ার ত্র। তারা ট্রাম্পের হাতটি পছন্দ করে। তারা তার সামনে ঠেলে দেওয়া কিছু কাগজে তার স্বাক্ষর চায়। ট্রাম্প যা স্বাক্ষর করেন তা তিনি কখনও পড়েন না। কারণ যদি তিনি তা করেন তবে কাগজে কী আছে তা তিনি বুঝতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ট্রাম্প নিজেকে এমন একজন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, যিনি গুরুতর অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনিই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। 

দ্য গার্ডিয়ানের নিয়মিত কলাম লেখক জনাথন ফ্রিডল্যান্ড লিখেছেন, ট্রাম্পের দিন শেষ হয়েছে এবং তার হোয়াইট হাউসে ফেরার সব আশা শেষ হয়েছে—বিশ্ব স্বাভাবিকভাবে চললে এ কথায় কেউ দ্বিমত করত না। একটি স্বাভাবিক বিশ্বে আমরা দাঁড়িয়ে থাকলে অবশ্যই বলতাম, ‘আমেরিকানরা কখনোই তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন অপরাধীকে নির্বাচিত করবে না। ১৯৮৮ সালে ব্রিটিশ রাজনীতিক নিল কিনকের বক্তব্য চুরি করে নিজের ভাষণে চালিয়ে দেওয়ার কারণে জো বাইডেনকে যে ভোটাররা অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন, সেই ভোটাররা বাইডেনের চেয়ে অন্তত ৩৪ গুণ অন্যায়কারী ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে পাঠাবে, এটা হতেই পারে না। কিন্তু কথা হচ্ছে সেই স্বাভাবিক বিশ্বকে আমরা অনেক আগেই অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। 

ট্রাম্প ও তার অনুসারীরা এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য বলেন, তারা ট্রাম্পের ওপর আসা আইনি আঘাতকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প নিজেকে রাষ্ট্রক্ষমতার গভীরে থাকা উদারপন্থীদের চক্রান্তের শিকার বলে দাবি করে আসছেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মি. ট্রাম্পের নানা ধরণের অদ্ভূত কার্যকলাপ বা বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তাঁর দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের সমালোচনা তৈরী হলেও পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা কিন্তু তার কাজকর্মকে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করেন।

ফেসবুকে সুজানাহ নামে একজন মার্কিন নাগরিক মন্তব্য করেছেন, ‘আমার মনে হয় মিস্টার ট্রাম্প আমেরিকার স্বার্থকে সব সময় সবার ওপরে রাখেন। এ জন্যই আমি তাকে সমর্থন করি।’ আমেরিকার স্বার্থকে সব সময় সবার ওপরে রাখার ঘোষণা ট্রাম্প সময়-অসময় দেন। অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, অন্য প্রেসিডেন্টরা কি আমেরিকার স্বার্থকে সব সময় সবার ওপরে রাখেন না? অবশ্যই রাখেন, কিন্তু সবাই তা উচ্চ স্বরে চাউর করেন না। কেবল ট্রাম্পই তা করেন। ফলে মানুষ ট্রাম্পকে তাদের স্বার্থের ধারকরূপে দেখতে পায়। তাহলে কি সবারই উচ্চ স্বরে চাউর করা উচিত?

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন