Logo
Logo
×

অভিমত

গোপালগঞ্জের দুই হাজার কোটি টাকার অকেজো লাইন, আমাদের উন্নয়নের প্রতীক

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম

গোপালগঞ্জের দুই হাজার কোটি টাকার অকেজো লাইন, আমাদের উন্নয়নের প্রতীক

নামটা যেহেতু টুঙ্গিপাড়া, ফলে কোনো রকম সম্ভাব্যতা জরিপেরও দরকার নাই। যেকোনোভাবে সেই ভূমি পর্যন্ত রেললাইন নিতে হবে। এই প্রতিজ্ঞার আওতায় ২০১০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।

অবশ্য, আওয়ামী লীগের আমলে যেমনটা হয়, তাই ঠিক তার এক আদর্শ উদাহরণ হলো এই প্রকল্প। নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতা জুড়ে দিয়ে এক ধরনের আবেগ তৈরি করা হয়, এরপর লুটেরারা অবাধে বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা মেরে দেয় এবং দিনশেষে এমন এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যার তেমন কোনো ফায়দা জনগণ পায় না। গোপালগঞ্জ-রাজবাড়ী রেলওয়ে যেন গত পনের বছরের বেশিরভাগ প্রকল্পের প্রতীক।  

১৯৩২ সালে নির্মিত রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত রেললাইনটি ১৯৯৭ সালে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১০ সালে টুঙ্গিপাড়াকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য ৭৫ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার সংস্কার এবং কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জের মধ্যে ৩২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন নতুন করে নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে এই প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুন মাসে শেষ হবার কথা ছিল। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল এক হাজার ১০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। 

কিন্তু তা শেষ হয় ২০১৮ সালে আর ব্যয় হয় দুই হাজার ১১০ কোটি টাকা।

অথচ রেললাইনটি ব্যবহার করে গোপালগঞ্জ-রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটে একটি মাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এত টাকা প্রকল্পের পেছনে গেলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জনবলের অভাবে এই সেকশনের চারটি স্টেশন চালুই করতে পারেনি। এসব স্টেশনে রেলকর্মীদের জন্য তৈরি করা বেশ কয়েকটি ভবন এখনও অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন সম্পর্কে। সেখানে উঠে এসেছে এসব পর্যবেক্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো রকম সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া এই প্রকল্প গ্রহণ করায় সময় ও অর্থের বিপুল অপচয় ঘটেছে। জনগণের তেমন কাজে আসছে না। তবে তারা প্রকাশ্যে যা বলেননি তা হচ্ছে, এই আমলে এইসব প্রকল্প পরিকল্পনা করেই করা হয়। এসব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য জনসেবা নয়, বরং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এখান থেকে নয়ছয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। এর সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশ থাকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের। 

আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করা গেলেও বাংলাদেশের মতো জনঘনত্বের দেশে নাকি স্টেশন চালু করতে জনবলের অভাব! যুক্তিটা অদ্ভূত শোনালেও, চোরদের মানসিকতা বুঝলে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। প্রকল্প করলে যে পরিমাণ টাকা মারা যায়, রক্ষণাবেক্ষণ, লোকবল নিয়োগ দিয়ে জনসেবা করলে তো সেই পরিমাণ লাভ হবে না। অতএব, শয়ে শয়ে প্রকল্প হাতে নাও। বালিশের দাম লাখ টাকা দেখাও, সুইয়ের দাম কয়েক হাজার। এক হাজার কোটির প্রজেক্ট দুই হাজার কোটিতে শেষ করো। দেশের টাকা হরিলুট করে, বেগমপাড়ায় সম্পদ পাচার করো। 

উন্নয়নের নামে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বাংলাদেশে যে অসীম লুটপাট হচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অবিশ্বাস্য অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন