এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হতে শেখায়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে একটি স্বঘোষিত ফাঁপা শ্রেষ্ঠত্বের বোধ জারিত করে নতুন কাস্ট সিস্টেম রচনা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
এই সর্বোচ্চ বিদ্যা কী! ক্ষমতা-কাঠামোতে ঘুরঘুর করা। ঈদের দিন বঙ্গভবনে সেমাই খেতে যাওয়া; গণভবনে গিয়ে "কাঁদো বাঙালি কাঁদো" বলে চোখা মোছামুছি করা। এর পরিবর্তে ছলে বলে কৌশলে প্লট-পদক-পদবি জোগাড় করা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্ররা টিভিতে গিয়ে গরিব মানুষের ছেলে-মেয়েকে "সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু" করার ফতোয়া দিয়ে; নিজের ছেলে-মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করে। এইভাবে ভাষার কাস্ট সিস্টেম চালু করে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজনীতির দুই লালসালুর মাজারের খাদেম হয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে। আলফাডাঙ্গা কিংবা ভুরুঙ্গামারী থেকে এসে দুই দিন মাস্তানি করে বেড়িয়ে; হল দখল করে ভিআইপি হয়ে পড়ে। মহিষের পিঠে চড়ে চরে ঘোরা ছেলেরা হাতিতে চড়ে টিএসসিতে আসে। পাঁচবার ফেল করে দেশসেরা ছাত্রনেতা হয়। এদের ভয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাণটুকু হাতে নিয়ে বিসিএস গাইড পড়তে যায় লাইব্রেরিতে। পুলিশ-প্রশাসনে ঢুকে সেও একদিন ঐ রকম মাস্তানি করার স্বপ্ন লালন করে।
আর একেবারেই পেশিশক্তিতে দুর্বল যারা; তারা টিএসসিতে যায় সংস্কৃতি চর্চার নামে সরকারি সাংস্কৃতিক ঘোঁট হতে। এরা খুব ভালো করে শেখে তেলাঞ্জলি দেয়া। এদের একটি অংশ "প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি"-র ভাঁড় সাংবাদিক হয়। আরেকটি অংশ বেছে বেছে সরকারি কৃতি ব্যক্তিদের শহীদ মিনারে এনে সতকার করার অনুশীলন শুরু করে।
রাজনৈতিক ধারা, বিসিএস ধারা ও সাংস্কৃতিক ধারার প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকে দেশ ডাকাতির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীর পাহারাদার হওয়া। অধুনা মোদির পাহারাদার নামে নতুন একটি তস্কর শাখা বিকশিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ করেছিল দেশের কৃষক-শ্রমিক-গ্রামীণ যুবকেরা; কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে ছবি তুলে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধেরও যে সেলফি হয়; তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক আগেই উদ্ভাবন করেছিলেন। অনেকে ১৬ ডিসেম্বর মাথায় পতাকা বেঁধে বিজয় মিছিল করায়; এদের মুক্তিযুদ্ধের ষোড়শ ডিভিশন বলা হয়। যুদ্ধকালে বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ফেলে অনেক হিন্দু পরিবার কলকাতায় শরণার্থী হয়; অনেক বিহারী পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর পুরুষেরা অনেকেই পাতলা খান লেনের মেস ছেড়ে গিয়ে দখল করে হিন্দু ও বিহারীদের বাড়ি। শুরু হয় ঢাকা শহরের ছাপড়ি অভিজাত হিসেবে একটি নতুন বুর্জোয়া শ্রেণির জীবন।
এই বুর্জোয়ারা কোন পরিশ্রম না করে দেশপ্রেমের তেলে দেশ ভেজে কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়। ছেলে-মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোতে আর স্ত্রীদের কানিজ আলমাসকে দিয়ে বার্নিশ করানোতে কেউ আর কুক্ষণে বলতে পারবে না এরা আলফাডাঙ্গা কিংবা ভুরুঙ্গামারীর মাল। এদের তখন "ঢাকায় থাকি" গর্বে পা পড়ে না মাটিতে। এদের মেয়েরা ঠোঁট সেলফি তোলার মতো ফুলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে লোকজনে গড়ে খ্যাত ও কুট্টি বলতে শুরু করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখায় অন্যায় দেখে চুপ থাকার শিল্প। "দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না" বলে ফেসবুকে রবীন্দ্রসংগীত শেয়ার করে; কিংবা নির্মলেন্দু গুণের কবিতা আউড়ে; সুন্দর ফুল-লতা-পাতার ছবি দিয়ে ভীষণ রুচিশীল সমাজ হয়ে উঠতে পটু এরা। ক্রসফায়ার-গুম-ভোটহীনতায় চুপ। আর কুঁচ কুঁচ করে ক্ষমতাখোদার প্রশংসা। দিবসের ক্যালেন্ডার ধরে ধরে পুজো-অর্চনা করে ক্ষমতা ধর্ম পালনে অসম্ভব দক্ষতা এদের।
স্বাধীন বাংলাদেশ লুন্ঠনে; দেশডাকাতি করে বিদেশে টাকা-পাচার; ভিক্ষুক থেকে নব্য জমিদারি অর্জনের সমস্ত কলাকৈবল্য শেখা যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শিক্ষকের ব্যাগ টেনে, পার্টির দালালি করে শিক্ষক হলে, ভুল বানানে বিবৃতি লিখে কেটে যায় সারাজীবন। আর যারা সৎ ও মেধাবী শিক্ষক তাদের গায়ে গোবর মাখিয়ে দিতে দিনমান কেটে যায় শৃগালরুপী দলীয় শিক্ষকদের। এই বিশ্ববিদ্যালয় তকমা বা গোবর মাখাতে ওস্তাদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের চাকরি করা বাবা ও মামার বাড়িতে চর্বি জমিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পর বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ হয়ে "তকমা বা গোবর" তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার বিশাল ঐতিহ্য এখানে রাসেলস ভাইপার হয়ে খেলা করে। রাসেলস বনপাড়ের সমস্ত দংশনকে জাতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বর্ণনা করা ১৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিক উৎপাদন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনি যদি মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান হন; তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি মিসফিট। আপনার বাপ-দাদা যদি সত-শিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষ হয়ে থাকেন; আপনাকে সাবধান হতে হবে। আলফাডাঙ্গা ও ভুরুঙ্গামারীর ছাপড়ি এলিটেরা আপনাকে ছিঁড়ে ফেলবে। সৎ-সুদর্শন-সরল-মেধাবী মানুষদের বিরুদ্ধে এপারথেইড চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে ক্যালিবানেরা প্রস্তুতি নেয় মিরান্ডাকে জয় করতে। রাসেলস বনপাড়ের গ্ল্যাডিয়েটরের ক্যানিবালিজ চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলোসিয়ামে।