Logo
Logo
×

অভিমত

দুর্নীতি আর ভারততোষণের চাপে জেরবার বিদ্যুৎ খাত

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম

দুর্নীতি আর ভারততোষণের চাপে জেরবার বিদ্যুৎ খাত

আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের তথাকথিত সাফল্য নিয়ে যে গৌরব করে তার অন্যতম হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। তারা দাবি করে, দেশের কোনায় কোনায় তারা বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই মন্ত্রণালয় দেখভাল করেন। অথচ দেশের বিদ্যুতের অবস্থা এখনও তথৈবচ, দুর্ভোগময়। 

কুইক রেন্টাল নামক পদ্ধতির ফলে বিপুল অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির খবর এখন সবারই জানা। ভারতের ক্ষমতাসীনদের প্রিয়পাত্র আদানির সঙ্গে অসম চুক্তির ফলে দেশের বারোটা বাজানো হলো। অথচ এতকিছুর পরেও এখন বিদ্যুৎ নেই। 

ঢাকার বাইরে অবস্থা এতো খারাপ যে, প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টা বা এরও কম সময় বিদ্যুৎ থাকে। বিদ্যুতের অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য বিপাকে। চার্জ দিতে না পারায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলো অচল হয়ে বসে থাকছে। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নানারকম অসুখবিসুখ হচ্ছে। 

বিদ্যুতের দাম নিয়েও চলছে তুঘলকি কারবার। প্রিপেইড মিটারের দামের আগামাথা খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাবহারকারীরা। মিটারে রিচার্জ করলে একটা বড় অংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে নানারকম করের কথা বলে। মাস দুয়েক আগেও একজন গ্রাহক মাসে বিদ্যুতের জন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ করতেন, এখন তার প্রায় দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। 

জুনের শেষ সপ্তাহে দেশজুড়ে চলেছে ভয়াবহ লোডশেডিং। জুনের ২৬ তারিখ রাত ১২টায় রেকর্ড দুই হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ভারতের গড্ডার আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৩৭৫ মেগাওয়াটের মতো পাওয়া যাচ্ছে। পায়রার একটি ইউনিট বন্ধ। অন্যদিকে দেশের গ্যাসভিত্তিক দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট, ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার মেঘনাঘাট কেন্দ্রটি গ্যাস সংকটে বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ ছিল। 

নিজেদের দূর্নীতির রাস্তা খোলা রাখতে এবং ভারতকে লাভবান করতে চাওয়ার কারণেই দেশের বিদ্যুৎখাতের এই অবস্থা। জ্বালানি সেক্টরের সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন সামাজিক মাধ্যমে জানান, বাংলাদেশ ২০১০ সালে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করলো, সেখানে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ ভারত,নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানির পরিকল্পনা ছিল। নেপাল ও ভুটানে সরকার জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করে। এতে অল্প টাকায় বিদ্যুৎ পেতাম আমরা। এমনকি গোটা দক্ষিণ এশিয়াতে এই গ্রিড ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারতো।  একই সময় ভারত তার পূর্বাঞ্চল থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নেবার জন্য বাংলাদেশ করিডোর দেয়। অথচ ভারত করলো কী? ভারত তাদের বিদ্যুৎ নীতিতে পরিবর্তন আনলো, তারা বললো ভারতের মাটি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বিদ্যুৎ নিতে গেলে ওই কেন্দ্রটির মালিকানায় অন্তত ৫০ ভাগ ভারতের থাকতে হবে। সঞ্চালন লাইনের নিয়ন্ত্রণও ভারতের থাকবে। এই কারণে ভুটানে আমাদের ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আটকে গেলো; নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ঝুলে গেলো। অথচ নেপালের জলবিদ্যুৎ যদি আমরা অক্টোবর পর্যন্ত পেতাম তাহলে সেই সঞ্চালন লাইনে আমরা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নেপালকেই আমাদের শীতকালে বসে থাকা বিদ্যুৎ দিতে পারতাম। 

শুধু বিদ্যুৎ নয়, দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই অবস্থা। নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত না করে আমদানিনির্ভর অর্থনীতি বিদ্যামান। এতে দুর্নীতি করার প্রচুর সুযোগ থাকে, পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিশেষত ভারতকে বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা দিয়ে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা যায়। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন