একজন ওসির জবানবন্দি
মল কি তবে সবার শরীরে মাখানো?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:২১ পিএম
আগে পত্রপত্রিকায় আলোচনা আসতে হবে, নিউজ ভাইরাল হতে হবে। তারপর নড়েচড়ে বসবে দুদক। শুরু করবেন তাদের অনুসন্ধান, গঠিত হবে কমিটি। জমা পড়বে প্রতিবেদন। করা হবে মামলা। আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর ততদিনে দুর্নীতিবাজ তার উপার্জিত দুর্নীতির অর্থের কিয়দাংশ অপ্রকাশিত দুর্নীতিবাজদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে সপরিবারে নিরাপদ আশ্রয় নেবেন।
এই যদি হয় অবস্থা, তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের রুটিন ওয়ার্ক কী? কোন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি তো ওভার দা নাইট মিলিয়নিয়ার হয়ে যাননি। দুর্নীতিবাজের মিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে পরতে পরতে তাকে দেখভাল করার অথরিটি সমূহ কি করেছিলেন?? উপার্জিত দুর্নীতির অর্থের ন্যায্য হিস্যা আদায় করে মুখে কুলুপ এটে ছিলেন? কিংবা আজ যে পত্রিকা ওয়ালা লিড নিউজ করে পত্রিকার কাটতি বাড়াচ্ছেন দুর্নীতিবাজ ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই পত্রিকাওয়ালাই তো দেখেছিলাম সেই দুর্নীতিবাজের তোষামোদি করে তাকে মানবিক, দেশবরেণ্য, সততার মূর্তমান প্রতীক, আরো কত বিশেষনে ভূষিত করে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন!
তাহলে পরিশেষে অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? যে বেচারা দুর্নীতিবাজ আজ মুখোশ খুলে জাতির সামনে উন্মোচিত সে বেচারা নেহাত অভাগা?? এক দুর্নীতিবাজ নির্বাসনে শত দুর্নীতিবাজ নিজ আসনে??? দুর্নীতি প্রতিরোধে যে প্রতিষ্ঠানসমূহ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিপালিত হয়ে আসছে এদেশে তা কি নিছক অপচয়?? এম এল এস এস থেকে সচিব অব্দি সকল সরকারি কর্মচারী কে মনিটার এবং তার কাজের জবাবদিহিতার জন্য সুস্পষ্ট অথরিটি আছে। যিনি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে মিলিওনিয়ার হলেন তাকে দেখভাল করার জন্য যে অথরিটি ইনচার্জ তার দায় কি তিনি এড়াতে পারেন?
বিআরটিসি পরিবহনের ড্রাইভার বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করার দায়ে যদি ভাইকেরিয়াস লাইবেলিটিস হিসেবে বিআরটিসি অথরিটিকে আদালত সুয়মটো জরিমানা করতে পারেন তবে দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তির যিনি মনিটরিং অথরিটি তাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে না? প্রোপার মনিটরিং করতে না পারাকে অযোগ্যতা বা অদক্ষতা দেখিয়ে কোন মনিটরিং অথরিটি কেন কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে না??বিভাগীয় আভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের কাজই বা তাহলে কি? বেনজীর সাহেব কে ডিএমপি কমিশনার র্যাবের ডিজি এবং পুলিশ প্রধান হিসেবে নিয়োগের পূর্বে বারংবার কি তাহার সম্পর্কে সার্বিকভাবে ভ্যাটিং করানো হয়নি?? যে পরিমাণ সম্পদের ফিরিস্তি বেনজীর সাহেবের দেখলাম তাতে আমার কাছে মনে হয় অন্যান্য বিভাগের বা দপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবীর খোঁজ নিলে এর চেয়ে বেশি সম্পদ থাকতে পারে। গু কি তবে সবার শরীরেই মাখানো? যার গায়ে গন্ধ বের হয়েছে সেই অভাগা? গন্ধে পারফিউম মেখে গন্ধ আড়াল করে চলছে বাকি সব? এর শেষ কোথায়?
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল একটা জিনিস বা ইস্যু আলোচনায় এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে সেটার পিছনে ছুটি। ফেসবুক ইউটিউব ইনস্টাগ্রাম টুইটার পেপার পত্রিকা সর্বত্র একই আলোচনা চলতে থাকে। ইদানীং দেখছি শুধুই পুলিশ অফিসারের দুর্নীতির খতিয়ান। গল্পে শুনেছি মহিষ চুরি করতে গেলে আগে নাকি চোরেরা একজন মহিষের গলার ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে অন্যদিকে চলে যেত গ্রামের সবাই যখন চোর ধরতে এবং মহিষ উদ্ধারে ঘণ্টার শব্দের পিছু নিতো সেই ফাঁকে বাকি চোর অন্যদিকে মহিষ নিয়ে পালাতো। বিষয়টা সেরকম নয় তো?? কোন দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যদিকে হাইলাইটেড দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না তো??
দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া, দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো এসব প্রক্রিয়া যদি এত সহজ এবং নিরাপদ থাকে তবে তো দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হবেন এটাই স্বাভাবিক!! বেনর্জীর চলে গেছে, আসাদ মিয়াও তাই, আজ দেখলাম ছাগল মতিউর সেও নাকি নিরাপদে দেশ ছেড়েছে? কীসের আলামত এগুলো?? আসুন নিজে গু খাই, অন্যকে গু খেতে উৎসাহিত করি, বেশি গু জমিয়ে বিপদে পড়লে কিছু গু ছাড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ফাঁকতালে নিরাপদে দেশ ছাড়া যাবে।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মৃত্যুর সময় সর্বশেষ যে শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন আজ আমিও সেই একই উচ্চারণ করে এ লিখনির সমাপ্তি জানাচ্ছি। অভাগা দেশ!!
লেখক : একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)