Logo
Logo
×

অভিমত

আওয়ামী লীগ এবং দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের ইতিহাস

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৪:০১ পিএম

আওয়ামী লীগ এবং দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের ইতিহাস

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ৭৫ বছর পূর্ণ করলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে দলটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে দেশটি গৌরবের দাবি করে। কিন্তু, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যতবার দলটি ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশের ক্ষতি করেছে। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়েছে। 

১৯৭০ সালে হওয়া মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী ভোলা সাইক্লোনের মাত্র কয়েক দিন পরেই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ছিল। মাওলানা ভাসানী (যিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) ও অন্যান্য নেতারা দেশের সেই চরম দুর্যোগে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু, সে সময় শেখ মুজিবর রহমান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সেই সাইক্লোনের ফলে পাকিস্তানি শাসকদের উদাসীনতা দেখে দেশের মানুষের ক্ষোভ কাজে লাগাতে পারলে তিনি নির্বাচনে জিতবেন। ফলে, তিনি নির্বাচন সময়মতো করার দাবি জানান, অন্য নেতারা মেনে নেন, এবং উপমহাদেশের রাজনীতির সমীকরণ বদলে যায়। বাংলাদেশের মানুষ রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর স্বাধীনতা পায়। 

গণতন্ত্র আর নির্বাচনের কথা বলে যে আওয়ামী লীগ জনগণকে স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল, তারাই ক্ষমতায় যাবার পর নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করে। বাংলাদেশে গত তিনটা নির্বাচন হয়েছে পাতানো, সাজানো কিংবা আগে থেকেই নির্ধারিত করে রাখা। বিরোধীদের নানাভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছে এবং দেশের গণতন্ত্র শুধু না, নানা প্রতিষ্ঠানকেও ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। রাজনীতি ও সমাজের এতোটাই পচন ধরেছে যে এগুলোকে ঠিক করার স্বপ্ন দেখাও এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তবে, শুধু যে গত তিনটা নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের এই চরিত্র দেখা গেছে তাই না, বিপুল জনপ্রিয়তার পরেও আওয়ামী লীগ দেশের প্রথম নির্বাচনেই কারচুপি করে। এমনকি যে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ) ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বড় বাতিঘর, দেশ স্বাধীনের পর সেই নির্বাচনেও কারচুপি করা হয়। লুটপাট আর স্বজনপ্রীতি এবং স্বৈরশাসন এই পর্যায়ে পৌঁছে যে মাত্র তিন বছরেই তাঁদের জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছে। এ কারণে শেখ মুজিব দেশের সংবিধানই পরিবর্তন করে, বাকশাল নামক দল গঠন করে অগণতান্ত্রিক একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। কিন্তু উনার নির্মম হত্যাকাণ্ডে রাজনীতির পাশার দান উলটে যায়। আওয়ামী লীগ বেশ কয়েক বছরের জন্য ব্রাত্য হয়ে পড়ে। 

এরপর দলটা তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও সমর্থন কাজে লাগিয়ে ফিরে আসে। তবে শেখ হাসিনা প্রছন্নভাবে স্বৈরাচারী এরশাদকে সমর্থন দিতে থাকেন। নির্বাচনে যারা যাবে তাঁরা জাতীয় বেইমান এই কথা বলেও এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেন (এই চরিত্র আবার দেখা যাবে এক এগারোর সরকারের সাথে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বোঝাপড়ায়)। পরে অবশ্য বিএনপির আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে রাজপথে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু, জনতা সুষ্ঠু, অবাধ, নির্বাচনে উনার বদলে খালেদা জিয়াকেই বেছে নেন। 

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের বক্তব্য ছিল সদ্য স্বাধীন দেশে বিরোধিতা না করে একজোট হয়ে কাজ করার। অবশ্য মুখে তা বললেও, বিরোধী দমন আর সীমাহীন দুর্নীতিই ছিল মূল উদ্দেশ্য। আবার, দেশের গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের পর তাঁরাই দেশকে অস্থিতিশীল করে তুললো। তাঁদের প্রবল আন্দোলনে দেশ প্রায় অচল হওয়ার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা ফিরে আসে। খালেদা জিয়া ও বিএনপি সংবিধান মেনে ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় এলেও, গণতন্ত্র রক্ষার্থে দ্রুতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সুষ্ঠু ভোট হলে সাধারণত ক্ষমতাসীনরা খারাপ করে। বিএনপিও পরাজিত হয়। 

তবে, এর আঠারো বছর পর আমরা কিন্তু ঠিক উলটো ব্যাপার দেখি। সেবার বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবিতে আন্দোলন করে এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দেয় ১৯৯৬ সালের মতো তাঁরা কেবল সংবিধান রক্ষার্থে একটি নির্বাচন করবে এবং সেবারের মতো দ্রুত ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ছেড়ে দেবে। 

কিন্তু, আওয়ামী লীগ জনতার সঙ্গে গাদ্দারী করে। একবার ক্ষমতায় চলে আসার পর তাঁরা আর সেই ক্ষমতা ছাড়ে না। পুরো পাঁচবছর কাটিয়ে দেয়। আবার যখন নির্বাচনের সময় আসে তখনও তাঁরা তত্ত্বাবধায়কে সরকারে দাবি নাকচ করে দেয়।

এইবার আওয়ামী লীগ গাদ্দারীর নতুন এক তরিকা বের করে। রাতের ভোট। সমগ্র দেশ অবাক হয়ে দেখলো, গণতন্ত্রের বড়াই করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা দলটি কি অভূতপূর্ব কায়দায় গোটা জাতিকে প্রতারিত করলো। ধ্বংস করলো নির্বাচন ব্যবস্থা। 

এর পরের পাঁচ বছর সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী দমন-পীড়ন আর গণতন্ত্রহীনতার। পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, আইন সমস্ত কিছুকে নিজেদের হাতের পুতুল বানিয়ে চললো অসীম অরাজকতা আর দমন। এতো কিছুর পরেও বিএনপি আবারো গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে সাহসী হয়ে মাঠে ফিরলো। দেশের জনতা উদ্বেলিত হলো। কিন্তু, আবারও নানা কৌশলে বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন হলো। 

আর গাদ্দারীর নতুন ইতিহাস লিখে এবার একদম সরাসরি প্রতিবেশী ভারতের বশ্যতা মেনে নিজেদের ক্ষমতা নিশ্চিত করলো দলটি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি নানা হস্তক্ষেপ কম বেশি থাকেই, কিন্তু ব্যাপারটা একদম প্রকাশ্যে এবং উদ্দামভাবে করা মানে সার্বভৌমত্বকেই অস্বীকার করা। যেই দেশ স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বলে গৌরব করে তারাই দেশের সার্বভৌমত্ব ধুলায় মিশিয়ে দিলো। 

আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, নানা কীর্তির পরেও দলটির প্রতি অনেক মানুষের সমর্থন আছে সন্দেহ নাই। কিন্তু, এই দলটা ক্ষমতার মোহে বরাবরই দেশকে, দেশের মানুষকে ধ্বংস করেছে। গাদ্দারীর প্রতিশব্দ হয়ে গিয়েছে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন