লীগ নেতাদের লোভের থাবা থেকে রক্ষা নেই অসহায় হরিজনদেরও
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
যুগের পর যুগ জাতপাতের সবচেয়ে নির্মম অবিচারের শিকার হওয়া হরিজনরা পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না আওয়ামী কাউন্সিলরের লোভের কাছে। রাজধানীর বংশালে মিরনজিল্লা পল্লিতে ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকা হরিজনদের উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আউয়াল হোসেন। এই অসহায় মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করে সেখানে বানানো হবে মার্কেট। তা থেকে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে আউয়াল ও তার সহযোগীরা। গোটা দেশে চলমান লুটপাটের মতো এখানেও সঙ্গে আছে প্রশাসন। সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের সহায়তায় হরিজনদের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অসহায় হরিজনদের কেউ আত্মহত্যা করেছেন, কেউ মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
কাউন্সিলর আউয়ালের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্যসহ এন্তার অভিযোগ আছে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। আউয়াল ও তার অস্ত্রবাজ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেক মামলা রয়েছে। এতকিছুর পরেও আওয়ামী লীগের উচ্চমহলের নেতাদের আশীর্বাদে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। সম্প্রতি হরিজনপল্লী উচ্ছেদের পিছনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের সমর্থন আছে বলেও অভিযোগ আছে।
হরিজনরা জাতপাতের ভয়াবহ শিকার। যুগের পর যুগ ধরে তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছে। মূলত তেলেগু ভাষার এসব মানুষদের এই দেশে আনা হয়েছিল শহরের পয়নিঃস্কাশন ব্যবস্থা সামলানোর জন্য। ঢাকা শহর যখন আকারে বাড়ছিল সেই শহরের বর্জ্য পরিষ্কার করে এই মানুষগুলো শহরটাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল।
তবে যুগের পর যুগ এই মানুষগুলো অচ্ছুত জীবনই কাটিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে জাতপাতের বালাই না থাকলেও, এদেশের মুসলমানরাও তাদের মূলধারায় মিশতে দেননি। তাদের অচ্ছুত হিসেবেই দেখেছে। ফলত, যুগের পর যুগ ময়লার সঙ্গে এক অসহনীয় জীবনই শুধু না, সে থেকে উদ্ধারেরও তেমন সুযোগ পাননি তারা। এদের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি এবং তাদের পূর্বপুরুষ, যারা শহরটাকে রক্ষা করেছিলেন, তাদের দেওয়া ভিটা।
কিন্তু, সেখান থেকেও তাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। কেবলমাত্র গুটিকয়েকজনকে সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী চাকরি দেওয়া হয়েছে, আর বাকিদের সেখানে থাকার কোনো অধিকার নেই বলে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে। শিক্ষাদীক্ষার তেমন সুযোগ না পাওয়া, অসহায় এই মানুষগুলোর কি গতি হবে তা নিয়ে তাদের কোনো দায়ই নেই।
একটা দেশ কতটা মানবিক তা বোঝা যায় সে দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষদের অবস্থা দেখে। হরিজনদের উচ্ছেদ বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার শেষ মানবিকতাটুকু হারিয়ে ফেলছে।