Logo
Logo
×

অভিমত

বাবরি মসজিদ, আদভানি ও শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ০৫:১৫ এএম

বাবরি মসজিদ, আদভানি ও শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা

ভারতে এলকে আদভানির সঙ্গে দেখা করে হাসিমুখে ছবি তুললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে এই আদভানি? 

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেদিন একদল লোক পুলিশি বাঁধা আর আদালতের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কয়েক শতাব্দী পুরোনো বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়। এর প্রভাবে শুধু ভারত না, গোটা উপমহাদেশে পরবর্তী দশকগুলোতে অশান্তি, দাঙা আর ঘৃণার বীজ পুঁতে দেওয়া হয়।

ভারত হয়ে উঠে উগ্র হিন্দুত্ববাদের দেশ। বাংলাদেশে রায়ট হয়, পাকিস্তানেও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বাড়ে। পুরো উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে হিংসা ছড়িয়ে রাজনীতি হয়ে উঠে লোকরনঞ্জনবাদের নোংরা খেলায়। আর এই পুরো খেলায় যদি একটা নাম নিতে হয়, যার ইন্ধনে গোটা উপমহাদেশের রাজনীতি পরিবর্তন হয়ে গেলো, তিনি হচ্ছেন এলকে আদভানি। 

নরেন্দ্র মোদির গুরু ও রক্ষাকারী ছিলেন এই আদভানি। গুজরাটের কসাই মোদিকে তিনি আগলে রাখতেন, একসময়ে হন ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী। বাবরি মসজিদ ভাঙার কিছুক্ষণ আগে এই নেতা মসজিদ থেকে মাত্র দুই-আড়াইশোগজ দূরে স্থাপিত রাম কথা কুঞ্জ মঞ্চে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। এই ভাষণের পর উত্তেজিত হয়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন কর সেবকরা চড়াও হয়ে মসজিদটি ভেঙে ফেলে, গুড়িয়ে দেয় উপমহাদেশের মানুষের মৈত্রী। 

আদভানির এই ধ্বংসের পরিকল্পনা একদিনে হয়নি। তিনি ১৯৮৪ সালে রামজন্মভূমি আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে বিজেপির সভাপতি হন। এরপর ১৯৮৯ সালে বিজেপি ঘোষণা দেয় যে, বাবরি মসজিদ ভেঙে তারা রাম মন্দির নির্মাণ করবে। 

শুধু ঘোষণাই না, এই কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেন আদভানি। তিনি ১৯৯০ সালে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা রথযাত্রা শুরু করেন। এই যাত্রা ছিল ধ্বংস আর বিদ্বেষের। আদভানিকে ত্রিশূল, কুড়াল আর তীরধনুক হাতে যুদ্ধংদেহি ভঙ্গিতে দেখা যায় এই যাত্রার সময়। নেতার এই ভঙ্গি লাখো লাখো জঙ্গি সমর্থককে উত্তেজিত করে। কেবল একটি মসজিদ নয়, বিজেপির এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ভারত থেকে মুসলমানদের নাম ও নিশানা মুছে দেওয়া। আজও আদভানির দল আরো ক্ষমতাসীন হয়ে সেই চেষ্টা লাগাচ্ছে। 

আদভানির বয়স এখন ৯৬ পেরিয়েছে। বহুদিন ধরে রাজনীতির বাইরে। মোদি তাঁকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন নিজের ইমেজে যাতে কোনো ছায়া না পড়ে তা নিশ্চিত করতে। অথচ এই মুসলিম বিদ্বেষী দানবের চরণে অর্ঘ্য দিয়ে আসলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি বাংলাদেশে মদিনা সনদের ভিত্তিতে দেশ চালানোর ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। 

গত জানুয়ারিতে ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে আরও একটা তামাশার নির্বাচন করে হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখেন। এই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৃতজ্ঞতা হিসেবেই সম্ভবত তিনি হিন্দুত্ববাদের দানব আদভানিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসলেন। 

এই ছবিটা উপমহাদেশের সমস্ত মুসলমান শুধু নয়, প্রতিটি বিবেকবান মানুষের জন্য চরম ঘৃণার এক প্রতীক হয়ে থাকবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন