Logo
Logo
×

অভিমত

গণতন্ত্রহীনতা তরুণদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ১২:৪১ এএম

গণতন্ত্রহীনতা তরুণদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে

বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছেন। গত বছর ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন নামে এক প্রতিষ্ঠানের জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। 

আঁচল ফাউন্ডেশনের একই সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা ভবিষ্যৎ পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

কিছুদিন আগে গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসে দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ভয়াবহ, সরকারি হিসেবেই হাজারে ৭৯৯ জন। যত বেশি শিক্ষিত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ততো কম। 

শিক্ষিত যুবক ও তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়া প্রচণ্ড আশঙ্কার। মোটা দাগে এর কারণগুলো কি? উচ্চশিক্ষিতদের দিয়েই শুরু করা যাক। 

প্রথমত, এই দেশে এখন বড় বড় পদে ভারতীয়দের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। দেশের যারা সবচেয়ে মেধাবী তাঁদের বড় একটা অংশ দেশ ছাড়ছেন উচ্চশিক্ষা ও উন্নত জীবনের আশায়। অনেকে ফিরতে চাইলেও ফিরতে পারছেন না, কারণ তাঁদের কাজ করার পরিবেশ এদেশে নেই। উপযুক্ত সম্মানও নেই। আর দেশেও যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বসে আছেন, তাঁরা দেখছেন তাঁদের উপযুক্ত পদে বসানো হচ্ছে না। 

শিক্ষা নিয়ে এই সরকারের বিপুল পরীক্ষা নিরীক্ষা শিক্ষার মানকে ধসিয়ে দিয়েছে। ফলত, অতিমেধাবী, যারা, এই ব্যবস্থায় থেকেও অনেক দূরে যেতে চাইছেন তাঁদের পক্ষে এদেশে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ ধারণা করেন, অতি মেধাবীরা নানারকম অন্যায় অসংগতির কথা বলে ফেলবেন, প্রতিবাদ করবেন, ফলে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁদের চুপ করিয়ে রাখা বা দেশ থেকে দূরে রাখাই ভালো। 

এদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সরকারি দলের গুন্ডা আর প্রশাসনের খাই মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। ব্যবসাপাতির সার্বিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বেসরকারি খাতে চাকরি-বাকরি অবস্থা খারাপ। আর সরকারি খাতে যে যৎসামান্য চাকরি আছে সেগুলো এই সেই কোটা ও নানারকম দলবাজি দিয়ে পরিপূর্ণ। পড়াশোনা শেষ করে তরুণরা কি করবে তা নিয়ে তাঁরা অনিশ্চিত। 

গ্রামেগঞ্জের অবস্থাও ভয়াবহ। সেখানে অর্থনীতি স্থবির। কৃষিকাজ এখন লোকসানি কাজ। গ্রামের অল্পশিক্ষিত তরুণদের একমাত্র আশা কোনোভাবে জমিজমা বিক্রি করে দেশের বাইরে যাওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অমানুষিক পরিশ্রম করে তাঁরা কোনোভাবে নিজেদের ও পরিবারদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। তবে, এই সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং সরকারের লোকদের অসীম দুর্নীতি বিদেশের শ্রমবাজারও অনিশ্চিত করে তুলছে। মালয়েশিয়ার মতো বড় বাজার সম্প্রতি আবার বন্ধ হয়েছে। দালালদের খপ্পর পড়ে সর্বস্বান্ত বহু যুবক। 

দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তরুণ সমাজ নিয়ে সরকারের তেমন কোনো হোলদোল নাই, কারন এই সরকারের ভোট লাগে না। জনগণ বা দেশের ভবিষ্যতকে তাঁরা তোয়াক্কা করে না। যেনতেন প্রকারে এদের থেকে লুটে নেয়াটাই একমাত্র লক্ষ্য। একটা বিশাল জনগোষ্ঠী বেদিশা, হতাশ। গণতন্ত্রহীনতা এই দেশের তরুণদের, এই দেশের ভবিষ্যতকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন