Logo
Logo
×

অভিমত

গোঁজামিল, জালিয়াতিপূর্ণ সংখ্যায় ভরা বাজেট

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ০৪:৪৮ এএম

গোঁজামিল, জালিয়াতিপূর্ণ সংখ্যায় ভরা বাজেট

নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। মন্ত্রী ভদ্রলোক অর্থনীতি পড়েছেন, পড়িয়েছেন; সেই অর্থে অর্থনীতিবিদ মনে করা হলেও তিনি নন প্র্যাক্টিসিং অর্থনীতিবিদ। জাতীয় সংসদে দেওয়া তারা বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম দিয়েছেন- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’।

কিন্তু অসত্য তথ্য, ভুল আর জালিয়াতি দিয়ে কি এগানো যায়? অর্থমন্ত্রী বাজেটে যেসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন, বলতে গেলে তার সবই ভুল, মিথ্যা ও জালিয়াতিপূর্ণ!

১. রাজস্ব আয় দুই ভাগে ভাগ করলে দেখবেন এনবিআরের রাজস্ব আয় হতে পারে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। আর এনবিআর বহির্ভুত আয় অনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকা। দুটি মেলালে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় ৪ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ধরেছেন ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা! এর ওপর ভর করেই তিনি বাজেট দিয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। 

. প্রকৃত ঘাটতি হবে ৫১ শতাংশ। দেখিয়েছেন ৩২ শতাংশ। এমন নিকৃষ্ট বাজেট আপনি দুনিয়ার কোথাও দেখবেন না। 

৩. সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সূচক বিবেচনায় নিলে স্পষ্ট ধারণা করা যায়, প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের কম বা আশেপাশে থাকবে। কিন্তু মন্ত্রী দেখিয়েছেন ৬.৭৫ শতাংশ।  

৪. সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি এখন ৯.৮%, (কিছু হিসাবে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি)। কোন কৌশল ছাড়া, সব কিছুর দাম বাড়ানোর পরে, ভ্যাট বাড়ানোর পরে, আমদানি কমানোর পরে, আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরে - তারা শুধু সুদের হার (নীতি সুদ ও লেন্ডিং রেট) বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছেন! 

৫. বাজেটে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এক দশকে দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। নতুন ঋণ নিয়ে পুরোনো সুদের দায় মেটাচ্ছে, এমতাবস্থায়-

ক) পরিচালনা ব্যয় সংকোচন করা হয়নি, বরং ৪ লাখ কোটির রাজস্বের বিপরীতে পরিচালনা ব্যয় ৫.২ লাখ কোটি টাকা। এর অর্থ শুধু পরিচালনা ব্যয় মেটাতে রাজস্বের বাইরে ১.২ লাখ কোটি ঋণ করতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটির পুরোটাই ঋণ করতে হবে (দেশি ব্যাংক ঋণ, বিদেশী ঋণ, সঞ্চয় পত্র ঋণ এবং টাকা ছাপানো)।    

খ) সুদের দেনা বাড়ার মুখেও ব্যয় না কমানোয় অন্তত ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি নতুন ঋণ করতে হবে বলে মন্ত্রী দেখিয়েছেন।  এর মধ্যে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশি ঋণ। কিন্তু বাস্তবে বিদেশী ঋণ সোয়া লাখ কোটি পাওয়া কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে হয় বাজেট ছোট করতে হবে,না হলে আরও বেশি পরিমাণে অভ্যন্তরীণ ঋণ করতে হবে। আর দেশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ করলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে; দিন শেষে টাকা ছাপাবে এবং মূল্যষ্ফীতি বাড়বে। 

৬. এমন বাজেট দিয়েছেন মন্ত্রী যে বাজেটে সামরিক ব্যয় স্বাস্থ্য বরাদ্দের থেকে বেশি। 

৭. এমন বাজেট দিয়েছেন যে বাজেটে সামরিক ব্যয়, কৃষি-মৎস-সার ভর্তুকির মিলিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি।

৮. বাজেটের মোট সুদের দায় (২২%),  ভর্তুকি-প্রণোদনা (২০%) এবং  প্রশাসনের বেতন-ভাতাকে (১৫.৮%) ছাড়িয়ে গেছে। বাজেটের মোট সুদের দায় এমনকি শিক্ষা বাজেট থেকেও বেশি। অর্থাৎ সুদ এককভাবে বাজেটের সর্বোচ্চ খাত হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, তথাপি নতুন সুদের টার্গেট থেকে সরকার সরেনি, বাজেট ঘাটতি কমায়নি। 

এক কথায় নিকৃষ্ট বাজেট। অবৈধ সরকারের মিথ্যা সংখ্যার গলাভরা বাজেট। এমন বাজেট যেখানে মূল্যস্ফীতি ফেরানোর কোন সমাধান নেই, ম্যাক্রো ইকোনোমিক স্ট্যাবিলিটি ফেরানোর কোনো পথ নেই।

এবার দরকার ছিল সহনীয় ঘাটতির ছোট বাজেট। সরকার ও প্রশাসন পরিচালনা ব্যয় কমানো হয়নি বলে, ৫০-৫১% ঘাটতি বাজেটকে নতুন ঋণের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। এতে সুদের চাপ আরো ভয়াবহ পর্যায়ে যাবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে মোট রিজার্ভ ছিল ৫৬.১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে তা ২১.৭ শতাংশে নেমেছে। নতুন বাজেটে আবারও উচ্চ হারে বৈদেশিক ঋণের টার্গেটের কারণে মোট বিদেশী ঋণ  রিজার্ভের বিপরীতে ২০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে।    

 ৯. এছাড়াও, বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার বরাদ্দ কম: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ পর্যাপ্ত নয়। বাজেটে পরিবেশ রক্ষার জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

১০. দীর্ঘ ২২ মাস ধরে ২ অঙ্কের মূল্যস্ফীতির কারণে যখন টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, তখন করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোতে বিশাল একটা জনগোষ্ঠী করজালে পড়ে গেছে। এভাবে ধনীর কর না বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে করের জালে নিয়ে আসা হলো। ব্যাংকে রাখা টাকার ক্ষেত্রেও একই অপকৌশল করে আবগারি শুল্ক আয়ের ফাঁক খুঁজেছে সরকার। 

এমপি মন্ত্রী হতে জনতার ভোট যেহেতু লাগে না, এরকম জবাবদিহিহীন নির্লজ্জ বাজেটের পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে। ঋণের বোঝা জনতার, আর ক্রিম চাটবে সরকার।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন