Logo
Logo
×

অভিমত

মহিলা সমাজ ও আমাদের রাজনীতি

Icon

জিয়াউর রহমান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০২:১৬ এএম

মহিলা সমাজ ও আমাদের রাজনীতি

জিয়াউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আজকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুব মহিলা অংগ দলের নেতৃবর্গ মানে বাংলাদেশের মহিলা সমাজকে তোমরা রাজনীতিতে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে চলেছ। তাহলে ভাব ব্যাপারটা কত কঠিন এবং কত জটিল। অনেকে অনেক পার্টি করে থাকে, আবার আমাদের সাথে অনেকে আছে, তারা অনেকে না বুঝে পার্টি করে। চল ঐ পার্টিতে গেলাম। কারণ ঐ পার্টিটা ভালো লাগে। আবার অনেকে বলে ঐ পার্টিতে যাবো না, বের হয়ে আসে, কেন? ভালো লাগে না। এইটা দিয়ে এখন আমাদের কাজ চলবে না। 

আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়েছে, এটা কিন্তু অন্যান্য আশেপাশে যে সব দেশ আছে তাদের মত নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, স্বাধীনতার যুদ্ধ করে। আমাদের উপমহাদেশে অন্য যেগুলি দেশ আছে, এগুলি কিন্তু যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পায় নাই। তাহলে আমাদের যে চিন্তাধারা হতে হবে, সেই চিন্তাধারা তাদের চেয়ে আলাদা হতে হবে। এবং এটা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশ যতদিন পরাধীন ছিল অন্য কোন আশেপাশের দেশ এতদিন পরাধীন ছিল না। এতদিন পরাধীন থাকার ফলে আমাদেরকে যে লুটপাট করেছে বিদেশীরা সে বিদেশীরা কারা? কেবলমাত্র বৃটিশরা নয়, এই উপ-মহাদেশের পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের লোকেরা আমাদেরকে লুটপাট করেছে। এই বাংলাদেশের মাটির মানুষের সম্পদ দিয়ে হয়েছে কলকাতা। বাংলাদেশের মাটির মানুষের সম্পদ দিয়ে হয়েছে দিল্লী। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে হয়েছে করাচী, ইসলামাবাদ। বাংলাদেশের মানুষের ধনসম্পদ দিয়ে হয়েছে লন্ডন শহর এবং অন্যান্য দেশের উন্নতি সাধন হয়েছে তার কারণ কি? তার কারণ হলো আমরা আমাদের দেশের মানুষকে ঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি নাই। আজ এগুলি মূল্যায়ন করতে হবে। অতীতে কারা আমাদের শত্রু ছিল, কারা আমাদেরকে লুটপাট করেছে এগুলি জানতে হবে। এই যে ইতিহাস আছে এই ইতিহাসকে তার যোগ্য স্থানে রাখতে হবে। আজকে তোমরা কলেজে পড়ছ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ। আজকে তোমরা যা শিখবে সেই শিক্ষার পরে যদি দেশের মানুষকে নেতৃত্ব না দিতে পারো তাহলে এই শিক্ষাটার কোন মূল্য থাকবে না। এবং তোমরা যা শিখলে সেটাকে গঠনমূলকভাবে অন্যদের কাছে যদি না দিতে পারো, তাদেরকে শিখাতে না পারো তোমরা যেটা শিখলে সেটা কোন লাভজনক ব্যাপার হলো না। আমি যেটা জানি আমি যদি তোমাদেরকে না শিখাই, তোমরা যেটা জান, সেটা যদি অন্যদেরকে না শিখাও তাহলে সেই শিক্ষার কোন দাম হলো না। তাই আজ বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশের ভূগোল যদি তোমরা লক্ষ্য কর তাহলে বুঝতে পারবে বাংলাদেশ কেন এতদিন পরাধীন ছিল। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মাঝখানে, উত্তরে হিমালয় পর্বত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং একটা চাপা জায়গা; সেই চাপা জায়গার পূর্বদিকে বিস্তৃত এলাকায় বার্মা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিমে ভারত, পাকিস্তান, উত্তর দিকে বন্ধ, দক্ষিণ দিকে বন্ধ অর্থাৎ বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি সেতু ।

এখন তাহলে মনে কর বৃটিশরা কেন, বাংলাদেশের এই এলাকা প্রথমে কব্জা করল। কারণ তারা দেখল এই এলাকাটা কব্জা করলে এখান থেকে পূর্বদিকে পশ্চিম দিকে যেতে সুবিধা হবে। তাই বাংলাদেশকে প্রায় দু’শত বছর ঊর্ধ্বে তারা দখল করে রাখল। যখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কোন সংগঠন ছিল না। এই ইংরেজরা আসল এবং এখান থেকে তারা পূর্বদিকে পশ্চিম দিকে ধীরে ধীরে অন্য সব এলাকাগুলি জয় করে ফেলল। আমাদের দেশের যে ভৌগোলিক অবস্থা রয়েছে এবং অতীতের যে ইতিহাস রয়েছে সেটা পর্যালোচনা করলে বুঝা যাবে আমাদের বিপদ কী? এবং সব সময় সে বিপদ থাকার কারণ বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দুনিয়ার মধ্যে দখল করে আছে। দুইটি বিরাট অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। তাই বাংলাদেশের উপর ভবিষ্যৎ এ হুমকি আসতে পারে যদি আমরা দুর্বল থাকি। যদি আমরা নিষ্ক্রিয় থাকি, যদি আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সক্ষম না হই তবে আসবে। তাহলে আমাদের বিপদ কী? কেন আজ আমরা আমাদের জাতির তাবাদ্দ অর্থাৎ আমাদের দেশীয় সত্তা। আমাদের দেশীয় সত্তাকে। কেন আমরা শক্তিশালী করতে যাচ্ছি, কারণ অতীতে আমরা দেখছি যে বিদেশীরা ভান করে, ব্যবসায়ী সেজে কেউ আমাদের বন্ধু সেজে, কেউ বিদেশী নীতিবাদ এনে। রাজনীতি এনে তারপর বাংলাদেশকে করেছে কব্জা। আমরা সেই অতীতের শিকারে আর পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। স্বাধীনতা রক্ষার্থে আবার দরকার পড়লে আমরা যুদ্ধ করব। আমরা সব কিছু করব। কিন্তু আমা‌দের হুমকিগুলি কী সেগুলি বুঝতে হবে, রাজনীতি তো কোন একটা দলে খালি এই স্বাধীনতা যেতে দিব না। তাই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যোগদান করা নয়। এটার একটা লক্ষ্য আছে, উদ্দেশ্য আছে। দেশকে বাঁচাতে হবে ।

আমরা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সব সময় কায়েম রাখব, সমুন্নত রাখব। আমরা দুর্বল থাকব না, আমরা সবদিক দিয়ে শক্তিশালী হবো। আমরা কারো উপরে অন্যায় করতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আমাদের উপরে অন্যায় করতে আসে তবে আমরা রুখে দাঁড়াবো, আমরা যুদ্ধ করব আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্যে। আমাদের প্রতি হুমকি হলো আমাদের বিপদ হলো সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। যেহেতু বাংলাদেশ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আসছে এই অঞ্চলে সেই জন্যে যে বাংলাদেশের উপরে কব্জা করে ফেলতে পারবে সে বহুদিকেই আধিপত্যবাদ বিস্তার করতে পারবে। সেই জন্যে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। আজকে তোমরা লক্ষ্য করেছ যেসব বড় দেশগুলি রয়েছে বিভিন্ন হলে বলে তারা দুর্বল এবং ছোট দেশগুলির উপর তাদের আধিপত্যবাদ বিস্তার করবার চেষ্টার করছে। সে রাশিয়া হউক, সে অন্য কোন দেশ হউক। কেউ সমাজতন্ত্রের নামে ছোট দেশগুলিকে খেয়ে বসে আছে। অথবা তাদের উপর তাদের আধিপত্যবাদ, তাদের উপনিবেশবাদ বিস্তার করে বসে আছে। অন্যদিকে বিভিন্নভাবে বড় বড় দেশগুলি ছোট দেশগুলির উপর আধিপত্যবাদ বিস্তার করবার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে কেননা দু'শত বছর আমরা বিদেশীদের শিকারে পরিণত হয়েছিলাম আর আমরা হতে চাই না। তাই আমাদের দেশের সকলকে গড়ে তুলতে হবে সেই বাংলাদেশী ইম্পেরিয়ালিজম অর্থাৎ সিদাসিদি এসে সৈন্য সামন্ত পাঠিয়ে দিয়ে দেশটাকে কব্জা করে ফেলে তাদের আয়ত্তে আনা। যেভাবে আমরা ইংরেজদের সময় ছিলাম। তার জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই। কারণ আমরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদকে ভুলে গিয়েছিলাম এবং ব্যক্তিগত এবং ছোট দলীয় স্বার্থে আমরা বিকিয়ে দিয়েছিলাম দেশের মানুষকে, দেশটাকে ।

সম্প্রসারণবাদ

সম্প্রসারণবাদের অর্থ হলো হয়তো বা সৈন্য সামন্ত পাঠিয়ে কব্জা না করে, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে একটা দেশের উপর তার আধিপত্যবাদ বিস্তার করাকে সম্প্রসারণবাদ বলে। এরকম উদাহরণ দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। আপনারা জানেন, কোথাও সমাজতন্ত্র-এর নামে সেই কাজ করা হয়েছে ।

নয়া উপনিবেশবাদ

আজকে উপনিবেশবাদ বিভিন্নভাবে রূপ নিয়েছে। অন্যদেশের সৈন্য সামন্ত পাঠিয়ে দিয়ে কিংবা একটা ছোট দেশকে চাপের মধ্যে ফেলে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করে তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করা ।

সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ

আজকে ছোট ছোট দেশে বড় দেশগুলি প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না, অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদ বিস্তার করতে পারছে না। তারা সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করবার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে এ কাজ চলছে কিন্তু আজ বাংলাদেশের মানুষ সচেতন হয়েছে তারা পারবে না। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আমরা আমাদের দেশীয় ও জাতীয়ভাবে গড়ে তোলবার চেষ্টা করছি। তাই আমাদের পার্টিতে সাংস্কৃতিক অংগ দল রয়েছে। আমরা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্য দিচ্ছি ।

এখন এই যে আপদ বিপদগুলি রয়েছে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে। এই শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে আমাদের কি করতে হবে? আমাদের জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, সেই জাতীয়তাবাদকে ভর করে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদটা কি? এটা কি কোন একটা বিশেষ ফ্যাক্টরকে অবলম্বন করে কিভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর মধ্যে কি রয়েছে। যেমন পানের মধ্যে চুন থাকে, সুপাড়ি থাকে তেমন আমাদের জাতীয়তাবাদের মধ্যে কি কি ফ্যাক্টর রয়েছে, কি এলিমেন্টস রয়েছে। জাতীয়তাবাদ, একটা রেসকে কেন্দ্র করে হতে পারে, একটা গোষ্ঠীকে কেন্দ্ৰ করে হতে পারে। জার্মান জাতীয়তাবাদের কথা শুনেছেন, তারা এশিয়ান রেসকে কেন্দ্র করে। তারা বলল যে, আমরা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চমানের জাতি এরিয়ান আমরা। সেইটাকে কেন্দ্র করে তারা জার্মান ন্যাশনালিজমের প্রভাব সৃষ্টি করল। কিন্তু তার পেছনেও তাদের বিদেশী সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদের বিপদ ছিল। তাঁরা তাদের রেসকে রেসিয়াস জাতীয়তাবাদের প্রভাব সৃষ্টি করল। তেমনিভাবে আরব জাতীয়তাবাদ সেটাও আরব রেসকে কেন্দ্র করে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ— আজকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের কথা তোমরা শুনেছ, জাতীতাবাদ ভাষাকে কেন্দ্র করে । 

ধর্মকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদ

মুসলিম লীগ, আইডিএল, জামায়াত তারা পার্টি বলে বাঙালী ধর্মকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদের চেতনা আনবার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মের কোরআন শরীফে লেখা রয়েছে— “লা ইয়াস্তরুনাবে আইয়াতে আল্লাহ তামানান কালীলান” এর অর্থ হলো যে, যত মূল্যেই হউক না কেন আল্লাহর নামকে বিক্রি করো না। কিন্তু তাঁরা ধর্মকে বিক্রি করছে। কিন্তু এখন দুইটি জিনিস চিন্তা করো ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে গেল, তখন যদিও পশ্চিম বাংলার লোকেরা বাংলা বলত আমরা বাংলা বলতাম এখনও বলছি। কিন্তু আমরা এক হয়ে থাকতে পারি নাই। তাই সেই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সেটা ইতিমধ্যেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। এবং ইতিহাসে ফিরে যাওয়া যায় না। তাই আজকে বাকশালী, কমিউনিস্ট পার্টি যে বাঙালী জাতীয়তাবাদের কথা বলছে সেটা হতে পারে না। আমরা পুরানো দিনে ফিরে যেতে পারি না। আবার লক্ষ্য কর তারা বলেছিল যে “সেটা বেঙ্গল হবে” বাংলাদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, বিহার আর বাংলাদেশকে নিয়ে। কিন্তু তাতো হলো না। আসামে কেমন মার পড়তেছে। সেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ধ্বংস। সেখানে আমরা ফিরে যেতে পারি না ।

আবার ১৯৪৭ সালে ধর্মকে ভিত্তি করে মূলত পাকিস্তান হলো। কিন্তু তাদের সেই নয়া কিসিমের উপনিবেশবাদ চলতে থাকলো এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান টিকে থাকতে পারল না। তাই আমরা আবার পুরানো দিনে ফিরে যেতে পারি না। তাই এই যে জামায়াত, মুসলিম লীগ, আইডিএল এরা যে ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করবার চেষ্টা করছে সেটা বাস্তবায়িত হতে পারে না। বাকশালীদের, কমিউনিস্টদের ইতিহাস এবং আইডিএল, জামায়াতের ইতিহাস শেষ হয়ে গেছে। তাদের অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। সেখানে আমরা ফিরে যেতে পারব না ।

একটা ভৌগোলিক অঞ্চলকে যেমন বাংলাদেশের এলাকাকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদ। আমাদের জাতীয়তাবাদের মধ্যে ভৌগোলিক অঞ্চলের ফ্যাক্টর রয়েছে ।

অর্থনীতি ভিত্তিক

অর্থনীতি ভিত্তিক অর্থাৎ উদাহরণ দেওয়া যায় যে ইইসি যেটা রয়েছে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি তারা তাদের মতের অনুযায়ী এমন কি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট পর্যন্ত স্থাপন করেছে, তারা অর্থনৈতিকভাবে একটা জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করবার চেষ্টায় সফলতা অর্জন করেছে।

সংস্কৃতি ভিত্তিক

সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদ সেই ফ্যাক্টরটি আমাদের মধ্যে রয়েছে। সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদ এবং সর্বোপরি যে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয় যুদ্ধের মাধ্যমে, চরম সংগ্রামের মাধ্যমে সেইটাকে বিনষ্ট কেহই করতে পারে না। আমাদের জাতীয়তাবাদ অনেক দিনের পুরানা এবং সেটা একটা পূর্ণরূপ নিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে। আমেরিকায় সেই একই ভাবে প্রায় দেড়শ/দুইশ বছর আগে তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল এবং সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতি থেকে যে লোকজন গিয়েছিল সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমেরিকান জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হলো এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলল ।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে রয়েছে রেস, ভাষা, ধর্ম, অঞ্চল, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। সেই জন্য আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে বলি সার্বিক জাতীয়তাবাদ। এই সবগুলিকে নিয়ে হলো সার্বিক জাতীয়তাবাদ। এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সৃষ্টি, যদি কোন একটা ফ্যাক্টরে আমাদের স্বল্পতা থেকে থাকে কি দুর্বলতা থাকে যেহেতু আরো ৬/৭টি ফ্যাক্টর রয়েছে সেগুলির শক্তি সেই দুর্বলতাকে ঢেকে ফেলবে। তাই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হলো সার্বিক জাতীয়তাবাদ ।

জাতীয়তাবাদের চরম লক্ষ্য

প্রত্যেকের একটা চরম লক্ষ্য থাকে। তাই আমাদের জাতীয়তাবাদী দলের একটা চরম লক্ষ্য থাকতে হবে। সেই চরম লক্ষ্যকে ব্যাখ্যা করতে হবে সুষ্ঠুভাবে যাতে সকলে সেই চরম লক্ষ্যকে বুঝতে পারে। এবং চরম লক্ষ্য প্রয়োজন অনুসারে সেটাকে অল্প বিস্তর রদবদল করে করতে হবে সময়োপযোগী। আমাদের ধর্মেও আছে যে, প্রয়োজন অনুসারে সময় বিশেষ-এ রদবদল করে নিবে। যে মানুষ যে জাতি সময় বিশেষ-এ রদবদল করে নিতে পারে না তারা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আমাদের চরম লক্ষ্য থাকতে হবে। আমাদের চরম লক্ষ্য হলো

দ্বিতীয়তঃ হলো একটা স্বপ্ন সেই স্বপ্ন হলো শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। যে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হবে একটি সুষম বণ্টন ব্যবস্থা। সেই শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে এক নম্বর ৫টি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা মিটাতে হবে মানুষের। একটি খাদ্য পেটভরে খেতে হবে। পেটভরে না খেলে কিছু করা যাবে না। আমাদের বাস্তব ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

তৃতীয়তঃ শিক্ষা, শিক্ষাটা প্রয়োজনীয়। চার নম্বর— বাসস্থান, পাচ নম্বর— স্বাস্থ্য। এই ৫টি হলো। মৌলিক প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু এখানে এই শোষণমুক্ত সমাজ শেষ হয় না। আমি বৈপ্লবিক কর্মসূচীর মধ্যে এ সম্বন্ধে তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিব। এই যে আমাদের স্বপ্ন এই স্বপ্নের পিছনে তো আমাদের একটা দর্শন থাকতে হবে। এই দর্শনটা হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সেই দর্শন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।

এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে মানুষকে সমগ্র স্বাধীনতা দিতে হবে। কি স্বাধীনতা? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে যে যার ধর্ম করবে। ধর্মীয় পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কারণ এইসব স্বাধীনতা না থাকলে— এই যে মানুষের মধ্যে একটা বিরাট শক্তি আছে সেই শক্তিকে আমরা ব্যবহার করতে পারব না। পুরুষ, মহিলা সকলের শক্তিটাকে কাজে লাগাতে হবে। সেই জন্য আমাদের পার্টিতে মহিলা অঙ্গদল, যুব মহিলা অঙ্গদল আছে। এবং জাতীয়তাবাদের যে চেতনা রয়েছে আমাদের যে আদর্শ রয়েছে তাতে আমরা সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমাদের ধর্মও বলে যে কাজের বেলায় পুরুষরা, মহিলারা সব সমান। কোরআন শরীফে “হুনা লেবাসুন লাকুম ওয়া আনতুম লেবাসুন লাহুনা”- অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা পুরুষদেরকে বলছে যে, মেয়েরা হলো তোমাদের পোষাক, তোমরা হলে মেয়েদের পোষাক। যদি একজনের পোষাক আর একজনের হয় তাহলে দুই জনই সমান হবে। এই সমগ্র স্বাধীনতা বাস্তবায়িত করতে হবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রকে আহত এবং নিহত করেছিল বাকশালীরা। বহুদলীয় গণতন্ত্র করতে দিতে হবে। সকলকে দিতে হবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র করতে হবে যাতে মানুষের মধ্যে যে শক্তি আছে, যে প্রতিভা রয়েছে তার সম্পূর্ণভাবে বিকাশ ঘটাতে পারে সেইজন্য বহুদলীয় গণতন্ত্র করতে হবে। এর উদ্দেশ্য হলো সমগ্র মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে সংগঠনের মাধ্যমে। কি কি সংগঠন? আমাদের কাছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল রয়েছে গ্রামে গ্রামে আমরা সংগঠিত করছি। আমাদের ১৩টা অঙ্গদল রয়েছে। এগুলি হলো রাজনৈতিক সংগঠন। এবং আমরা গ্রামে গ্রামে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার গঠন করেছি সেটা হলো সামাজিক, অর্থনৈতিক সংগঠন। গ্রামের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে হবে। গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। যাতে তারা আগামী দিনে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। গ্রামের মানুষকে সাধারণ মানুষকে সংগঠন না করে কোন কাজই করা চলতে পারে না। বিদেশীরা সেইটা জানতে পেরে তারা গ্রামের মানুষকে সংগঠন করতে দেয় নাই। তাই ইউনিয়ন কাউন্সিল করেছে, জেলা কাউন্সিল করেছে, কিন্তু গ্রামের কোন স্বনির্ভর গ্রাম সরকার হতে দেয় নাই। কারণ গ্রামের মানুষ হলো বেশি। তারা যদি সংগঠিত হয়ে যায় তবে তারা স্বাধীনতা দাবী করবে। যাতে তারা স্বাধীনতা দাবী না করতে পারে সেইজন্যে সেই বিদেশী শাসকগোষ্ঠী গ্রামের মানুষকে সংগঠিত হতে দেয় নাই। তারা স্বনির্ভর গ্রাম সরকার সংগঠন করে নাই। এই যে আমরা বিভিন্ন ধরনের সংগঠন করলাম এর মধ্যে আছে গ্রাম প্রতিরক্ষাদল। এক কোটি রয়েছে তার মধ্যে ৩৫ লক্ষ মেয়েরা রয়েছে। জাতিকে তৈয়ারি করে ফেলতে হবে যাতে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলে প্রত্যেকটা পুরুষ মহিলা লড়বে। তবেই কেউ আক্রমণ করতে আসবে না। দুর্বল থাকা মানে শত্রুকে আক্রমণের জন্য নিমন্ত্রণ দেওয়া। এই যে আমরা সংগঠন সব করলাম এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমরা পরিচালনা করব বিপ্লব। শান্তিপূর্ণ বিপ্লব। রক্তক্ষয়ী বিপ্লব আমরা চাই না। এখন সর্বমানুষের শক্তিকে পরিচালিত করতে হবে দেশ গড়নের জন্য। সেই যে বিপ্লব সেই বিপ্লবের চরম লক্ষ্য হলো, আমাদের স্বপ্নের চরম লক্ষ্য হলো শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা এবং এই শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মধ্যে এই খাদ্য, বস্ত্ৰ, শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য এই ৫টি ছাড়াও আরো অনেক কিছু রয়েছে। এই বৈপ্লবিক কর্মসূচী দিয়ে আমরা শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করব। “বাজা” বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিফল? বিফল— না— সফল। বিফল না। কিন্তু এখন আমরা সম্পূর্ণ সফল হই নাই। আমরা এগিয়ে চলেছি। এখন আমরা জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করতে শুরু করেছি। যেখানে আগে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে ।

আমাদের দর্শনের টারগেট হলো জনগণ। এবং সেই জনগণকে টারগেট হিসেবে তৈয়ারি করতে হবে। সংগঠন করে বিপ্লব সাধন করতে হবে। শান্তি প্রিয় বিপ্লব। সেই বিপ্লবে আমাদের দর্শনের স্বপ্নের চরম লক্ষ্য হলো শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা ।

“খোদা হাফেজ”

সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লেখা। তার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পুনঃপ্রকাশিত হলো

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন