Logo
Logo
×

অভিমত

বিএনপি কি আসিফ নজরুলের কথা গুরুত্ব দেবে?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০২:৩০ এএম

বিএনপি কি আসিফ নজরুলের কথা গুরুত্ব দেবে?

আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক, লেখক, কলামিষ্ট। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে গত কয়েক বছরে তিনি দেশের মানুষের কাছে প্রিয় ও পরিচিত হয়ে উঠেছেন সরকারের ন্যায্য সমালোচনা করে। যে সময়, অন্য বুদ্ধিজীবীরা স্বার্থ কিংবা ভয়ে মুখ খোলেন না, আসিফ নজরুল সে সময় হয়ে উঠেছেন গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করা একজন বুদ্ধিজীবী। 

তবে, তা করতে গিয়ে তিনি বিরোধী দলকেও ছাড় দেন না। বরং ন্যায্য সমালোচনা করে তাদের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে ভুলত্রুটি দেখিয়ে দেন, যা সত্যিকারের বুদ্ধিজীবীদের কাজ। সম্প্রতি তিনি আরো একবার বিএনপির নেতাদের তীব্র সমালোচনা করলেন, যা পর্যালোচনা করলে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা দলটির মঙ্গল হবে। দেশের গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের লড়াইও দিশা পাবে। কিন্তু বিএনপি কি শুনবে?

তিনি প্রশ্ন তো‌লেন, আপনাদের ন্যারেটিড কোথায়? সত্যি ন্যারেটিভ, নিজেকে ডিফেন্স করার ন্যারেটিভ?

পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় কেবল সংখ্যা আর ন্যায্যতা দিয়ে রাজনীতিতে সফল হওয়া যায় না। চরম স্বৈরতন্ত্রকেও ঠেলে ফেলতে হলে প্রয়োজন ন্যারেটিভ বা বয়ান। প্রফেসর নজরুলের মতো দেশবাসীও হতাশ হয়ে দেখে, আওয়ামী বয়ানের বিরুদ্ধে দেশে শক্তিশালী বয়ান তৈরি হচ্ছে না। 

স্বাধীনতা যুদ্ধ দিয়েই শুরু করা যাক। আওয়ামী লীগ বরাবর এই যুদ্ধে নিজেদের এককভাবে নেতৃত্ব দেওয়া শক্তি হিসেবে দাবি করে। অথচ দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী নেতাদের বড় অংশ পালিয়ে ছিলেন আর যারা ময়দানে লড়াই করেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন তাদের একটা বড় অংশ আওয়ামী বয়ানের সঙ্গে একাত্ম ছিল না। এসব যোদ্ধারা, বামপন্থী কিংবা ডানপন্থি নির্বিশেষে, বরাবর আওয়ামী লীগের বয়ানের বিরোধিতা করেছেন, কেউ কেউ সরাসরি বিএনপির রাজনীতিও করেছেন। কিন্তু, যথাযথ প্রচার মাধ্যমের অভাবে, দীর্ঘ পরিকল্পনার অভাবে আওয়ামী বয়ান খারিজ করা যায়নি। 

ভোটে জেতার জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করলে তাঁকে রাজনৈতিক কৌশল বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের নাম এক নিঃশ্বাসে জুড়ে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক লেপে দেওয়া হয়েছে। যথাযথ বয়ান ও মিডিয়া না থাকায় বিএনপি এই রাজনীতিতে পরাস্ত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বড় একটা অংশের সমর্থন হারিয়েছে। যেই বিএনপি আমলে জঙ্গিবাদের দমন করা হলো, সেই বিএনপিকেই জঙ্গিদল বলে চিহ্নিত করে বহু বছর দেশে বিদেশে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের নেতা-কর্মীদের দমন করা হয়েছে। 

অথচ, বিএনপি এই দমনের ইতিহাস ঠিকঠাকমতো দেশে বিদেশে তুলে ধরতে পারেনি মিডিয়া কিংবা কূটনৈতিক চ্যানেল দিয়ে। প্রফেসর নজরুল দেখান, এই কারণে বিপুল জনসমর্থন নিয়েও গত বছর সরকারি বিরোধী আন্দোলন সফল হতে পারেনি। 

তিনি আরো বলেন, বেগম জিয়া কি নিজের স্বার্থের কার‌ণে রাজনীতি করেছিলেন? আমরা তো দুর থেকে দেখেছি, উনি যখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন, উনি স্বার্থ চিন্তা করেননি। করলে তো উনি আগেই আপস করতে পারতেন। যখন ওয়ান-ইলেভেন গভর্নমেন্ট ছিল, ওই সময় প্রথম আপস করতে তো ওনার কাছেই গিয়েছিল, করেছেন?

অথচ খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যাপারে দেশব্যাপী গণআন্দোলন দূরে থাক, বিএনপির নেতা-কর্মীরাই তেমন জোরেসোরে আন্দোলন করতে পারেনি। প্রফেসর নজরুল আক্ষেপ করে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার সমস্যা নিয়ে, এর ত্রুটিপূর্ণ বিচার নিয়ে বিএনপি কোনো বয়ানই তৈরি করতে পারেনি। অথচ তিনি দেশের মানুষের অবিসংবাদিত নেতা, যিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় প্রতীক ছিলেন, আজীবন আপোষহীন খেতাব পেয়েছেন। 

অধ্যাপক নজরুলের এই আলাপ শুনে হুট করেই হয়তো কর্মপন্থা নির্ধারণ করা যাবে না, এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, আওয়ামী বয়ানের বিপরীতে শক্তিশালী বয়ান ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠা। 

তবে সম্প্রতি ফেসবুক, ইউটিউবসহ কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে মিথ্যা ও ভুয়া সংবাদ এবং উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ হয়তো সরকারবিরোধীতার রাগ থেকেই করেন, তবে, এই বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। মিথ্যার ওপর দাঁড়ানো বয়ান বেশিদিন টেকে না। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য দীর্ঘ, সৎ ও সাহসী সংগ্রাম জরুরি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন