ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের প্রাণহরণের সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে ভয়াল ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ব্যাপারে একটা বিশাল ভূমিকা রেখেছিলো। ভোলা সাইক্লোন নামে পরিচিত ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর হওয়া সেই প্রলয়ে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। গবাদিপশু আর সম্পদের এন্তার ক্ষতি হয়।
এতো বিপুল প্রাণহানির বড়ো দুইটা কারণ ছিলো। এক-তৎকালে আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা বেশ দুর্বল ছিলো। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সেই প্রযুক্তি তেমন একটা ছিলো না। দুই- পাকিস্তানি শাসকদের এই সাইক্লোন নিয়ে চরম উপেক্ষা।
অভিযোগ আছে, পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান তখন নির্বাচন নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ দুর্যোগে থাকা মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়াননি। এতে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তান বিষয়ে যাদের সমর্থন ছিলো তাদের বড় অংশও পরের মাসের ৭ তারিখে হওয়া নির্বাচনে একচেটিয়াভাবে ভোট দিলো আওয়ামী লীগকে। বাকি অংশ সবারই জানা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই এলাকায় সাইক্লোন একটা নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন পূর্বাভাস দেওয়া অনেক সহজ। এর ফলে, মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে জানমাল বাঁচানো যায়। সত্যি বলতে, গত তিন দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে গণমানুষের সচেতনতা এতোটাই বেড়েছে যে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে।
কিন্তু, ইয়াহিয়ার মতোই অগণতান্ত্রিক এবং জনতাকে পাত্তা না দেওয়ার আচরণের ইঙ্গিত আবার শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এই ইঙ্গিত দেখা গেলো গত দুইদিন ধরে দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবল ঘূণিঝড় রেমালের বেলায়।
কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তরুণ গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে আবহাওয়ার নিখুঁত পূর্বাভাস দিয়ে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। পলাশ ফেসবুকে জানাচ্ছেনঃ
‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের মানুষের জান ও মাল রক্ষার প্রতি যদি সামান্যতম দায়িত্ব পালন করতো তবে দেশের উপরে প্রায় পূর্ণ শক্তির ঘূর্ণিঝড় রেমাল সক্রিয় থাকার সময়ই তড়ি-ঘড়ি করে ঘূর্ণিঝড় থেকে গভীর নিম্নচাপ ঘোষণা করতো না। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সোমবার সকালবেলাই জানিয়েছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার করণে সতর্কতা সংকেত নামিয়ে নিয়েছে। পক্ষান্তরে ভারতী আবহাওয়া অধিদপ্তর দুপুর ১২ টার সময় ঘোষণা করেছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল শক্তি ক্ষয় করে আজ সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।’
সন্দেহ করা যেতে পারে যে, সরকার নিজেদের দায়িত্ব এড়ানো এবং তথাকথিত ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য হয়তো আবহাওয়া অফিসকে দিয়ে এই ঘোষণা দেওয়ায়। সৌভাগ্যবশত মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন, আর সরকারি মাধ্যম ছাড়াও নানা ধরনের গণমাধ্যমের কারণে সাইক্লোনের আগেভাগেই লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারছে।
তথাপি, বিপদ কেটে যাওয়ার আগেই তাঁকে হালকাভাবে দেখানো, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেখানো কোনো ভালো লক্ষণ না। বিপদগ্রস্ত আর্থিক খাত, ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিভিন্ন বিদেশি শক্তির উপর অতিনির্ভরতার কারণে হয়তো এই সরকার দুর্যোগকে কমিয়ে দেখাতে চাইছে।
মূলত, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকলে, গণতন্ত্র না থাকলে একটা দেশের সরকার এইরকম স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।