Logo
Logo
×

অভিমত

চীনের নাকের ডগায় হবে ভারতের মহড়া

ইতোমধ্যেই তিনটি যুদ্ধজাহাজ দক্ষিণ চীন সাগরে পৌঁছে গেছে

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ১১:২৭ এএম

চীনের নাকের ডগায় হবে ভারতের মহড়া

চীন যেমন ভারত মহাসাগর নিয়ে নানান তৎপরতা চালাচ্ছে, ভারতও তেমনি চীন সাগরে তৎপরতা বাড়াতে জোরালো অবস্থান নিচ্ছে। এর সর্বশেষ ফল দক্ষিণ চিন সাগরে তিন তিনটি যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ। ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেবে তারা। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে সেদেশের গণমাধ্যম এই খবর দিচ্ছে।

দক্ষিণ চীন সাগরের চারপাশে রয়েছে চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, যাদের বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই ওই সাগরের ওপর নির্ভরশীল। এই দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশটা নিজেদের বলে দাবি করে চীন সরকার। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে এই দেশগুলির বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের সুযোগ নিয়ে ভারত সেখানে ভিত্তি গাড়ার চেষ্টা করছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটির নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড কৌশলগত কারণে দক্ষিণ চীন সাগরে এই তিনটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। জাহাজগুলো সিঙ্গাপুর ঘুরে ফিলিপাইন উপকূলে পৌঁছেছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল রাজেশ ধনখড়।

২০১২ সালে ফিলিপাইনের কাছ থেকে স্কারবোরো শোলে দ্বীপটি দখল করেছিল চাইনিজ আর্মি, যা নিয়ে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

চীন ভারত মহাসাগরে অনেক বছর ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে। ভারতের নিকট প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপে চিনা চরজাহাজ প্রায় নিয়মিত আনাগোনা করছে, যা ভারত মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। এতে সমালোচনার মুখে মোদী সরকারের মাথাব্যথাও হচ্ছে।

মার্চের শেষ দিকে ভারতে একেবারে কাছাকাছি চারটি চীনা জাহাজ এসেছিল, যার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে তিনটি যুদ্ধজাহাজা পাঠাল বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারত মহাসাগর ও চীন সাগরের গুরুত্ব ভিন্ন। চীন ও ভারতের অবস্থান/দর্শনও ভিন্ন। চীন একদিকে যেমন ভারতকে চাপে রাখতে চায় তেমনি ভারত মহাসাগর ও তার পাশে আরব সাগর, পারস্য উপসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান সৈন্যদের পর্যবেক্ষণ করতে চায়। এর জবাব হিসেবে ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে উপস্থিত থাকতে পারলে চীন চাপে থাকবে সন্দেহ নেই। দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের সঙ্গে রয়েছে চীনের শত্রু আমেরিকা। আমেরিকা এ অঞ্চলে তাদের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যথেষ্ট চাপে রেখেছে কমিউনিস্ট শাসিত চীনকে।

ভারত কী করতে পারবে

তিনটি যুদ্ধজাহাজ শুনতে বেশ ভারী বটে, দুর্বল অর্থনীতির দেশ ভারত। পূর্ব এশিয়ায় ভারতের বিনিয়োগ যেখানে ধরার মতো না, সেখানে ভারত মহাসাগরের আশপাশ দিয়ে, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগ শত শত বিলিয়ন ডলার। তবে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ভূরাজনীতির খেলায় চীনকে যথেষ্ট চাপে রাখার সুযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগর একটি প্রধান সমুদ্র পথ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাডের অনুমান, বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ ২০১৬ সালে এই সমুদ্র পথে পরিবহন করা হয়েছে। গত আট বছরে তা আরও বেড়েছে নিশ্চয়, যার পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। 

এই সাগরে আছে প্রচুর মৎস্যসম্পদ। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মাছ ধরার জাহাজ ও নৌকা চলে এখানে।

প্যারাসেল ও স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ প্রায় মানববসতিহীন। এ দুটি জায়গার আশপাশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে বলে ধারণা করা হয়, যার বিস্তারিত অনুসন্ধান এখনো হয়নি।

চীন নাইন-ড্যাশ লাইন নামে একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এর মাধ্যমে চীন তাদের সীমানা চিহ্নিত করে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশের মালিকানা দাবি করে রেখেছে। মোট নয়টি ড্যাশ চিহ্ন দিয়ে এই নাইন-ড্যাশ লাইনটি তৈরি করেছে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি।

চীন ১৯৪৭ সালে একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। সেখানে তাদের দাবির বিস্তারিত তুলে ধরে তারা। দেশটি তখন বলেছিল, তাদের এই দাবির সমর্থন মিলবে ইতিহাসে। ঠিক একই দাবি করে তাইওয়ানও।

তবে চীন কখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলে না তাদের দাবিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত। চীনের আঁকা মানচিত্রে যে নাইন-ড্যাশ লাইন দেখা যায়, সেগুলো প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগর জুড়ে বিস্তৃত। এর কোন বিন্দু থেকে কতটুকু পর্যন্ত তাদের সীমানা তা তারা উল্লেখ করে না। এটাই রাজনীতি। নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলে পরবর্তীতে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় হাজির হয়ে বলা যাবে, ‘এটা আমার!’ 

দক্ষিণ চীন সাগরে সীমানা বিরোধ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে গুরুতর গোলযোগ হয়েছে ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যে। ফিলিপাইন ও চীনও কয়েকবার মুখোমুখি সংঘাতে জড়ানোর উপক্রম হয়েছে। সেখানে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের বন্ধু আমেরিকা। আমেরিকার বন্ধু ভারত। যেহেতু অঞ্চলটির অর্ধডজন দেশ চীনের বিপক্ষে রয়েছে, ভারত হয়ত সেখানে একটা শক্ত অবস্থান জানান দিতে পারবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন