Logo
Logo
×

অভিমত

ইসরায়েল-আমেরিকা বিশেষ সম্পর্ক কি টিকবে?

না‌কি শেষ পর্যন্ত জিমি কার্টারের পথে হাঁটবে?

Icon

ডালিয়া শিইন্ডলিন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১১:২৩ এএম

ইসরায়েল-আমেরিকা বিশেষ সম্পর্ক কি টিকবে?

হোয়াইট হাউসের সামনে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানোনের প্রতিবাদ

বাইডেন প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত একটি বড় অস্ত্রের চালান আটকে দিয়েছে তার দেশ। এটি ছিল ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থামাতে গত কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। ওই চালানে দুই হাজার পাউন্ড বোমা ছিল। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানতেন, এই বোমা ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যবহার করবে।

মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কী বোঝায়?

ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন বাড়ছে। কয়েক মাস ধরে ডেমোক্র্যাট নেতাকর্মীরা ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে দুই হাজার পাউন্ড বোমার বিষয়ে কয়েক ডজন রিপাবলিকান সদস্য উচ্ছ্বসিত হয়েছেন।

গত ১৯ মে নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিক আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি জেরুজালেমে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতাদের সাথে বৈঠকে বাইডেন নীতির প্রকাশ্যে নিন্দা করেন। যার মানে, বন্ধু আমেরিকার আইনপ্রণেতা ইসরায়েলের মুখের ওপর সমালোচনা করলেন।

ইসরায়েলকে সমর্থন যেখানে আমেরিকার প্রায় ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে বাস্তবে বেশ একটি জোরালো বিভক্তিও বাড়ছে বছরের পর বছর ধরে। অনেক ডেমোক্র্যাটিক ভোটার, এবং কম বয়সী আমেরিকানরা, ফিলিস্তিনের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও তাদের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সহানুভূতিশীল, যেখানে ইসরায়েল অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে হত্যাযজ্ঞ ও বাড়িঘরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, যার ফলে ইসরায়েলের প্রতি তাদের মনে তীব্র ক্ষোভ দানা বাধছে।

এই কম বয়সী আমেরিকানরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর তথকথিত জনপ্রিয়তাবাদী উদারনীতিকে ভণ্ডামি বলে ঘৃণা বোধ করছে। আর এই ইসরায়েলকে যেসব আমেরিকান রাজনীতিক সমর্থন ও সহযোগিতা করছেন, তাদের প্রতিও এই কম বয়সী আমেরিকানরা মর্মাহত।

গত ৭ অক্টোবরের পরে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের পাশাপাশি আমেরিকান ইহুদিরাও সমর্থন দেওয়ায় তাদের প্রতিও তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা দানা বেধেছে এই কম বয়সী আমেরিকানদের মনে। আমেরিকা জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন তারই প্রমাণ।

এটা স্পষ্ট যে তারা মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ফাটল নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন। তারা মনে রাখে যে, এই ইসরায়েল ব্যাপক আমেরিকান সামরিক সহায়তার উপর নির্ভর করে। এই সম্পর্ক শিগগির বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করেন অনেক ইহুদি।

ইসরায়েলি ও আমেরিকানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই বিভক্তি গাজার বর্তমান যুদ্ধের মধ্যে আবির্ভূত হয়নি। উভয় দেশের দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিপথ নির্দেশ করে যে, দুই দেশের ‘শেয়ার্ড ভ্যালুজ’ (shared values) কয়েক দশক ধরে যে সম্পর্ককে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে, তা ইতিমধ্যেই চাপের মধ্যে পড়েছে৷

উভয় দেশ বলে থাকে যে, ৭৫ বছর ধরে ইসরায়েল ও আমেরিকা নির্ভরযোগ্য মিত্র যা তাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বহুত্ববাদের মূল্যবোধ মূর্ত করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধ এই উত্তেজনা নিয়ে এসেছে যে, এই যুদ্ধ আগামী বছরগুলির জন্য সেই মিত্রতার প্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের বিরতিহীন হামলায় ৩৫ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ফসলির জমি ও বাড়িঘর।

ইসরায়েল-আমেকিার বর্তমান ফাটলের তাৎপর্য বোঝার জন্য একটু অতীতের দিকে তাকানো যাক।

আমেকিা তার কয়েক দশকের নীতি ভাঙে ১৯৭৭ সালে। সে সময় প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ম্যাসাচুসেটস টাউন হল মিটিংয়ে একটি অলিখিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার প্রয়োজনী রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কথা বললেন। সে সময়ে ইসরায়েলি ইহুদিদের কাছে সেটা ছিল অভিশাপস্বরূপ।

এর দুই বছর আগে এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ৭০ শতাংশ আমেরিকান প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে সমর্থন করছে। এই সমীক্ষার ফল শুনে জিমি কার্টারের প্রধান গার্হস্থ্য নীতি উপদেষ্টা স্টুয়ার্ট আইজেনস্ট্যাট বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি কার্টার প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিষয়ে ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘সমীক্ষার ফল শুনে আমি আমার বেঞ্চ থেকে প্রায় পড়ে গিয়েছিলাম!’

তা সত্ত্বেও, ১৯৭৮ সালে, কার্টার মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড আলোচনার আয়োজন করেন। সেখানে তিনি সরাস্রায়েলকে ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল করা সিনাই থেকে একটি ভূমি ছেড়ে দিতে বলেন এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে আলোচনার এজেন্ডায় স্পষ্টভাবে অন্তভুক্ত করেন।

পরবর্তী আমেরিকান নেতারা কার্টারকে অনুসরণ না করলেও তার প্রতিক্রিয়া জনমন থেকে সম্পূর্ণ মুছে যায়নি। বরং ন্যায়পরায়ণতার বোধ সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়েছে। তার উদাহরণ আমেরিকাজুড়ে তরুণ প্রজন্মের মনে ফিলিস্তিনের প্রতি উদার সমর্থন।

(ফরেন এফেয়ার্স ডটকম থেকে)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন