সোহানুর রহমান সোহানের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। দেশের আইনে একজন শিশু। কলেজপড়ুয়া ছেলেটির চেহারাতেও বালকসুলভ কমনীয়তা। অথচ দুনিয়ার বুক থেকে সে বিদায় নিলো নির্মমতম নিষ্ঠুরতার সঙ্গী হয়ে। থেতলে যাওয়া, চোখ উপড়ানো, নিদারুণ অত্যাচারের শিকার ছেলেটির লাশ পাওয়া যায় নিখোঁজের বারো দিন পর।
সোহান ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহিদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল সোহানুর। এ সময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চারজন লোক বাইকে করে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। নিখোঁজের ১০ দিন পর চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার বুলকিয়া চন্দতলা মাঠে সোহানুরের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সোহানের পরিবার শতিনেক গ্রামবাসী নিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে দেখা করে। সোহানের মা হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেন, তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে দিলে তাঁরা এখন থেকে সপরিবারে আওয়ামী লীগ করবেন।
কিন্তু, এমপি আনার উত্তর দেন যে, তোদের আওয়ামী লীগ করা লাগবে না। আওয়ামী লীগ করা লোকের অভাব হবে না। অতটুকু একটা বাচ্চা ছেলেকে শিবির করার দায়ে হত্যা করা হয়। শুধু সোহান নয়, এরকম আরো কয়েকজন তরুণের লাশ পাওয়া যায় সেসময়। কিছু সংবাদে আসে, বাকিগুলো সংবাদেও আসে না। শিবির নাম বললেই বেশিরভাগ মিডিয়া এই খুনগুলোর খবর চেপে যেতো।
আনার অবশ্য একা নন। নারায়নগঞ্জের কিশোর ত্বকির নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা দেশবাসী অবগত। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত ওসমান পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলেই বেশিরভাগ মানুষের ধারণা। নারায়নগঞ্জের ত্রাস ওসমানেরা অবশ্য কেবল আওয়ামী লীগই করে না, ধর্মকেও ব্যবহার করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে।
বাংলায় প্রবাদ আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেই এমপি আনার কলকাতায় গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন নৃশংসভাবে খুন হন। কলকাতা পুলিশ জানায়, এমপি আনারের মরদেহ অন্তত চার টুকরা করে চার স্থানে ফেলা হয়েছে। সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সোহানের আত্মা কি এই নির্মমতা দেখে শান্তি পেলো? ওর অসহায় মা? দেশবাসী? যত বড় পাপীই হোক, এই নির্মমতা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে আনন্দদায়ক হওয়ার কথা নয়। তবে, গোটা দেশকে হত্যাপুরী যারা বানালো, তাঁদের এই পরিণতি দেখে শেখার আছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরুক, সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক।