ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুরে সংগঠিত প্রতিবাদ হয়েছে। গত রবিবার মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্করের আশেপাশে সারা দিনভর রাস্তা অবরোধ থাকার কারণে যানচলাচল ব্যাহত হয়। শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়ে অন্যান্য অংশেও।
তবে, গতকাল সোমবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বৈধ হওয়া উচিত কিনা এই তর্ক একপাশে সরিয়ে রেখে এই আন্দোলনের শিক্ষা অন্যক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যায়।
ব্যাটারিচালিত রিকশা চললে রিকশাওয়ালাদের চেয়েও বেশি লাভ হবে যন্ত্রাংশ আমদানীকারক এবং রিকশার মালিকেরা। এর পাশাপাশি রিকশার বৈধতা নিয়ে দুই দিন পর পর এইরকম লুকোচুরি হলে পুলিশসহ বিভিন্ন সমিতির নেতাদের বখরা জুটবে। বলাই বাহুল্য, এরা সরকারি দলের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত।
ফলত, এই রিকশা বৈধকরণ প্রসঙ্গ এবং একে ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে আর্থিক ও রাজনৈতিক ফায়দা আছে। তাছাড়া আরো একটি বড় লাভ হলো, জনগণকে এই নিয়েই ব্যস্ত রাখা। এর ফলে, জনগণ আসল সমস্যা, যেমন ফুটপাত দখল করে হাঁটার রাস্তা বন্ধ করা, বাস মালিকদের দৌরাত্ম্যে গণপরিবহনের বেহাল দশা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি নিয়ে কথা কম বলবে। এছাড়াও, জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়বে। রিকশার পক্ষে বনাম বিপক্ষে দুইভাগ হয়ে পড়বে।
কিন্তু, সংগঠিত শক্তির যে এখনো ভীষণ গুরুত্ব আছে তা ভোলা যাবে না। ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমে এসে দিনের পরদিন আন্দোলন করা এখনো খুব কার্যকর। কোন সন্দেহ নেই যে, সরকারের প্রভাবশালী লোকদের স্বার্থ না থাকলে, পিটিয়ে এই আন্দোলন দমন করা হতো। যেভাবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে নেমে আসাদের নির্মূল করা হয়েছিল, যেভাবে নির্মূল করা হয় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের।
কিন্তু, গত নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাস্তার আন্দোলন স্তিমিত। একদিকে অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিতে দিশেহারা সীমিত আয়ের মানুষেরা। ভোট দিতে না পারা নাগরিকরা কোনদিক দিয়েই নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারছেন না।
গত নির্বাচনের আগে আন্দোলন করা বিরোধী দলগুলোও আপাতত ক্লান্ত বলে প্রতীয়মান। এরই মধ্যে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বাজেট প্রণয়ন হবে। আরেকদফা নাগরিক জীবনের উপর ঝড় বয়ে যাবে? নিজেদের স্বার্থে মধ্যবিত্ত কি রাস্তায় নেমে আসতে পারবে? এককাট্টা হতে পারবে? রিকশাচালকদের আন্দোলন দেখে উদ্বুদ্ধ হবে?