Logo
Logo
×

অভিমত

জুয়ার থাবায় ক্ষতবিক্ষত তরুণেরা

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০১:০৮ এএম

জুয়ার থাবায় ক্ষতবিক্ষত তরুণেরা

সম্প্রতি বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের মধ্যে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে এই আয়োজন বাংলাদেশের জন্য কতটা কাজের হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যথারীতি যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, কয়েকটা জয় পেলে খেলোয়াড়রা চাঙা হবে। কিন্তু আদতে তাও হয়নি। দুই-একটা ম্যাচ অতি কষ্টে জিতে শেষটাতে হেরেই গেছে বাংলাদেশ। 

তবে, অর্থহীন এই সিরিজের একটা ম্যাচ হারার চেয়ে বেশি আগ্রহ উদ্দীপক ছিল খেলার সময়সূচি। তীব্র গরমের মধ্যেই খেলাটা শুরু হয়েছে সকাল ১০টায়। সাধারণত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ সন্ধ্যার পর শুরু হলেও অফিস খোলার দিন সকাল বেলার শুরু অনেককেই বিস্মিত করেছে। 

সম্ভবত এই কাজটা করা হয়েছে টেলিভিশন সম্প্রচারকদের সুবিধার্থে। বিকেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএলের খেলার সময়সূচির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে। বাংলাদেশের খেলার চেয়ে বিলিয়ন ডলারের আইপিএল নিয়েই টেলিভিশন ও দর্শকের আগ্রহ বেশি। আর এই কারণটা শুধুই ক্রিকেটীয় নয়। 

আইপিএল নিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক জেমস আস্তিল তাঁর বিখ্যাত বই দ্যা গ্রেট তামাশায় দেখিয়েছিলেন, এই টুর্নামেন্টের প্রতিটা খেলার সঙ্গেই কোটি কোটি টাকার বাজি বা জুয়া জড়িত। আস্তিলের বইটি প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে, এরপর গত এক দশকে এই টুর্নামেন্টটি আরো বহুগুণে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এর দুর্নীতি নিয়েও অনেক বই লেখা হয়েছে, নির্মিত হয়েছে ডকুমেন্টারি।

আর আইপিএলের জুয়ার থাবায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণরাও। কিছুক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এই হার বেশি। শুধু আইপিএল নয়, ভারতের অন্যান্য অখ্যাত লীগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এসব নিয়েও জুয়া চলে। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই পাড়ার সেলুনের দোকান, বাজারের নির্দিষ্ট কোনো দোকান কিংবা আড্ডার আসরে এইসব চোখে পড়বে। আর ক্লাবগুলোতো আছেই। এর বাইরে এখন যোগ হয়েছে অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইট। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণেরা সেমিস্টার ফির টাকা দিয়ে, শ্রমিক শ্রেণির তরুণেরা কষ্টার্জিত কামাইয়ে, এমনকি অনেকে চুরি ছিনতাই করে এই জুয়ায় অংশ নিচ্ছে।

বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের চেয়েও খারাপ কেন? কারণ, এই দেশে গ্রামীণ অর্থনীতি একদম ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষিকাজ করা লোকসানের ব্যাপার হয়ে গেছে। গ্রামে বিনিয়োগের সুযোগ নেই, ফলে গ্রামের তরুণরা কোনোমতে বিদেশে যেতে চায়। এইসব তরুণেরা একেতো বিনিয়োগ করতে পারছে না, উপরন্তু এদের জন্য বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা নেই। জুয়া হয়ে পড়ছে বড় আকর্ষণ। 

শহরেও জীবনের অবস্থা ভালো না। সরকারি বাহিনী আর প্রশাসনের দাপটে ব্যবসার পরিবেশ নাই। শেয়ার বাজার ধসে গেছে। বেসরকারি চাকরি অনিশ্চিত, আর তাঁতে বেতনাদি যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। বিশাল এই শহরে বিনোদনের অভাব তো আছেই। 

এসব ছাপিয়ে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উৎসাহ। কয়েক বছর আগে ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো চালানোর কারণে কিছু গ্রেপ্তার হলেও জুয়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকারি দলের ক্যাডার আর প্রশাসনেরা জুয়া চলতে দেয়ার বিনিময়ে বখরা পায়। কোথাও কোথাও নিজেরাই চালায়। 

কাগজে কলমে নিষিদ্ধ হলেও টেলিভিশনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি দলের বিতর্কিত এমপি এবং বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এইরকম সাইটের বিজ্ঞাপন করেছেন যারা নিজেদের সংবাদ বা নিউজ সাইট বলে আসলে জুয়ার আয়োজন করে। পত্রিকা অনলাইনেও এসব বিজ্ঞাপন সয়লাব। খোদ বিসিবি, যারা সকাল দশটায় টি-টোয়েন্টি আয়োজন করে, তাঁদেরও এতে হাত আছে বলে অভিযোগ আছে। 

এদেশের তরুণদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে এখন নৈতিকতা ও অর্থনীতির মেরুদন্ড ভাঙার মহোৎসব চলছে। বলাই বাহুল্য, এ দেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করলে লাভ কাদের?

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন