Logo
Logo
×

অভিমত

আইএমএফের দায় দিয়ে লুটের মহোৎসব

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম

আইএমএফের দায় দিয়ে লুটের মহোৎসব

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যেই দেশের অর্থনীতিতে ছড়ি ঘুরায় তাদের সর্বনাশ হয়, এই কথাটা গত কয়েক দশকে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারও আইএমএফের ঋণের জালে আটকা পড়েছে। এই সংস্থার কঠিন শর্ত মানতে গিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের নাভিশ্বাস অবস্থা। সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা দাবি করেছেন, পশ্চিমাদের কারণেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। 

কিন্তু, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ক্রমেই যে খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে এই দায় কি কেবল পশ্চিমাদের বা আইএমএফের শর্তের? 

একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য আইএমএফের শর্ত তো দায়ী নয়ই, বরং এসব শর্তগুলোকে সামনে রেখে লুটেরারা নিজেদের অপকর্ম আরো বেশি বেশি চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার আইএমএফের কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ চেয়েছে যা দেশের অর্থনীতির শতকরা একভাগের মতো। এর বিনিময়ে আইএমএফ কিছু শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু, সরকার সকল শর্ত না মেনে কেবল নিজেদের যেটুকু সুবিধা ততটুকুই মেনেছে। 

যেমন, বহুদিন ধরে বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও, জোর করে সুদের হার কমিয়ে রাখা হয়েছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার হার বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যতের ওপর চাপ বাড়লেও লাভ হয়েছে বেগমপাড়াসহ নানা অফশোরে অর্থ পাচারকারীদের।

আইএমএফের আরেকটা শর্ত ছিল নেট রিজার্ভ অন্তত ২০ বিলিয়ন রাখা। সেখানেও ব্যর্থ সরকার, তারপরেও আইএমএফ সেই লক্ষ্যমাত্রা ১৪ বিলিয়নে নামিয়ে এনেছে।

উল্লেখ্য, আইএমএফের ঋণ নেওয়ার আগে ত্রুটিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ অনেক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। রিজার্ভের সঠিক চিত্র পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে অবস্থা শোচনীয়। এই দায় আইএমএফের নয় বরং লুটপাট এবং ভুলনীতির। উন্নয়নের নামে যথেচ্ছ খরচের।

আইএমএফ আরো বলেছিল, ব্যাংকে, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত খেলাপি ঋণ কমিয়ে ১০% এর নিচে নামিয়ে আনতে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমানোয় দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এই হার সরকারিভাবেই ২০ ভাগের বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের হার প্রায় তিনভাগের একভাগ। 

সম্প্রতি দেখা গেছে কিছু ব্যাংকের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে সেগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে গছিয়ে দিয়ে বা একীভূত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু, সমস্যার যে গোড়া, সেই খেলাপি ঋণ কমানো হচ্ছে না। কারণ এইসব খেলাপিরা বেশিরভাগই সরকারি দলের বড় পর্যায়ের অথবা তাঁদের কাছের লোক। 

ভারতের আদানী আর দেশি সামিট গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানকে বছরের পর বছর বিপুল হারে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে জনগণের কষ্টার্জিত টাকা থেকে। বিদ্যুৎ নিয়ে এতো খরচের পরেও ঢাকার বাইরে বিদ্যুতের অবস্থা শোচনীয়। কলকারখানা বা উৎপাদনেও যথেষ্ট সরবরাহ নাই। ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে আইএমএফের সতর্কতা কানে তোলেনি সরকার। শুধু তাই না, ধনী ও অতিধনীদের থেকেও কর আদায়ে ব্যর্থ এই সরকার। 

এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৮৭ ভাগ ধনী কর দেয় না। অন্যদিকে গরিবদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ভ্যাট বা আমদানি শুল্কের মতো পরোক্ষ কর যেগুলো আদতে ভোক্তাদেরই দিতে হয়, সেগুলোর হার বাড়ছে। আর সুদের হার জোর করে ধরে রাখলেও ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে এবং সরকারি খরচ মেটাতে সমানে টাকা ছাপা হচ্ছে। এর ফলাফল মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছেই। বাজারে গিয়ে অসহায় হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। 

অবাধ লুটের এই মহোৎসবে আইএমএফ কিংবা পশ্চিমাদের দিকে আঙুল তোলা নতুন এক কৌশল মাত্র। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন