ব্যাংক ধ্বংস করে, শেয়ার বাজার লুটে নিয়ে, দেশের টাকায় বিদেশে বেগমপাড়া বানিয়ে এখন লুটের নতুন কৌশল হিসেবে এসেছে সার্বজনীন পেনশন স্কিম। গত বছর এই স্কিমের প্রচলন হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা এই স্কিমে জমা করতে থাকবে এবং অবসরের বয়স পার হলে তা থেকে মুনাফাসহ আসল টাকা ফেরত পাবে।
এই স্কিম নিয়ে বিপুল প্রচার করা হলেও এর সাড়া মেলে খুবই অল্প। প্রথমত, এই সরকারের আমলে নানা আর্থিক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির ফলে সাধারণ মানুষের এসব স্কিমের উপর বিশ্বাস নেই। দ্বিতীয়ত, বিপুল মূল্যস্ফীতি এবং লুটপাটের অর্থনীতিতে মানুষ যেখানে কোনোভাবে খেয়েপরে টিকে থাকতে পারছে না, সেখানে সঞ্চয় করা প্রায় অসম্ভব।
সাংবাদিক মহলে প্রচলিত আছে যে, তারল্যর সংকটে থাকা সরকার আশা করেছিল, এই স্কিম দারুণ জনপ্রিয় হবে এবং তা থেকে পাওয়া অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। কিন্তু আদতে তেমনটি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর ওপর নাখোশ হয়ে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেন।
কিন্তু, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া না দেওয়ায় এবার সরকার জোর করে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা এই স্কিমের আওতায় এনে তাঁদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলছে। গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, তাঁরা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। আগামী জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে উপজেলা নির্বাহীদের তরফ থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষকদের এই পেনশন স্কিমের আওতায় আনতে।
দেশে বিনিয়োগের পরিস্থিতি নাজুক, বেসরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা নেই। এতদিন যারা সরকারি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তাঁদের মধ্যে হয়তো চাকরি ও পেনশনের মতো ব্যাপারগুলোতে একটা নিরাপত্তার অনুভূতি কাজ করতো। কিন্তু, পেনশন স্কিমের মতো অপরীক্ষিত এবং অনিশ্চিত ব্যাপারে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করে সেই নিরাপত্তার অনুভূতিও হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
জনগণের কাছে জবাবদিহিতাবিহীন, প্রচণ্ড দুর্নীতিপরায়ণ ও বেপরোয়া সরকারের আমলে কারোরই আসলে নিরাপদ ভাবার সুযোগ নাই।