Logo
Logo
×

অভিমত

আবারো জনতার প্রত্যাখান, এরপর কী?

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম

আবারো জনতার প্রত্যাখান, এরপর কী?

বাংলাদেশের জনগণ আবারো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। দেশজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে সরকারি হিসেবে ৩৫ শতাংশের আশেপাশে ভোট পড়েছে। ভোটের আগে বিপুল প্রচারণা, অর্থ ও ক্ষমতার প্রদর্শনী হলেও বেশিরভাগ মানুষই ভোটকেন্দ্রে যাননি। 

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবারও নির্বাচন বর্জন করেছে। বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁদের বহিষ্কার করেছে দলটি। সেসব নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে যেমন ভালো তো করতে পারেননি, খুব বেশি ভোটারকেও আকৃষ্ট করতে পারেননি।

সব মিলিয়ে জনতার বিপুল বর্জনে ভোট পরিণত হয়েছে প্রহসনে। গতবার দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করে একশোর বেশি বিনা ভোটে বিজয়ী করার পর এবার আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন দেয়। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়দের নির্বাচন করতে শীর্ষ পর্যায় থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। বলাই বাহুল্য, তাঁতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দমানো যায়নি। আরো একটি একতরফা নির্বাচনে তাঁরা বিপুলভাবে জয় লাভ করে। যদিও এতে জনতার ম্যান্ডেট নেই বলেই ধরে নেওয়া যায়। 

জনতার এই প্রত্যাখান সুস্পষ্টভাবেই এই সরকারের আমলে নির্বাচনের প্রতি অবিশ্বাসের সংকেত। বিএনপি ও বিরোধী দলও নিজেদের অবস্থান ধরে রেখে আরো একটি নৈতিক বিজয় অর্জন করলো। কিন্তু, আবারো প্রশ্ন এসে যায়, এরপরে কি?

এই সরকারের আমলে এই নিয়ে বহুবার বিএনপি নৈতিক বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হলো। নেতা-কর্মীদের ওপরে প্রশাসন ও সরকারি দলের পেটোয়া বাহিনীর বিপুল অত্যাচারেও তাঁরা অবস্থান ধরে রাখে সক্ষম হলো। কিন্তু, জনতাকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে এরপরের ধাপে গিয়েই দলটি আটকে যাচ্ছে।

গত নির্বাচনের আগে আমরা দেখতে পাই, দেশব্যাপী দারুণ আন্দোলনের আবহ তৈরি করেও শেষতক জাতীয় নির্বাচনের আগে কার্যত কোনো বাঁধাই সৃষ্টি করতে পারেনি দলটি। সন্দেহ নাই, ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের শক্তিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে সমর্থ হয়। তবে, বিএনপিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তির ওপর ভরসা করার খেসারত দিতে হয়। ফিলিস্তিন পরিস্থিতিতে একদিকে মার্কিনিদের বিদেশনীতি যেমন উন্মোচিত হয় তেমনি এই কথাও বলা যায় যে, বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়া মার্কিনিরা আপাতত বাংলাদেশ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাবে না।

ফলে, সেই পুরোনো আলাপেই ফিরতে হয়। বিএনপির মতো দলকে জনতার শক্তিতেই আগাতে হবে। আমরা এর উদাহরণ দেখতে পাই মালদ্বীপে। পাকিস্তানে নানা কায়দায় সামরিক শক্তি ক্ষমতা আঁকড়ে রাখলেও জনতার সম্মিলিত শক্তির ক্ষমতা দেখা গেছে গত নির্বাচনে। খোদ ভারতেই, বিজেপির অবস্থা নড়বড়ে।

সন্দেহ নেই, আন্দোলন সংগ্রামের গতি বাড়ালে আওয়ামী বাহিনী বিপুল পালটা আঘাত করবে। আর তা সহ্য করতে প্রথমে যেই ভিত দরকার তা হচ্ছে সফট পাওয়ার বা নরম শক্তি। বয়ান তৈরি ও ভাঙার ক্ষমতা। মিডিয়া ও বিকল্প মিডিয়া। 

পৃথিবীজুড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে ইসরায়েলের তৈরি করা বয়ান ভেঙে দিচ্ছে বিকল্প মিডিয়া। খোদ মার্কিন মুলুকে হাজারো হাজারো ছাত্র আন্দোলনে নেমে আসছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। ইসরায়েল-মার্কিন পক্ষপাতদুষ্ট বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মিডিয়াও পারছে না মিথ্যাচারের বয়ানকে গেলাতে।

দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী, অর্থশালী মিডিয়ার বয়ান যদি এভাবে ভেঙে দেওয়া যায়, যদি খোদ মার্কিন মুলুকের ছাত্ররা এতো বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, তবে বাংলাদেশে তা করা যাবে না কেন? 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন