Logo
Logo
×

সংবাদ

দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

ব্যাংককে মোদি-ইউনুসের প্রথম সাক্ষাতে কি আশার আলো, না নতুন সংকটের শুরু?

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

ব্যাংককে মোদি-ইউনুসের প্রথম সাক্ষাতে কি আশার আলো, না নতুন সংকটের শুরু?

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আট মাস পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠক করলেন। 

এই ঐতিহাসিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে।

গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

বৈঠকটি খুবেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ গত বছরের ৮ আগস্টে ড. ইউনুস অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল দুই নেতার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। আর এই বৈঠক হলো এমন এক সময় যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছিল।

বৈঠকে কী আলোচনা হলো?

বৈঠকে উভয় পক্ষ তাদের মূল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মোদি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর ড. ইউনুস ফের হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি তোলেন।

বাংলাদেশ এই বৈঠককে ‘খুবই গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ’ বলে আখ্যায়িত করে। অন্যদিকে, ভারত জানায়, সব দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর দুই নেতা একমত হয়েছেন। তবে মূল অর্জন ছিল—এই বৈঠকটি হওয়াই। কারণ, এর আগে বাংলাদেশ বহুবার ভারতের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানালেও, তা উপেক্ষিত হয়েছিল। তাই ব্যাংককের এই সাক্ষাৎকে অনেকে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছে।

বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ভাষায়, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বৈঠক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ তৈরি হবে।’

কিন্তু সেই আশায় জল ঢাললো ভারত নিজেই। ব্যাংক বৈঠকের ঠিক তিন দিন পর ভারত ঘোষণা করে—২০২০ সালে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হচ্ছে। এই সুবিধার ফলে বাংলাদেশ তার রপ্তানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠাতে ভারতের স্থলবন্দর, বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান—ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দরে ‘চরম জট’ ও ব্যয়বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের কারণে তাদের নিজস্ব রপ্তানিতে দেরি ও ক্ষতি হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্তটি নেওয়ার সময়ের জন্য এতে কূটনৈতিক ইঙ্গিত রয়েছে বলেই ধারণা।

ড. ইউনুস মার্চের শেষ সপ্তাহে চীন সফর করেন। সেখানে তিনি বলেন—‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কোনো সমুদ্রপথ নেই। আমরাই এই অঞ্চলের একমাত্র সমুদ্র রক্ষক। এতে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে চীনা অর্থনীতির বিস্তারের।’

এই বক্তব্য দিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দেয়। ভারতের জন্য স্পর্শকাতর সিলিগুঁড়ি করিডোর খুব কাছেই, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের একমাত্র সংযোগপথ। এই করিডোরের আশপাশে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, এমনকি চীনের অবস্থানও।

এমন অবস্থানে দাঁড়িয়ে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বার্তা দেওয়া ছিল ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগে আঘাত করার মতো। চীনপন্থি এই অবস্থান হয়তো ইউনুসকে তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক সুবিধা এনে দেয়।

অনেকেই মনে করেন, ইউনুসের চীন সফরের কূটনৈতিক চাপেই মোদি বৈঠকে বসতে বাধ্য হন। তবে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল সেই প্রাথমিক সাফল্যের জন্য বড় ধাক্কা দেয়।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়—বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্যে ৩৭ শতাংশ ‘পাল্টা’ শুল্ক বসানো হবে। যদিও ৯০ দিনের জন্য সেটি স্থগিত রয়েছে, যদিও তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

ভারতের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ইস্ট এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপে রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পরিবহন খরচ বাড়বে, সময় লাগবে বেশি এবং ঝুঁকিও বাড়বে। এর ফলে অনেক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে, আর লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারেন।

তাই ব্যাংককের হাস্যোজ্জ্বল করমর্দনের আড়ালেও বাংলাদেশের জন্য এই পর্বটা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল কূটনৈতিক চাপে ভরা এক কঠিন সময়। ড. ইউনুস হয়তো বেইজিংয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন, কিন্তু তার কিছু মন্তব্যই হয়তো সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন