পূর্বাচল প্রকল্পে দুর্নীতি: হাসিনা-জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ রাজউকের একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে শেখ হাসিনা, জয়, পূরবী গোলদার, খুরশীদ আলম, কাজী ওয়াছি উদ্দিন, শহীদ উল্লা খন্দকার, সাইফুল ইসলাম সরকার, আনিছুর রহমান মিঞা, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী ও নায়েব আলী শরীফ—দুই মামলারই আসামি।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব কি না তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। সেদিনই তিনি ভারতে পালিয়ে যান। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে ২৬ ডিসেম্বর দুদক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প থেকে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। অথচ তাদের সবারই ঢাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট ছিল, যা গোপন রাখা হয়েছে। এতে করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, বরাদ্দের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন।
রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে যেসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার নামে ১০ কাঠার প্লট (নম্বর ০০৯), সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে ১০ কাঠা (প্লট নম্বর ০১৫), তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১০ কাঠা (প্লট নম্বর ০১৭), ছোট বোন শেখ রেহানার নামে ১০ কাঠা (প্লট নম্বর ০১৩), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে ১০ কাঠা (প্লট নম্বর ০১১) এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৯)।
এই ছয়টি বরাদ্দের ভিত্তিতে মোট ছয়টি মামলা করে দুদক। সব মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। ১২ জানুয়ারি পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। পরদিন শেখ রেহানা, রাদওয়ান এবং আজমিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল রেহানা, রাদওয়ান ও আজমিনার মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে, ১০ এপ্রিল পুতুলের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়।
দুদক বলছে, এই মামলাগুলোর মূল অভিযোগ হলো, ক্ষমতায় থেকে প্রভাব খাটিয়ে, তথ্য গোপন করে এবং নিয়ম উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এই প্লটগুলো বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে রাষ্ট্রের বিধি ও স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘিত হয়েছে।