চাঁদা না পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর
সেই কর্মকর্তার হাত-পা কেটে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা

মারধরের শিকার ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে ঈদের আগে চাঁদা (এয়ানত) না পেয়ে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে সড়কে ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, পেটানোর আগে চাঁদা না দেওয়ার ঘটনার জেরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ব্যাংকে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপকের রুমে ডেকে নিয়ে শাসানোর এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাধবদী পৌরসভার ইসলামী ব্যাংকের শাখাসংলগ্ন একটি গলিতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে পেটানোর ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার সহকর্মীদের দাবি, হামলাকারীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মী এবং স্থানীয় এক জামায়াত নেতার অনুসারী।
আহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মো. সেলিম মিয়া (৪৩)। তিনি ১৬ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করছেন। বর্তমানে তিনি মাধবদী পৌর শাখায় বিনিয়োগ বিভাগের (লোন সেকশন) প্রধান। শাখাটিতে তিনি পাঁচ মাস ধরে কর্মরত রয়েছেন। মারধরের শিকার হয়ে সেলিম বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাধবদী পৌর শাখার একাধিক কর্মকর্তারা জানান, ২৭ মার্চ সকালে ওই ব্যাংকে ছাত্রশিবিরের ৯ থেকে ১০ জন কর্মী চাঁদা নিতে আসেন। ঈদের আগমুহূর্ত হওয়ায় ওই দিন ভিড় ছিল ব্যাংকে। এ সময় ভিড় ঠেলেই চাঁদা তুলতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে তারা মো. সেলিমের ডেস্কে গেলে তিনি তাদের বলেন, ‘আপনারা এভাবে কালেকশন না করে এক জায়গায় বসেন।’
এ সময় তিনি একজন কর্মকর্তাকে চাঁদা তুলে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। বিষয়টি শিবিরকর্মীর পছন্দ হয়নি।
কর্মকর্তাদের বরাতে দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তীতে ওই দিন বিকালেই মাধবদী পৌর জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবিরের নেতা–কর্মীরা আবার ব্যাংকে আসেন। এ সময় ওই নেতা শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আবু সাঈদকে বলেন, তার কক্ষে যেন সেলিম মিয়াকে ডেকে আনা হয়। ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢোকার পর কোনো কিছু না শোনেই সেলিমকে আক্রমণ করে কথা বলতে থাকেন জামায়াত–শিবিরের লোকজন। একপর্যায়ে সেলিম মিয়ার হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা। এর প্রতিবাদ করেন ব্যবস্থাপক।
এ ঘটনার জেরেই সোমবার হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম মিয়ার। তিনি বলেন, ওই দিন হুমকি দেওয়া শিবিরের ১০-১২ জন নেতাকর্মী তার পথ রোধ করেন এবং টেনেহিঁচড়ে পাশের গলিতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে উপর্যুপরি কিলঘুষি, লাথি ও লাঠির আঘাত করতে থাকেন তারা। কয়েক ব্যক্তি দূরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখলেও তারা এগিয়ে আসেননি। একপর্যায়ে চিৎকার শুনে দুজন সহকর্মী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
এরপর সেলিম মিয়াকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখন নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা চলছে। সেলিম মিয়া জানান, হামলাকারীরা প্রায়ই চাঁদা তুলতে আসেন। তাই নাম জানা না থাকলেও তাদের চেনেন। তিনি বলেন, ‘দুজন সহকর্মী এগিয়ে না এলে আজ কী হতো, জানি না।’
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাতিমা আক্তার জানান, শরীরের বিভিন্ন অংশে মারধরের শিকার ওই ব্যাংক কর্মকর্তার চিকিৎসা চলছে। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এসব পরীক্ষার ফলাফল দেখে বোঝা যাবে আঘাতের মাত্রা কতটা।
ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ জানান, শিবিরের নেতাকর্মীরা চাঁদা না পেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি তিনজন জামায়াত নেতাসহ অন্তত ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা করায় তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিষয়টি হেড অফিস ও জোনাল অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং থানা জামায়াতের আমিরকে জানানো হয়েছিল। সব জায়গা থেকেই বলা হয়েছিল, ঈদের ছুটি শেষে বিষয়টি তারা দেখবেন। এর মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’
এ বিষয়ে মাধবদী পৌর জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর মাধবদী থানা জামায়াতের আমির জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই গাজার ঘটনার প্রতিবাদ নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে শুনেই ব্যাংকে গিয়েছি। বিষয়টি আগে আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করব আমরা।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।