ঈদ আনন্দ মিছিল: ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় ঢাকায় বর্ণাঢ্য উৎসব

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এক বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটিতে ব্যান্ড পার্টির সুর, ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি এবং মুঘল আমলের ইতিহাসকে তুলে ধরা নানা ধরনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদের জামাতের মাধ্যমে এই আয়োজনের সূচনা হয়। ক্বারী গোলাম মোস্তফার ইমামতিতে নামাজ আদায়ের পর সকাল ৯টার দিকে ডিএনসিসির আয়োজনে ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়।
মিছিলটি বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও অতিক্রম করে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এরপর এটি সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গিয়ে শেষ হয়, যেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হাতে ‘ঈদ মানেই সম্প্রীতি, ঈদ মানেই ঐক্য; ঈদ আসে সুখের বার্তা নিয়ে’—এমন সামাজিক ও ঐক্যের বার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। পাশাপাশি তারা ‘ঈদ মোবারক’সহ নানা আনন্দধ্বনি তুলে ধরেন।
মিছিলে সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, “অনেক বছর পর আমরা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল পুনরায় আয়োজন করতে পেরেছি। আগামীতে এই আয়োজনকে আরও বড় পরিসরে উদযাপন করব। এখন থেকে ঈদ মানেই শুধু ঘরে বসে টেলিভিশন দেখা নয়, বরং আমরা সবাই একসাথে ঈদ মিছিল করব, ঈদ মেলা উপভোগ করব এবং একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেব।”
তিনি আরও জানান, সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে ঈদ উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মিছিল শুরুর আগে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়, পাশাপাশি বাতাসা বিতরণ করে ডিএনসিসি।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মিছিলের সামনে ও পেছনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াটের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন ছিল। এছাড়া সংসদ ভবনের সামনে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়িও দেখা যায়।
আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, “এই ঈদ আনন্দ মিছিলের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী এক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরো এলাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছে যাতে নগরবাসী তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদে এই উৎসব উপভোগ করতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই মিছিলে অংশ নিতে পারেন। এমনকি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আসতে পারেন। ঢাকার ৪০০ বছরের পুরনো ঈদ উৎসবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।”
এছাড়া, বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলার আয়োজন করেছে ডিএনসিসি। প্রায় ২০০টি স্টল নিয়ে সাজানো এই মেলায় খাবার ও নানা রকম পণ্যসামগ্রীর দোকান রয়েছে, যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
শিশুদের জন্যও বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে ঈদের আনন্দ সবার মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।