গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়াতে ইসরায়েলের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় সেখানে সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আজ রবিবার (২ মার্চ) তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাবটি মানতে হামাস অস্বীকৃতি জানানোর পরেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে নেতানিয়াহু। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উইটকফের প্রস্তাব না মানায় ও স্থানীয় সময় শনিবার (১ মার্চ) যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তকে প্রস্তাব মানতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন হামাসের এক মুখপাত্র। এসময় গাজায় সহায়তা সরবরাহ পুনরায় চালু করতে ইসরায়েলকে বাধ্য করার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান মতানৈক্য দূর করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ছয় সপ্তাহের জন্য প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন উইটকফ।
শনিবার রাতে মুসলমানদের পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার (বসন্ত) উৎসব উপলক্ষে আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে ইসরায়েল সরকার।
উইটকফের দেওয়া ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে ইসরায়েল জানায় জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে। এরপরে হামাস জানায়, তারা ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি আছে। তবে অবশ্যই তা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।
চলতি সপ্তাহে মিসরে ইসরায়েল ও হামাসে মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু করার থাকলেও বেঁকে বসে ইসরায়েল।
ইহুদি রাষ্ট্রটি চাইছে প্রথম ধাপের মেয়াদই সাময়িকভাবে বাড়াতে। অন্যদিকে হামাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তির কথা রয়েছে। এ ছাড়াও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে সেনাপ্রত্যাহার করার শর্তও রয়েছে। এরপর তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি অবস্থায় মৃত জিম্মিদের লাশ ফেরত আনার কথা।
তবে ইসরায়েল জানিয়েছে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আর কোনো আলোচনা করবে না তারা।
কিন্তু, মেয়াদ বাড়ানোর পরও যদি আলোচনা ফলপ্রসূ না হয় তাহলে ইসরায়েল পুনরায় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হামাস।
এদিকে, প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রস্তাব না মানলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হামাসকে হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন। ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের মুখপাত্র বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ইসরায়েল আরেকবার তাদের নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইসরায়েলের এই নিষ্ঠুরতা বন্ধে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। আর এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে হঠাৎ হামলা চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। পাশাপাশি আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরের দিন থেকে গাজাজুড়ে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আকাশ ও স্থলপথে গত প্রায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, এই সময়ে হামাসের ১৭ হাজারের বেশি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই তথ্যের পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসনগরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; ধ্বংস হয়েছে অবকাঠামো, ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। পাশাপাশি লড়াই চলাকালে প্রয়োজনীয় ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে গাজাবাসীর।