Logo
Logo
×

সংবাদ

গোপন পণ্যের দাবি মেনে মেলার স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন সরাল বাংলা একাডেমি

আজম-আমিনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম

গোপন পণ্যের দাবি মেনে মেলার স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন সরাল বাংলা একাডেমি

ছবি: বাংলা আউটলুক

স্যানেটারি ন্যাপকিন গোপন পণ্য, তাই এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি জানায় ‘বেশকিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ’। আর তাদের সেই দাবি মেনে নিয়ে চলমান বইমেলা প্রাঙ্গণের স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন সরানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত একটি অবহিতকরণ পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।  এই নিয়ে ফেসবুকে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনারও সৃষ্টি হয়েছে।  

বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ওই অবহিতকরণ চিঠি সূত্রে জানা যায়, চলমান বইমেলা প্রাঙ্গণে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাণ আরএফএল গ্রুপের দুটি স্টলে স্যানেটারি ন্যাপকিন ছিল। সেই স্টলের মাধ্যমে নারীরা বেশ উপকৃতও হচ্ছিল। কিন্তু ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য আখ্যা দিয়ে ‘বেশকিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ’ তার প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি জানালে বাংলা একাডেমিও সেই দাবি মেনে নেয়। স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন সরিয়ে শিশু পণ্য তোলার নির্দেশ দেয়। 

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে স্টলে স্যানেটারি ন্যাপকিনের জায়গায় শিশু পণ্য তোলা সংক্রান্ত ওই অবহিতকরণপত্রে দেখা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক আজম এই সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। 

আরএফএল গ্রুপকে লেখা ওই পত্রে লেখা হয়, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্রান্ড স্টে-সেইফ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করে আসছে। প্রথম দিকে কোন সমস্যা না থাকলেও গত ১১-০২-২৫ তারিখের পর থেকে বেশ কিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ ন্যাপকিন কে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দেয় এবং এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধে দাবী জানায়। এরপর দিন আরো অনেক মানুষ প্রায় একই দাবী নিয়ে হাজির হয়। পরে বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসার সহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। গত কাল ১৩ই ফেব্রুয়ারি স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি এসে বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে। এদেশে এই মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গায় মব হচ্ছে এসব বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য উক্ত স্টল দুটি বন্ধ করা অত্যাবশ্যকীয়। আপনাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে আলোচনা সাপেক্ষে।

এমন অবস্থায় উক্ত স্টল দুটি আলোচনা সাপেক্ষে অন্য পণ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য জানানো হলো। আপনার বিশেষ সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।’

এই পত্রে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম মন্তব্যসহ স্বাক্ষর করেন। মন্তব্যে তিনি লিখেন, ‘এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। অতি দ্রুত এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ’ 

এদিকে, সোয়েব মাহমুদ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বইমেলা প্রাঙ্গণের স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিন সরানোর ঘটনায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ও পরিচালক সরকার আমিনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ছড়িয়ে পড়া ওই চিঠি এবং বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের আলাপচারিতার একটি স্ক্রিনশর্ট শেয়ার করেছেন।  ‘বইমেলা: জরুরি কাজ’ নামে হোয়াটসঅ্যাপের ওই গ্রুপের একটি স্ক্রিনশর্টে দেখা যায়, সরকার আমিন স্টল থেকে স্যানেটারি ন্যাপকিনের ছবি মুছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।  শুধু তাই নয়, বইমেলার মুক্ত মঞ্চের পাশে স্টলটি উল্লেখ করা সেটিতে আরও বলা হয়েছে, ন্যাপকিনের ছবি মুছে না দিলে মেলায় ওই স্টল দুটি খোলা রাখা যাবে না।  

সোয়েব মাহমুদের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘আমাদের একাডেমীতে দুইজন নতজানু প্রাণী আছে, আপনাদের কার কি দাবি বইমেলার কোন কোন স্টল নিয়ে প্লিজ দশ পনেরোজনের একটা মব তৈরী করে মেলা প্রাঙ্গনে আসেন, স্টলের সামনে শ্লোগান দেন, আজম আর সরকার আমিন এতটাই নতজানু এতটাই মেরুদণ্ডহীন যে মেনে নিবে। বইমেলা প্রাঙ্গনে জনস্বার্থে স্থাপিত স্যানেটারি ন্যাপকিনের স্টল ছিল। যা দ্বারা নারীরা উপকৃত হচ্ছিল। গত কয়েকদিন ব্যাপি মব সেখানে ঝামেলা করে। সরকার আমিন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে আদেশ দেন স্যানেটারি ন্যাপকিনের ছবি স্টল থেকে সরিয়ে ফেলতে। বৃহস্পতিবার আজম সাহেব স্টল সরানোর নির্দেশ দেন তখন উক্ত কোম্পানিটি একাডেমির মেইল আর মবের ভয়ে স্টল বাচ্চাদের সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিস্থাপনে রাজি হয় এবং আজম সাহেব সায় দেন। হাস্যকর না! 

এত নতজানু প্রশাসন, এত ভীত প্রশাসনের আমলে আপনি কেন আপনার দাবি, হোক অন্যায্য সেটা নিয়ে আসবেন না। 

আর আজম - আমিন, বাংলা একাডেমির দরোজায় লিখে দিন এখানে কতিপয় গণ্ডমূর্খ প্রশাসক বসেন, আপনারা অন্যায্য দাবি নিয়ে এলেও সেটা পুরণ হয়। 

এত নিরাপত্তাহীন বইমেলা পৃথিবীর বুকে বিরল, এই বইমেলা উপহার দেয়ার জন্য ডিজি আজমকে বিশাল ধন্যবাদ, সরকার আমিনের কাছে কৃতজ্ঞ।’

তবে ওই অবহিতকরণ চিঠি এবং হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপের কথোপকথনের বিষয়টি বাংলা আউটলুক স্বতন্ত্রভাবে যাছাই করতে পারেনি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন