'হাসনাতের পোস্টের' পর পরই আকাশপথের ভাড়া নিয়ে পরিপত্র জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম

আকাশপথের যাত্রীদের প্রকৃত ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে বিভিন্ন নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সিএ-২ অধিশাখা থেকে পরিপত্রটি জারি করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রুমানা ইয়াসমিন।
মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে-অনতিবিলম্বে গ্রুপ-টিকিট বুকিংসহ যেকোনো প্রকার টিকিট বুকিংকালে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের ফটোকপিসহ বুকিং সম্পন্ন করতে হবে। বুকিং প্রদানের তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর নামে টিকিট ইস্যু না হইলে এয়ারলাইন্স স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওই টিকিট বাতিল করবে।
এয়ারলাইন্স/ ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক গ্রুপ-বুকিং এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ব্লককৃত টিকিট আগামী সাত দিনের মধ্যে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং পাসপোর্টের কপিসহ বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স এরূপ টিকিটসমূহ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাতিল করবে। গ্রুপ-বুকিংয়ের ক্ষেত্রে টিকিটের প্রকৃত বিক্রয়মূল্য বিক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে এবং মন্ত্রণালয় তা জনগণকে জানাতে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, সব প্রকার এয়ার টিকিট অনলাইনে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিক্রয়কৃত টিকিটের মূল্য অনলাইনে এবং টিকিটের গায়ে প্রদর্শিত থাকতে হবে। এয়ারলাইন্স এবং ট্রাভেল এজেন্সিসমূহ আবশ্যিকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল বিধিমালা, ১৯৮৪ এর বিধি ২৮৯ এ বর্ণিত বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যথাযথভাবে ‘ট্যারিফ ফিলিং’ এর বিধান পালন করবে এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনুমোদিত ট্যারিফ বেবিচকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এয়ারলাইন্স কিংবা ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থা কর্তৃক বেবিচক বরাবর দাখিলকৃত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করা থেকে বিরত থাকবে। একই সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বাধ্যতামূলকভাবে যাত্রীকে এয়ারলাইন্স থেকে প্রাপ্ত মূল্য-সম্বলিত টিকিট প্রদান এবং টিকিট বিক্রয়ের রসিদ প্রদান করবে।
মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশনায় আরও জানায়, চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও কিংবা চাহিদার অতিরিক্ত টিকিট মজুদ করে অন্য এজেন্টের মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রয়ের কারণে টিকিটের দাম বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি-১৫ অনুযায়ী মূল ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ স্থগিত/বাতিল করা হবে।
বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় পরিপত্রে।
বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্স এবং ট্রাভেল এজেন্সিসমূহ ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে বিদেশগামী শ্রমিক/কর্মীদের জন্য বিশেষ বিমান ভাড়ার ব্যবস্থা করবে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ প্রবাসী কর্মীদের টিকিট ভাড়া কমানোর জন্য আগামী সাত দিনের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ সব এয়ারলাইন্স ও বোর্ড অব এয়ারলাইন্স রিপ্রেজেন্টেটিভস (বিএআর) পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ফেসবুক ইনবক্সে প্রতিদিন শত-শত প্রবাসী নিজেদের দুঃখ-কষ্টসহ নানা অভিযোগ জানান। একই পোস্টের কমেন্টে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে মেনশন দিয়ে তিনি লেখেন, ‘Dr. Asif Nazrul স্যার এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি বেইনসাফ করা হবে। ’
ওই পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘প্রতিদিন শত-শত রেমিট্যান্স যোদ্ধা আমাদের ইনবক্সে তাদের দুঃখ কষ্টের কথা জানান। অসংখ্য ভাই নিচের অভিযোগগুলো মেসেজটি বারবার করে পাঠাচ্ছেন। প্রবাসীদের বিষয়গুলো দ্রুত সময়ে অ্যাড্রেস করুন।’
প্রবাসীদের নিয়ে কয়েকটি এজেন্সির সিন্ডিকেট দ্বারা ভয়াবহ জালিয়াতি। বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি-
১. সৌদি রুটে গ্রুপ টিকিটের দাম বেড়েছে: আগে যেখানে গ্রুপ টিকিটের মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ছিল। এখন সিন্ডিকেট করে প্রতিটি টিকিট ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
২. ফ্লাইট সংখ্যা হ্রাস: আগে প্রতি সপ্তাহে ৯৮টি ফ্লাইট চলত কিন্তু এখন তা কমিয়ে মাত্র ৪৪টি করা হয়েছে।
৩. সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি: কিছু এজেন্সি আগাম বিনিয়োগ করে ৪ থেকে ৫টি এজেন্সির মাধ্যমে গ্রুপ টিকিট কৃত্রিম সংকটে রেখেছে। দ্রুত এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া জরুরি।
৪. ব্ল্যাঙ্ক সিট বুকিং দেখিয়ে সংকট আরও বৃদ্ধি: ফ্লাইটগুলোতে খালি সিট থাকা সত্ত্বেও, ব্ল্যাঙ্ক সিট দেখিয়ে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
৫. এয়ারপোর্টে যাত্রী হয়রানি: বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রীদের হয়রানি করে তাদের ফ্লাইট মিস করানো হচ্ছে, এরপর অন্য যাত্রী কন্ট্রাক্টে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতি কন্ট্রাক্ট ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
৬. ম্যানপাওয়ার ভিসা সংক্রান্ত দুর্নীতি: ম্যানপাওয়ার ভিসা অ্যাটেস্টেডের নামে BMET বন্ধ রেখেছে অথচ সৌদি-বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে কনস্যুলার জানান তারা এ বিষয়ে অবগত নন।
৭. অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে: কিছু এজেন্সি এবং BME এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজশে প্রতি ম্যানপাওয়ার ভিসার জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে। এই চক্র প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেও ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।