Logo
Logo
×

সংবাদ

ভয়ের এক নৈসর্গিক স্থান হাতিরঝিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ এএম

ভয়ের এক নৈসর্গিক স্থান হাতিরঝিল

মনোরম দৃশ্য ও জনতার সরব পদচারণার জন্য বিখ্যাত ঢাকার হাতিরঝিল ক্রমেই ভয় ও অপরাধ রাজ্যে পরিণত হচ্ছে।

ঢাকার অভ্যন্তরের এই মনোরম জায়গাটি পরিবার, দম্পতি এবং পর্যটকদের কাছে একটি পছন্দের গন্তব্য হলেও এলাকাটির অন্ধকার দিকটি ক্রমেই উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

হাতিরঝিল পরিদর্শন এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এর সৌন্দর্যের প্রশংসা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে শঙ্কার মিশ্রণের তথ্যই উঠে এসেছে।

রায়হান মাসুদ নামে বাড্ডার এক বাসিন্দা প্রায়ই তার ছোট সন্তানকে নিয়ে এই লেকে বেড়াতে আসেন।

কথার ফাঁকে তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার বাচ্চা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে আসতে পছন্দ করে, তাই আমি দিনের বেলা তাদের নিয়ে আসি। তবে এলাকাটি অনিরাপদ মনে হয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পর। আমরা প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের খবর পাই, তাই সন্ধ্যা নামার আগেই চলে যাই।’

কেউ কেউ আবার নিজের বাসার কাছের ভয়ের কথাও প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা তাদের পাড়ায় একটি চুরির ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলছিলেন, ‘মালিকের কাজ থেকে ফেরার আগে এক সন্ধ্যায় আমার সামনের বাড়িটিতে ডাকাতি হয়। আমরা তাদের চিৎকার শুনে দেখি বাড়িটি লুটপাট করা হয়েছে। সম্ভবত ধরা পড়ার ভয়ে চোর চক্র কিছু নিয়ে যাওয়ার আগেই পালিয়ে গেছে।’

হাতিরঝিলে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিশোর এবং মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা দলে দলে জড়ো হয়। তবে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

রাত ১১টা পর্যন্ত চলাচলকারী স্থানীয় বিক্রেতারা বলছেন, গভীর রাতে পরিবেশ বদলে যায়।

এক বিক্রেতার বলেন, ‘আমরা চলে যাওয়ার পর থেকেই মাদক সেবন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে শুরু করে।’

পুলিশের পর্যবেক্ষণ

হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ জানান, ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত অপরাধের ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিল চুরি ও ছিনতাইয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বেশিরভাগ অপরাধী মাদকাসক্ত, প্রায়শই বেকার এবং নিম্ন-আয়ের পরিবার থেকে আসা। এলাকার ঘনবসতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে এসব অপরাধ তারা সহজেই করে থাকেন।’

পুলিশ পরিদর্শক আহমেদ হাতিরঝিলে মাদক সেবনের ব্যাপকতার দিকেও ইঙ্গিত করেন। ‘এখানকার বেশিরভাগ মাদকাসক্ত গাঁজা সেবন করে, যার মধ্যে কিশোর, রিকশাচালক এবং এমনকি ধনী ব্যক্তিরাও রয়েছে যারা গাড়িতে করে অ্যালকোহল পান করতে আসেন। বড় মাদকের চালান বিরল হলেও ছোট আকারের চালান খুবই সাধারণ ঘটনা। আমরা যাদের ধরে ফেলি তাদের আটক করি, কিন্তু বড় আকারের গ্রেপ্তার সীমিত।’

গ্রেপ্তার ও জামিনের চক্র

আহমেদ আরও বলেন পুলিশ প্রতিদিন শত শত গ্রেপ্তার করছে। ‘সকালের দিকে আমাদের সেলগুলো মাদক সেবন বা ঘোরাঘুরির জন্য আটক ব্যক্তিদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। তবে তাদের বেশিরভাগই দ্রুত জামিন পেয়ে যান। যাদের মধ্যে আগে বড় ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরাও থাকেন। তাদের সহযোগীরা প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে।’

এলাকার দুর্বলতা স্বীকার করলেও পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হাতিরঝিলকে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেনি।

আহমেদ বলেন,‘আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করি, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।’

ছয় মাসের অপরাধ চিত্র

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে হাতিরঝিল এলাকায় ১৯টি খুন, চারটি ধর্ষণ, ২৩টি চুরি, ১৬টি আত্মহত্যা ও ছয়টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

যদিও প্রকাশ্য স্থানে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি, এই অপরাধগুলো প্রায়শই নিকটবর্তী বাড়িতে ঘটে, তদন্ত চলছে।

এসব ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করছি।

শান্ত নগরীর হাতিরঝিল ভয়ংকর অপরাধ এলাকায় রূপান্তর ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।

স্থানীয়রা জানান, আপাতত নিরাপত্তা সতর্কতার কারণে এর সৌন্দর্য অনেকখানি ম্লান হয়েছে। কারণ দর্শনার্থীদের এর সৌন্দর্য উপভোগ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন