‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলা
নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সদস্য ‘জড়িত’, নাগরিক কমিটিই করলো দোষীদের বিচারের দাবি
ছবি: সংগৃহীত
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি রাখাকে কেন্দ্র করে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ কর্মসূচিতে হামলা করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আসা লোকজন। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এরা কারা? তবে হামলায় শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব নামে একজনের জড়িত বলে ফেসবুকে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন। আবার ফেসবুকে Shahadat Farazi Sakib (ইঞ্জিঃ শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব) নামের আইডিতে গিয়ে তার সত্যতাও মেলে। দেখা যায়, সাকিব নিজের পরিচয়ে ফেসবুকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লিখেছেন। আবার জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ১৬ নভেম্বর যে ধানমন্ডি প্রতিনিধি কমিটি ঘোষণা করেছে, তার এক নম্বরের নামটিও এই শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের।
এদিকে, Shahadat Farazi Sakib আইডি থেকে বুধবার দুপুর ৩টার পর দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলা হয়
“পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা
‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশের দায়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশে দেশদ্রোহী উপজাতিয় সন্ত্রাসী সংগঠন পিসিপি ও বাম সংগঠনের সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলায় প্রায় ১৪ জন অধিক সাধারণ শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। বেশ কয়েকজন প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছে।”
একইদিন রাত ৮টা ২১ মিনিটে দেওয়া আরেক স্ট্যাটাসে Shahadat Farazi Sakib প্রশ্ন রাখেন, ‘ওরা কেন আদিবাসী হতে চায় তা একবারও কি জানতে চেয়েছেন?’
মজার ব্যাপার হলো, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকেই এই প্রতিবেদন লেখার সময় Shahadat Farazi Sakib এর পাবলিক করা আইডিটি লকড করে ফেলা হয়।
এদিকে, ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আর বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি নামের সংগঠনের হামলায় বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকেরা মারাত্মক আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দেখতে পেতাম না। মিছিল কিংবা সমাবেশে হামলা পতিত নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের কায়দার বহিঃপ্রকাশ।
হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফ্যাসিবাদ–উত্তর বাংলাদেশে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যারা হামলা করে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনতে হবে। ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
নাগরিক কমিটি অবশ্য তাদের প্রতিনিধি কমিটির সদস্যের ব্যাপারে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু বলেনি। বাংলা আউটলুকও এই ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নিতে পারেনি।
এদিকে, নির্ঝর আলম মুনওয়ার নামে একজন ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে ঘটনার পর স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি গ্রুপ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে । এরা কারা? এরা কাদের ক্যাডার বাহিনী? সেখান থেকে যদি ভুল না করি তাহলে এই ক্যাডার তো জাতীয় নাগরিক কমিটির নাকি? ধানমন্ডি এলাকার এই ক্যাডারের মত আরও কত এমন ‘ছাত্রলীগ’ পালে জানাক?”