টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন
টিউলিপের পাশে কেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি বেশ কিছু বিতর্কের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার খবর সামনে আসার পর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি চাপের মুখে রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও বিরোধী দল থেকে টিউলিপের পদত্যাগের দাবি উঠলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এখনো তার পাশে রয়েছেন। কেন তিনি এই সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন, তা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ সম্প্রতি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কিয়ার স্টারমার ও টিউলিপের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব রয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে লেবার পার্টির একজন এমপি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে আছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুর্নীতি তদন্তে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে টিউলিপের নামও উঠে আসায় ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তার সঙ্গে জড়িত যেকোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ যুক্তরাজ্যে বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। টিউলিপের সম্পদের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠছে—বিশেষত বিনামূল্যে পাওয়া ফ্ল্যাটগুলোকে ঘিরে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ নেতা ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, টিউলিপের সম্পদের উৎস পরিষ্কার করতে হবে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে এসব সম্পদের যোগসূত্র আছে কি না।
তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিকের নামে বা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আরও দুটি ফ্ল্যাট পাওয়ার তথ্য মিলেছে। এর একটি লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায়, যা ২০০৪ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফ বিনামূল্যে টিউলিপকে দেন। অন্যটি টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তির নামে; সেটিও বিনামূল্যে হস্তান্তর করেন মঈন গনি নামের এক বাংলাদেশি আইনজীবী, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
উল্লেখযোগ্য হলো, হ্যাম্পস্টেড এলাকার ওই ফ্ল্যাটটিকে টিউলিপ তার বিভিন্ন সরকারি ও আধা–সরকারি নথিতে নিজের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে এসেছেন। ২০১২ সালে ওয়ার্কিং মেনস কলেজের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরও তিনি এ ঠিকানায় বসবাসের তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র, বিনামূল্যে প্রাপ্ত ফ্ল্যাট, এবং যুক্তরাজ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা—এই সবকিছুই দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের অব্যাহত সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, অভিযোগের তীব্রতা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে এবং টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা এখন অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।