‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ ভাইরাস: নাচ যেখানে সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ
নির্দিষ্ট স্পন্দনে আন্দোলিত হচ্ছে সমস্ত শরীর। কখনও মন্থর গতিতে কখনও বা প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে রূপ নিচ্ছে এই নড়াচড়া। অথচ আপাতদৃষ্টিতেও একে খিচুনি বলে মনে হচ্ছে না। বরং প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে ফুটে উঠছে অসংলগ্ন নাচের মুদ্রা। অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও এটি আসলে একটি অসুস্থতার লক্ষণ। বলা হচ্ছে ডিঙ্গা ডিঙ্গা নামক এক নতুন ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এরকমটা হচ্ছে। চলুন, এই ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসের উৎপত্তি, জটিলতা এবং প্রতিরোধের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস
অদ্ভূত উপসর্গের ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা গেছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার একটি জেলা বুন্ডিবুগিওতে। নামটিও দেওয়া হয়েছে স্থানীয়ভাবে- ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’, যার অর্থ ‘নাচের মতো কম্পন’।
সংক্রামিত রোগীর শরীর এমনভাবে কাঁপতে থাকে যে, দেখে মনে হয় তিনি নৃত্য করছেন।
অস্বাভাবিক এই উপসর্গের জের ধরে বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের ঐতিহাসিক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। ১৫১৮ সালে ফ্রান্সের স্ট্রস্বার্গে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কয়েকশ লোক এমন নাচের রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এই নাচ থেকে ধীরে ধীরে প্রথমে ক্লান্তি অতঃপর চরম পর্যায়ে মৃত্যুও ঘটেছিল। স্থানীয় জনসাধারণের অনেকেই বিষয়টিকে আমলে নিলেও আসলে তৎকালীন অবস্থার সঙ্গে এই ভাইরাসের সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস সংক্রমণের কারণ
ভাইরাসের উৎপত্তি কিভাবে আর কিসের মাধ্যমে ছড়িয়েছে তার সুস্পষ্ট কোনো হদিশ এখনও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বের করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে- পরিবেশগত কোনো উপাদান থেকেই এর উদ্ভব হতে পারে। এটি ছোঁয়াচে কিনা তাও নিশ্চিত নয়, তবে চিকিৎসকরা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
এখন পর্যন্ত সংক্রমণটির যে উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়েছে, তা হলো:
সমস্ত শরীর জুড়ে অসংলগ্ন নড়াচড়া, যা আপাত দৃষ্টে নাচের মতো। এই নড়াচড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির নিজের শরীরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কখনও কখনও এই কাঁপুনি এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে হাঁটার জন্য পদক্ষেপ ফেলাই দুষ্কর হয়ে যায়।
সংক্রমিত ব্যক্তি চরম দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর দেখা দেয়। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে তা ক্রমশ প্যারালাইসিসের দিকে নিয়ে যায়।
কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে
এই সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বুন্ডিবুগিও জেলার নারীরা। কিশোরী থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্ক মহিলারা পর্যন্ত এই ভাইরাসের শিকার হয়েছেন। অল্প কিছু পুরুষদের মধ্যেও এই লক্ষণগুলো দেখা গেছে, তবে সংখ্যার দিক থেকে নারীদের তুলনায় তা অতি নগণ্য।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে- সদ্য আবিস্কৃত ভাইরাসটিতে এখনও অব্দি কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সর্বশেষ অবস্থা
স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে সংক্রামিত ব্যক্তিদের সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসার চেষ্টা করা হচ্ছে। অধিকাংশরাই প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।
স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে অনেকে ভেষজ ওষুধের সরণাপন্ন হচ্ছেন। কিন্তু জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে যে, ভেষজ ওষুধ এই রোগের চিকিৎসা করতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার প্রতি জোর আরোপ করা হচ্ছে। এলাকার জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানগুলো অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এতে প্রধান বার্তা হিসেবে থাকছে- ভাইরাসের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ; অতঃপর তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়সমূহ। এই কার্যক্রমে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশ নিচ্ছে সামাজিক সংগঠনগুলো।
পরিশিষ্ট
সংক্রমণের কোনো কারণ শনাক্ত না হওয়ায় ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ ভাইরাস গোটা উগান্ডা জুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকে নাচের মতো অদ্ভূত নড়াচড়া দেখা দিলেও চরম পর্যায়ে তা প্যারালাইসিসের দিকে ধাবিত হয়। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে যে, সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে অল্প সময়েই রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। আর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস সংক্রমণে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিষেধক তৈরির গবেষণার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হিসেবে দেশটিতে গণসচেতনা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।