বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা গতকাল শনিবার রাতে নিজের ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে একটি জমায়েতে এক ব্যক্তির হাতে একটি বন্দুক দেখা যাচ্ছে। ছবিটি শেয়ার করে তসলিমা ক্যাপশনে লেখেন, “বাংলাদেশি জিহাদিরা এখন মারণাস্ত্র হাতে নিয়েই তাদের মিছিল মিটিং-এ যাচ্ছে। ইউনুস-আসিফ গ্যাং কি জিহাদিদের নিরস্ত্রীকরণের কথা একবারও ভাববে? মনে হয় না।”
তসলিমার এই পোস্টকে উদ্ধৃত করে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে টিভি নাইন বাংলা শিরোনাম করেছে, “জঙ্গিদের হাতে চলে গিয়েছে বাংলাদেশ? বুকে ভয় ধরাচ্ছে তসলিমার পোস্ট” ।
যাচাই বাছাই না করেই প্রতিবেদনটিতে আরও লেখা হয়েছে, “ভয়ংকর ছবি ওপার বাংলার। জঙ্গিদের কবলে যাচ্ছে বাংলাদেশ? আর কোনও রাখঢাক নয়। প্রকাশ্যেই এবার অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি। সেই ছবি পোস্ট করলেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। প্রশ্ন তুললেন ইউনূস সরকারের ভূমিকা নিয়ে।”
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছে শান্তিসেতু। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছবিতে দেখানো বন্দুকটি আসলে খেলনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) স্থানীয় মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত এক ইসলামী সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন সৌদি আরবের নাগরিক, রাসুল (সা)-এর ৪৩তম বংশধর, সাইদ শায়েখ নাসির বিল্লাহ আল মাক্কী। তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে এলাকাবাসীর মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। তাঁকে ঘোড়ায় চড়িয়ে গার্ড অফ অনার দিয়ে সমাবেশস্থলে নিয়ে আসেন কয়েকহাজার ধর্মপ্রাণ জনতা। সেই সমাবেশের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, ঘোড়ায় সওয়ার অতিথির সামনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি কালো রঙের একটি রাইফেল সদৃশ অস্ত্র উঁচিয়ে ধরেছেন। ভিডিও থেকে এই দৃশ্যের স্ক্রিনশট নিয়ে শেয়ার করেছেন তসলিমা।
কিন্তু শান্তিসেতুর বিশেষ প্রতিনিধি ঘটনাটি যাচাই করে জানতে পেরেছেন, ভিডিওতে দৃশ্যমান অস্ত্রটি মারণাস্ত্র ছিল না। বরং এটি একটি খেলনা বন্দুক, যা শাহজাদপুর পুলিশ গতকাল শনিবার ওই ব্যক্তির কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে।
শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম ইসলাম জানান, ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর পর তাঁরা যুবকটিকে খুঁজে বের করেছেন এবং তার কাছ থেকে যে বন্দুকটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি একটি সাধারণ খেলনা বন্দুক।
ওসি আরও বলেন, পাশে মেলা হচ্ছে। ওই ছেলে সেখান থেকে ছোট বোনের জন্য ২২০ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের বন্দুকটি কিনেছিল। এরপর হুজুরকে দেখতে গিয়েছিল। ভিড়ে হাত থেকে খেলনাটি পড়ে যাওয়ায় তুলে ওপরে নিয়েছিল, যাতে ভেঙে না যায়। আমরা তাকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। খেলনাটি এখন থানায় আছে। খোঁজ করে অন্য কোনো মোটিফ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ছেলেটির নাম নাইমুল ইসলাম (২২)। বাবার নাম ইউসুফ আলি। নাইমুল স্থানীয় বেলতৈল গ্রামের বাসিন্দা।
কামরুজ্জামান ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমি ওকে গতকাল ডেকে আড়াই ঘণ্টার মতো কথা বলেছি। সে জানিয়েছে আওলাদে রাসুলের আগমন উপলক্ষ্যে তার বন্ধু ছাত্রদের সাথে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যায়। এর কিছুক্ষণ আগে মাহফিল উপলক্ষে আয়োজিত মেলা থেকে তার ছোট বোন সুমাইয়ার (৮ বছর) জন্য একটি খেলনা বন্দুক কিনেছিল সে। শায়েখ নাসির বিল্লাহ এসে পৌঁছানোর পর তাঁর সাথে হাত মেলানোর জন্য কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে নাইমুল। সেই মুহূর্তে ভিড়ের চাপে ঘটনাস্থলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে প্লাস্টিকের বন্দুকটি ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় সেটিকে এক হাত দিয়ে উপরে তুলে রাখে সে। তখন সাংবাদিকদের ভিডিওতে এটি রেকর্ড হয়।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল ইসলাম এবং তার খেলনাটির দুটি ছবিও পাঠিয়েছেন এই প্রতিবেদককে।
অগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামি সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে এ রাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলিতে। একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট করছেন তসলিমা নাসরিন নিজেও। তাঁর এই ফেসবুক পোস্ট তাতে নতুন সংযোজন।
সূত্র: শান্তিসেতু