ব্রেক করা নিয়ে তর্কের জেরে সংবাদকর্মী-বাসচালককে বিএনপি নেতার মারধর, দল থেকে বহিষ্কার
বিএনপি নেতা ইকবাল (গোল চিহ্নিত)। ছবি: সংগৃহীত
হঠাৎ ব্রেক কষা নিয়ে বাস বাসচালকের সঙ্গে যাত্রীদের তর্ক হয়। আর এই তর্কের জেরে নারায়ণগঞ্জের এক বিএনপি নেতা কর্মী-সমর্থকদের ডেকে এনে বাসটি থামিয়ে চালককে মারধর করেন। এতে চালক আহত হন। এসময় বাসও ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে, বাস ভাঙচুর নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের কর্মীরা ফ্যাক্টচেকার সাংবাদিক মিনহাজ আমানকেও চড়থাপ্পড় মেরেছেন৷ ইকবাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলরও।
সংবাদকর্মী-বাসচালককে মারধর করা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই বহিষ্কার করা হয়।
চিঠিতে ইকবাল হোসেনকে উদ্দেশ করে লিখা হয়, আজ মিনহাজ আমান নামে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে আপনি আপনার দলবল নিয়ে শারীরিকভাবে আাঘাত এবং লাঞ্ছিত করেছেন যা সম্পূর্ণরূপে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ঘৃণ্য অপরাধ। এ ধরনের গুরুতর কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। আহত বাস চালকের নাম নয়ন।
বিএনপি নেতার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
মিনহাজ বাংলা আউটলুককে জানান, তিনি এবং বিএনপি নেতা ইকবাল আসিয়ান নামের বাসে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ব্রেক কষলে গাড়ির যাত্রীদের সঙ্গে তর্ক বাধে চালকের। এসময় বাসে থাকা ইকবাল বিরক্ত হয়ে বাসচালককে ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে বলেন। এর উত্তরে চালক উল্টো তাকেই (ইকবাল) গাড়ি চালাতে বলেন। পরে তিনি তার লোকজনকে খবর দেন।
মিনহাজ বলেন, ‘আমরাও ড্রাইভারের ব্যবহারে বিরক্ত হচ্ছিলাম।’
আর বিএনপি নেতা ইকবাল বলেন, ‘আমি তাকে বলি সতর্ক হয়ে চালাতে। আর সে আমাকে বলছে, পারলে আপনি চালান। আমি এক পর্যায়ে বলি, সাইনবোর্ড রাখ তোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। ও আমাকে বলে “এমন ফাপড় অনেকেই দেয়...” আমার চিন্তা ছিল কান ধরিয়ে দিয়ে ছেড়ে দেব। কিন্তু পাবলিক তো আর এটা বুঝে না।”
আহত চালক নয়ন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ঢাকার গুলিস্তান থেকে গাড়ি চালিয়ে আসছিলাম। সায়েদাবাদে জ্যামে থাকার সময় গাড়ির সামনে একটি মোটরসাইকেল এসে থামে। এসময় দ্রুত ব্রেক করায় গাড়ির যাত্রীদের ঝাঁকি লাগে। এ সময় সেই নেতা বলেন, “কী রে, কেমনে গাড়ি চালাস?” এ নিয়ে তর্ক হলে তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। গাড়ি সানারপাড় আসার পর ২৫-৩০ জন কর্মী এসে আমার গাড়ি ভাঙচুর করে ও আমাকে মারধর করে। আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় গ্লাস ভেঙে আমার মাথা কেটে যায়। পরে তার কাছে মাফ চেয়ে আমি নিস্তার পাই। বিষয়টা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যেটা বলবে সেটাই করব।’
এদিকে, গাড়ি থামিয়ে যখন চালককে চড়থাপ্পড় দিচ্ছে এবং বাসের গ্লাস ভাঙচুর করছে তখন ইকবালের কাছে মিনহাজ প্রশ্ন তোলেন, কেন খামাখা গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
সে সময় ইকবালের কর্মীরা তাকেও চড়থাপ্পড় মারে। এই ব্যাপারে বিএনপি নেতা ইকবাল বাংলা আউটলুককে বলেন, ‘আমি বোঝার সাথে উনাকে ( মিনহাজ) জড়িয়ে ধরি। আর যে তাকে মেরেছে তাকে তাড়িয়ে দেই। আমার জানা ছিলো না তিনি সাংবাদিক। এমনকি তার সাথে আরও ২৫ মিনিট ছিলাম তিনি বলেননি যে সাংবাদিক। আমি তার কাছে এক যাত্রী হিসেবে সরি হয়েছি। পরে জানছি তিনি একজন সাংবাদিক।’
ইকবাল বলেন, ‘গাড়িতে তার (মিনহাজ) সঙ্গে আরও কথা হয়। তিনি (মিনহাজ) জানান তিনি জহির উদ্দিন স্বপন ভাইয়ের পরিচিত। আমিও বলি স্বপন ভাই আমার শ্রদ্ধাভাজন।’
ঘটনা প্রসঙ্গে মিনহাজ লিখেছেন, ‘আমি মারাত্মক আহত বা এমন কিছু না। আমাকে র্যান্ডম চড় থাপ্পড় দেয়া হয়েছে। আমি জানতে চেয়েছি কে আমাকে থাপ্পড় দিল, সেই নেতা বললেন, তার দুই টাকার কামলা কর্মীদের পরিচয় জেনে লাভ কি। তার পরিচয় তিনি বিএনপি নেতা।’
মিনহাজের বন্ধু হাসান আল মাহমুদ ঘটনার বিষয়ে তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চালককে পিটানোর পরও ইকবাল তার একটা ভিজিটিং কার্ড চাকলকে দিয়ে বলসে, “তোর বাপেগরে জানাইস কে পিটাইসে।” বিএনপি যদি এ ঘটনার যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এর জের টানতে হবে। ইকবাল হোসেন জানে না কার গায়ে হাত তুলসে। কয়েক হাজার মানুষ রক্ত দিয়ে দেশকে এজন্য আওয়ামী সন্ত্রাস মুক্ত করে নাই যে বিএনপি এখন দেশে সন্ত্রাসের রাজ কায়েম করবে। বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে আমরাও জানতে চাই, ইকবাল হোসেন কে?’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর আলম বলেন, বাসযাত্রীর মাধ্যমে চালক আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। এখন পর্যন্ত কোনো ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগও করতে আসেনি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।