গুম ও হত্যার জন্য ক্ষমার নামে দায়মুক্তি নয়, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও দোষীদের শাস্তির দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ পিএম
জোরপূর্বক গুম ও হত্যার জন্য ক্ষমার নামে দায়মুক্তি নয়, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। আজ বৃহস্পতিবার মায়ের ডাক সংগঠনের পক্ষে সানজিদা ইসলাম তুলি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমরা গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এই বিবৃতি প্রদান করছি। রাজধানীর কাওরান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোরপূর্বক গুম ও খুনের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সানজিদা ইসলাম তুলি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘ এক যুগের সংগ্রাম এরপর কিছু বাহিনী অন্তত পক্ষে শিকার করছে তারা জোরপূর্বক গুম খুনের সাথে জড়িত ছিল। আমরা, জোরপূর্বক গুমের শিকার পরিবারসমূহ এবং মানবাধিকার কর্মীবৃন্দ জোরালোভাবে মনে করি যে শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রিয়জনদের জোরপূর্বক গুম বা হত্যার পেছনে যারা জড়িত, তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আমরা বারবার আমাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার জন্য বিচার দাবি করে আসছি কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
তাদের দাবিগুলো হলো:
১। জোরপূর্বক গুমের শিকার সকল ব্যক্তিকে বাংলাদেশের আয়নাঘর' এবং এ ধরনের সকল বন্দিশালাসমূহ থেকে নিঃশর্ত মুক্ত করতে হবে এবং তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের শেষ পরিণতি কী হয়েছে, তা পরিবারের কাছে অবিলম্বে জানাতে হবে।
২। জোরপূর্বক গুমের সাথে জড়িত প্রমাণিত সকল রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যক্তিবর্গকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত এবং স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করে। দোষীদের প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। পুলিশ ও র্যাব এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এই জোরপূর্বক গুম খুনের সাথে জড়িত থাকলেও এখনো সত্য শিকার করেনি। সেনাবাহিনীর স্পষ্ট স্বীকারোক্তিমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩। সকল আয়নাঘর' ধ্বংস করতে হবে এবং এর স্থানে একটি একটি করে জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে যাতে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে ভবিষ্যতে আর কোনো জোরপূর্বক গুম, খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত না হয়। এই জাদুঘরটি জোরপূর্বক গুম ও নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতিরক্ষার জন্য উৎসর্গ করা হোক।
সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে করতে চাই জোরপূর্বক গুম ও হত্যার জন্য শুধুমাত্র ক্ষমা চেয়ে দায়মুক্তি দাবি করা যায় না। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই একমাত্র ন্যায়বিচারের পথ।
তাদের প্রশ্ন:
জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের প্রকৃত অবস্থা কী।
জোরপূর্বক জম হয়ে যাওয়ার পর তাদের সাগে কি ঘটেছে। তার সুস্পষ্ট বিবরণ এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর স্লেপারওয়ার্ক কোথায়?
জোরপূর্বক গুম সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কবে বিচার কাজ শুরু করবে? অনুসন্ধানের পাশাপাশি কবে থেকে যথাযথ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচার কাজ শুরু হবে?
আমরা মনে করি, এই ক্ষমা এক ধরনের কৌশল, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের দাবি থেকে পিছু হটব না।