Logo
Logo
×

সংবাদ

র‌্যাবের 'কসাই' খ্যাত মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচারের দাবি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম

র‌্যাবের 'কসাই' খ্যাত মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচারের দাবি

‌'মানবতাবিরোধী অপরাধে মহিউদ্দিন ফারুকী বর্তমানে গ্রেপ্তার আছেন। র‌্যাবের কসাই নামে পরিচিত এই ফারুকীর জঘন্য অপরাধের বিচার না হলে দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হবে।' আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে 'ক্রসফায়ারের কারিগর র‌্যাবের কসাই খ্যাত র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-২ এর সাবেক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীর ফাঁসি চাই' ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা এসব কথা বলেন।

সরকারবিরোধী লেখালেখির কারণে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হোন কৃষিবিদ ফসিউল আলম। তিনি বলেন, উত্তরায় আমার অফিস থেকে বের হলে আমাকে মহিউদ্দিন ফারুকী আটক করে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০-১১টার দিকে আমাকে জিজ্ঞেস করে 'তুই কেন সরকারের বিরুদ্ধে লিখিস?' তারপরে আমাকে ছোট একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।

নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। শক দেওয়ার কারণে আমার ব্রেনের সামনের অংশ শুকিয়ে গেছে। আমার হাতের ওপর বুট পরে লাফিয়েছে। আমি হাত দিয়ে কিছু খেতে পারতাম না। আমার বৃদ্ধ বাবা রাস্তায় রাস্তায় আমাকে খুঁজেছে। আমরা জানি না গুমের শাস্তি কী? আমরা ফারুকীর ফাঁসি চাই।

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হুমায়ূন কবির ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর একটি মামলার হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে লঞ্চ থেকে তাকে ধরে নিয়ে গুম করা হয়। তিনি বলেন, আমি ব্লগে সরকার বিরোধী লেখালেখি করতাম। কিন্তু রাষ্ট্র বিরোধী কোনোকিছু লিখি নাই। একটি মামলার হাজিরা দেওয়ার সময় লঞ্চ থেকে কয়েকজন লোক চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। তাদের দুইজন পিস্তল ধরা ছিল, আরেকজন আমার কোমরের বেল্ট ধরেছিল। তারা একটা গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে অজানা এক রুমে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে একজন আমাকে চা অফার করে। কিন্তু আমি সেটা খেতে চাইনি। পরে তারাও অনুরোধ করে যে আপনি চা খেলে আমরাও চা খেতে পারব। চা খেতে রাজি হওয়ার পর একজন বলে, এই ওরে লাল চা দে। এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখের চাপা বরাবর লাথি মারে। এতে আমি চোখ বাঁধা অবস্থায় চেয়ারসহ পরে যাই। আমার একটি দাঁত ভেঙে যায়। তারপর আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার এক কানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। ফলে আমি এক কানে এখনও শুনতে পাই না। এর অনেকদিন পরে ৬ তারিখ মেবি, আমাকে একটি জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে অনেক বাস কাউন্টার ছিল। ছেড়ে যাওয়ার পরপরই একটি গাড়িতে আমি মহিউদ্দিন ফারুকীকে দেখি। ওই গাড়িতে র‌্যাব-১০ লেখা ছিল। তখন বুঝতে পারি আমাকে র‌্যাব গুম করে রেখেছিল। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর ফলো করছিল তারা। এরপর আমি একটু জোরে হাঁটার চেষ্টা করি। তখন তারা এসে বলে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরপর আমাকে বলা হয় এতদিন যা হয়েছে, সব ভুলে যান। তারপর আমাকে আবারও রিমান্ডে দেওয়া। আমি এখন পর্যন্ত ২০৮ বার হাজিরা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাও করেছি। মহিউদ্দিন ফারুকী আমার কাছ থেকে তখন চার লাখ টাকা নিয়েছে, ল্যাপটপ-মোবাইল নিয়েছে। বাসা থেকে আরও টাকা নিয়েছে।

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বই প্রকাশ করার জন্য দুই দফায় ২০১৮ সালের ২ আগস্ট ও ২৭ অক্টোবর গুমের শিকার হওয়া তৎকালীন শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাজন ব্যাপারী বলেন, আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। অনেকবার ক্রসফায়ারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমাকে কনডেম সেলে আটকে রাখা হতো। কীভাবে দিন গিয়েছে বলতে পারতাম না। ফজরের আজানে 'আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম' শুনলে বুঝতাম আমার আরেকটা দিন গিয়েছে। কবে আমাদের মেরে ফেলা হবে, কোথায় লাশ পাওয়া যাবে, কেউ চিনবে কি না জানি না। এই কারণে আমরা আমাদের পরনের গেঞ্জি-ট্রাউজারের নিচে বাসার কারও ফোন নম্বর আর আমার নাম লিখে রাখতাম। যাতে আমাদের লাশ তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে। 

একই কারণে ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট গুমের শিকার হন ওয়াসিম ইফতেখারুল হক। তিনি বলেন, ম্যাডামকে (বেগম খালেদা জিয়া) নিয়ে বই লেখার কারণে আমাকে গুমের শিকার হতে হয়। গ্রেপ্তার দেখানোর পর আমার নামে আরও তিনটি মামলা দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, আমরা ফারুকীর বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই। সে তার আইনি অধিকার পাক, তাতে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তার বিচার করতে হবে। আর লক্ষ্য রাখতে হবে সে যেন পালিয়ে যেতে না পারে।

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গুমের শিকার রেজওয়ানুল হক শোভন, ড. এনামুল হক মনি, আ. জাবীদ বাবু প্রমুখ।

এছাড়া 'কসাই' মহিউদ্দিন ফারুকীর হাতে গুমের শিকার হন ২০১৮ সালের ২রা আগস্ট মেহেদী আরজান ইভান, ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট রেজওয়ানুল হক শোভন, জাহিদ হাসান, এস এম সাগর, আবুল আরাফাত অপু মালিক, নাসিমুল গনি খান, সোকয়াড্রেন লিডার (অব.) ওয়াহিদুন্নবী, সাব্বির হোসেন, হাবিব সাত্তার সবুজ প্রমুখ।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন