সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির
স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবের যে পজিশন ছিল, জামায়াতের সেম পজিশন ছিল
সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়কার একটি চিত্র।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের যে পজিশন ছিল, জামায়াতের সেম পজিশন ছিল।
সম্প্রতি লন্ডনে বাংলা আউটলুককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন জামায়াতের আমির। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের।
সাক্ষাৎকারে জুলকারনাইন সায়ের জামায়াতের আমিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর যে ভূমিকা ছিল, এই ভূমিকা বিভিন্নভাবে আমরা সামনে এনেছি। এখন একটা নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশে আছে। এই প্রজন্মের সামনে আপনারা জামায়াতের অবস্থান কীভাবে ব্যাখ্যা করতে চান। এবং জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনো প্রকার গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না। অথবা এরকম কোনো কিছু তারা সমর্থন করেছে কি না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?’
উত্তরে জামায়াতের আমির বলেন, এ বিষয়ে আমার মতামত শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই। ওনার যে পজিশন ছিল, জামায়াতের সেম পজিশন ছিল। ওনার পজিশন ছিল ওনি অ্যারেস্ট হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে ডিক্লিয়ার করেন নাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, কারণ এটা ওনার রাইটস ছিল, ওনি পুরো পাকিস্তান শাসন করবেন। ওনার দল উইন করেছে। ওনি পুরো পাকিস্তান শাসন করবেন। ওনি লাড়ই করেছেন তার রাইট তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। জামায়াতে ইসলামী সেই দাবি জানিয়েছে সবার আগে যে, নির্বাচিত দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। তারপর তিনি অ্যারেস্ট হয়ে গেলেন, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা সরাসরি দিয়ে যেতে পারেননি। এটা কীভাবে হয়েছে এটা নিয়ে কথা আছে। আমি সেই চ্যাপ্টারে যাচ্ছি না।
আর্মি যখন ক্রাকডাউন করলো এই দেশে, ২৫ তারিখেই তো, ওনি অ্যারেস্ট হলেন, আমরা দেশের ভেতরে বন্দি হয়ে গেলাম, পড়ে গেলাম, সে সময় সামরিক শাসন চলছে। আমাদের পক্ষে ভারতে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বলবেন কেন ছিল না, ভাসানী সাহেবের নামের আগে শুধু মাওলানা ছিল, চারদিনের বেশি ওনি কলকাতায় থাকতে পারেননি। জান নিয়ে ওনি পালিয়েছেন, আবার পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসছেন। কারণ তার নামের আগে মাওলানা আছে। ওনি তো জামায়াতে ইসলামী করতেন না, এমনকি কোনো ইমলামি দলও করতেন না। র্যাদার একটা বাম ওরিয়েন্ট দল করতেন। ন্যাপ করতেন ওনি। সেই ন্যাপের লিডার হয়ে তাকে শুধু মাওলানা হওয়ার কারণে ভারত অ্যাকসেপ্ট করেনি। তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে অ্যাকসেপ্ট করত? ইসলামী দলকে করত? শুধু জামায়াতে ইসলামী না তো, কোনো ইসলামী দল তো যায়নি। সকল ইসলামী দল তখন কী করবে। তাহলে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংশ তখনও। তারা এক পাকিস্তান, ইউনাইটেড পাকিস্তানের পক্ষে তাদের মত ব্যক্ত করেছেন। এখন ধরেন, মত ব্যক্ত করা অপরাধ না। কিন্তু কোনো অপরাধ করছে কি না। কাউকে খুন করেছে কি না, সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে, আগুন জ্বালিয়েছে কি না। মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে কি না। আমরা মনে করি, এটা করে নাই। বলতে পারেন, আপনি মনে করেন কেন? মনে করি, কারণ শেখ মুজিবু সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় ২৪ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। সেগুলো বাছাই করে মাত্র ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী করা হয়েছে। ওই ২৪ হাজারেও জামায়াতের নেতা নাই, ১৯৫ জনেও জামায়াতের নেতার নাম নাই। ৪২ বছর এই নিয়ে কোনো কথা নাই।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জামায়াতে ইসলামী একটা সরকারের পার্ট হয়ে দুটি মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সফলভাবে, সত্যতার সাথে, দক্ষতার সাথে চালাইলো। যখন একটা পরিবর্তন এসে গেল, চমকে গেল এটা দেখে। সেই সময় তারা নড়েচড়ে উঠলেন। জামায়াত ইসলামকে তাদের এখন বিচার করতে হবে। এই শুরু হলো। ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনের ইশতেহারে বললেন, তারা যদি ক্ষমতায় যান তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। করেন, অসুবিধা নাই। যুদ্ধাপরাধী কারা সেটা তো শেখ মুজিবুর রহমান ফাইনালাইজ করে গেছেন। পারলে তাদের বিচার করেন দেখি। পাকিস্তানে কেউ জীবিত থাকলে তাদের বিচার করেন। যদি আপনি তাকে মরার পর বিচার করতে চান করেন। এখন যদি আপনি বাংলাদেশের কাউকে নতুন করে যুদ্ধাপরাধী বানান, তাহলে হাজার প্রশ্ন উঠবে। তখন কেন এটা লিস্টেড হয়নি। থানাগুলোতে কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল না। তখন কি জামায়াত আদৌ কোনো ফ্যাক্টর ছিল যে জামায়াতের ভয়ে কেউ কোনো মামলা করে নাই?
তখন তো জামায়াত এই পজিশনে ছিল না। এমনি জামায়াতে ইসলামীর লোকদের নাগিরত্ব হরণ করা হলো। কিন্তু সেই নাগিরত্ব যাদের হরণ করা হলো তাদের বিরুদ্ধেও তো কোনো মামলা দেওয়া হলো না। যে ৪৬ জনের নাগিরত্ব হরণ করা হলো তাদের মধ্যে তো জামায়াতের দুজন ছিল, তাদের নামেও তো মামলা দেওয়া হলো না।
৪২ বছর পর এই মামলার গ্রাউন্ড কীভাবে তৈরি হলো। কোথায় থেকে আসল। এরপরও আমি বলব, একজন সিনসিয়ার নাগরিক হিসেবে আমি বলব, যদি সন্দেহাতীতভাবে ওই সময় কারও কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়, তিনি তার শাস্তি পাক। যদি জামায়াত সেই সময় কোনো ভুল করে, এটাও যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া, আমি আমার জায়গা থেকে মাফ চাইবো। আমার কোনো সমস্যা নাই। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হতে হবে।
এর পরের চ্যাপ্টার , ১৯৯২ সাল থেকে তো মানুষ আমাদের দেখতেছে। আমরা তো অন্য কোনো দেশ থেকে আসি নাই। প্রসঙ্গক্রমে আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমাদের সাথে তো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা আছেন এই সংগঠনে। যারা সরাসরি ফাইট করেছেন তারা তো আছেন, তারা কীভাবে এখানে আসল? সব দেখে আসল। নিশ্চয় জামায়াতের মধ্যে ভালো কিছু একটা দেখেছে, সে কারণে এখানে এসেছে। যে সংগঠনকে অনবরত গালি দেওয়া হচ্ছে, চাপ দেওয়া হচ্ছে, বিপদে রাখা হচ্ছে, খুন-গুম করা হচ্ছে। আগেও তো আমাদের ওপর এমন হয়েছে, তো এই সংগঠনে আছে কেন? নিশ্চয় এই সকল চ্যালেঞ্জের পরও ভালো কিছু পেয়েছে বলে লোকেরা এখানে আসে।
এই সবকিছু একদিকে রাখেন। একটা সিঙ্গেল উদাহরণ কেউ কি দিতে পারবে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ইগনোর করে, অপমান করে কথা আমাদের নেতৃত্বের পক্ষে থেকে বলেছে। কথা তো রেকর্ড হবে তারা কি বলেছে। কিন্তু এখন সমর্থক কী চিৎকার দিল সেটা বড় কথা না।
বড় কথা হলো দলের নেত্রীয়স্থানীয় ব্যক্তিরা যদি কোনো কিছু বলেন, ভালো হোক, মন্দ হোক, এটা রেকর্ড থাকতে হবে। এটার সামাম্য কেউ রেকর্ড দেখাতে পারবে? আমরা তো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে ওন করেছি, বুকে ধারণ করেছি সম্মান-শ্রদ্ধার সাথে। এবং এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যদি আল্লাহর মেহেরবানিতে জীবন দেওয়ার সুযোগ হয় আমাদের, তাহলে দেব স্বাধীনতা রক্ষা জন্য। আমরা তো সেটা ওন করি। যদি কেউ মনে করে আমাদের দ্বারা কোনো কষ্ট পেয়েছে, আমরা দেখবো এটা কীভাবে ডি-ফিউজ করা যায়।