কুইক রেন্টাল আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তির বিধান অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আজ (১৪ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার দায়মুক্তির বিধান চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলের শুনানি শেষে গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সিনথিয়া ফরিদ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’- এর ৯ ও ৬ (২) ধারা অনুযায়ী, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন বা মামলা করা যাবে না। এই ধারা দুটি চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট করা হয়।
রিটে বলা হয়, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক খরচ আর অনিয়মের কারণেই বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। অথচ সেই অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আইন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব অনিয়মের কোনো বিচারও চাওয়া যাবে না-এটা জনস্বার্থবিরোধী ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্টে বেঞ্চ সোমবার রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে আজ হাইকোর্ট রায় দেন
ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের জানান, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ সাধারণত কুইক রেন্টাল আইন নামে পরিচিত। আইনটির ৬-এর (২) উপধারা ও ৯ নম্বর ধারার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছি।
তিনি বলেন, ৬ এর ধারায় বলা আছে, জ্বালানিমন্ত্রী তার একক বিবেচনায় কোনো একক ব্যক্তি বা কোম্পানির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারবেন। এখানে মন্ত্রীর একক বিবেচনায় যাকে ইচ্ছা, যত টাকায় ইচ্ছা চুক্তি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আর আইনটির ৯ নম্বর ধারায় বলা আছে, কাকে চুক্তি দেওয়া হয়েছে, কত টাকার চুক্তি করা হচ্ছে, এসব ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে আদালতে শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। দুটি ধারাই সংবিধানের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে এই আইনজীবী অভিযোগ করেন, ধারা দুটির অপব্যবহারের ফলে বিগত সরকারের আমলে কুইক রেন্টালের পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৬(২) ধারা অনুযায়ী বেশ কিছু কুইক রেন্টাল আইন স্থাপন করা হয়েছে। কুইকরেন্টাল আইন অনুযায়ী বিদ্যুত সরবরাহ করুক আর না করুক তারা টাকা পাবে। এই ধারা মূলত লুটপাটের বিশেষ বিধান আইন হয়ে গেছে। এজন্য আদালত ৬(০২ ধারাাকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। আইনের এই ৬(২) ধারায় অধীনে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো সরকার পুনমূল্যায়ন করতে পারবে এবং যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাদের স্বার্থে চুক্তির শর্ত পরিবর্তন করতে পারবে, দরকষাকষি করতে পারবে। এখন সরকার পুনমূল্যায়ন করে যারা বসে বসে টাকা নিচ্ছে তাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারবে।