গুমের ঘটনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে কমিশন
র্যাবের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ, আলামত নষ্ট করা হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
গুমের আলামত নষ্ট করা হচ্ছে অভিযোগ করে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা ভুক্তভোগীদের তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে অফিসে গিয়ে পরিদর্শনকালে গোপন বন্দিশালার দেয়াল ভাঙার আলামত পেয়েছেন। ভবিষ্যতে যারা আলামত নষ্ট করবেন তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও আলামত নষ্ট করার কারণে গুমে সম্পৃক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে। আজ মঙ্গলবার গুলশানে কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্যরা এসব অভিযোগ করেন।
এই কমিশনের তরুণ সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, কমিশন তার কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে যারা গুমের আলামত নষ্ট সাথে যুক্ত হবেন তাদেরও গুমের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত করা হবে।
ড. নাবিলা ইদ্রিস জানান, এখন পর্যন্ত গুমের চারটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক কারণে বিশাল সংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়েছে। প্রমাণিত না হলেও জঙ্গি সন্দেহে বড় একটা সংখ্যক নেওয়া হয়েছে, এছাড়া ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক কারণেও গুম করা হয়েছে।
কমিশনের আরেকজন সদস্য সাজ্জাদ হোসেন জানান, কমিশনে প্রাপ্ত ১ হাজার ৬০০ এর ওপর অভিযোগ মধ্যে অন্তত ৪০০ অভিযোগ তারা বিশ্লেষণ করেছেন। ৩৮৩ ঘটনার মধ্যে ১৭২ ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ বা ডিবির বিরুদ্ধে এসেছে ৫৫টি অভিযোগ, ৩৭টি অভিযোগ এসেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বিরুদ্ধে। ডিজিএফআই বা সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ২৬টি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ২৫টি। এছাড়া অন্যান্য বাহিনী বা সংস্থার বিরুদ্ধে এসেছে ৬৮টি।
কমিশনের সদস্য মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন জানান, তারা ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের ফোন করেছেন। এখন তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে আটটি অবৈধ বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার বিস্তারিত বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। কত নিষ্ঠুরভাবে মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, বুঝানো যাবে না।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গুম সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩১ অক্টোবর। তবে যে কেউ চাইলে এখনও অভিযোগ দিতে পারবেন। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গুম কমিশনে অভিযোগ জমা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ এর মতো। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৪০০ অভিযোগকারীর মধ্যে ১৪০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের সভাপতি জানান, গুমের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত সদস্যকে ডাকা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত অন্যদেরও ডাকা হবে।
তিনি আরও বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের যেসব গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতন করা হতো, সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। আলামত নষ্ট করা হয়েছে। তবে যারা আলামত নষ্ট করছেন, তাদের সতর্ক করেছে কমিশন। যারা আলামত ধ্বংস করছেন, তারা গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আলামত ধ্বংস না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম ও ফেরত আসার ঘটনা উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হয়, পার্শ্ববর্তী কোনো রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা আছে কি না? এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক ঘুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত 'গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারিতে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০ অভিযোগ জমা পড়েছে।
রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে কমিশনের কার্যক্রম বিষয়ে অদ্য এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে প্রচলিতভাবে "আয়নাঘর" বা "বন্দিশালা" নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, ডিবি, সিটিটিসি, র্যাব সদরদপ্তর, র্যাব-১, র্যাব-২ ও র্যাব-১১ এর ইন্টারোগেশন সেল অত্র কমিশন পরিদর্শন করেছে। অভিযোগকারী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ সদস্যকে অত্র কমিশন সম্প্রতি শুনানিতে
অংশগ্রহণের জন্য সমন প্রেরণ করেছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অভিযোগের সহিত সংশ্লিষ্টদেরকেও সমন প্রেরণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলী, মো. নূর খান, ড, নাবিলা ইদ্রিস এবং মো. সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।