গভীর রাতে গোলাম দস্তগীরের বাসায় ঢুকে মালামাল নিল কারা?
সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সিদ্ধেশ্বরীর বাসার চারটি কক্ষে এভাবে জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে গত শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় ঢোকেন একদল লোক। গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙেন। পরে বাসার চারটি কক্ষের আসবাব ভাঙচুর ও তছনছ করেন তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বাসা থেকে বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা। এ সময় তারা একটি কার্টন ও দুটি বাজারের ব্যাগে ভরে বেশকিছু জিনিসপত্র নিয়ে যান। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তারক্ষীরা এমনটাই দাবি করেছেন।
এদিকে, ওই বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে, এমন শঙ্কা থেকে রাতেই রমনা থানায় গিয়েছিলেন গাজী গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তখন তাকে বলা হয়, সেখানে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযানে গেছে।
দৈনিক প্রথম আলোর এক খবরে বলা হয়, আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাসায় অভিযানে গিয়েছিল ডিবি। তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিককে একাধিকবার ফোন করার পাশাপাশি মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো হয়। তবে তিনি তাতে সাড়া দেননি। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিবির কোনো দল সেখানে অভিযানে যায়নি।
বাসার নিরাপত্তাকর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তিনটি মাইক্রোবাসে ১৫–২০ জন রাত দুইটার দিকে বাসার সামনে আসেন। তাদের দুজনের গায়ে থানা–পুলিশের পোশাক ছিল। কয়েকজনের গায়ে ডিবির জ্যাকেট ছিল। বাকিরা ছিলেন সাদাপোশাকে। ফটকে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অভিযান চালানোর কথা বলে বাসার ভেতরে ঢুকতে চান। নিরাপত্তাকর্মীরা তালা খুলতে রাজি না হলে তারা তালা ভেঙে বাসার ভেতরে ঢোকেন। দোতলা বাসার চারটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করে স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে যান।
আজ সরেজমিনে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাসার দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষের জিনিসপত্র অগোছালো অবস্থায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে খাট ও মেঝেতে পড়ে আছে। প্রতিটি কক্ষের আলমারি ভাঙচুর করা হয়েছে। স্বর্ণালংকার রাখার বাক্সগুলো খালি পড়ে আছে।
বাসার নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন বলেন, রাত ২টার দিকে বাসার পেছনের গেটের সামনে এসে কয়েকজন ডাকাডাকি শুরু করেন। তখন তিনি গিয়ে পরিচয় জানতে চান। তারা ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে গেট খুলে দিতে বলেন। ডাকাত ভেবে গেট না খুলে তিনি ও আরেকজন নিরাপত্তাকর্মী দেয়াল টপকে পাশের একটি বাসায় চলে যান। পাশের বাসার জানালার কাছে বসে পুরো ঘটনাটি দেখেন তারা।
আবুল হোসেন বলেন, গেট না খোলায় দেয়াল টপকে একজন ভেতরে ঢোকেন। তিনি একটি রড দিয়ে গেটের তালা ভেঙে বাসার ভেতরে ঢোকেন। দুজনকে গেটে পাহারায় রেখে ১০–১২ জন বাসার ভেতরে ঢোকেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মী আবুল হোসেন বলেন, বাসায় ঢুকেই তারা দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। এরপর গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। বিকট শব্দে গেট ও কক্ষের তালা ভাঙা হচ্ছিল, সেটা পাশের বাসা থেকেই শুনতে পাচ্ছিলেন তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বাসার ভেতরে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বেরিয়ে যান তারা।
পাশের বাসা থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন এক নারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বেরিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা একটি কার্টন ও দুটি ব্যাগ ভরে জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন। সেগুলো গাড়িতে রেখে এসে এলাকার এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। নিরাপত্তাকর্মীকে বলা হয়, তারা বাসা থেকে কোনো জিনিসপত্র নেননি, সেটার সাক্ষী তিনি। ভয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মী কোনো কথা বলেননি।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তার স্ত্রী আত্মগোপনে আছেন। দুই ছেলে আছেন বিদেশে। তাদের একজন ভারতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী হাসিনা গাজীকে গ্রেপ্তার করতে ওই বাসায় গিয়েছিল ডিবি। তবে বাসায় তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে গাজী গ্রুপের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা প্রথমে মনে করেছিলেন বাসায় ডাকাতি হচ্ছে। রাতেই তারা রমনা থানায় যান। তখন রমনা থানার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই বাসায় ডিবির অভিযান চলছে।