আ.লীগের কাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে পরোয়ানা
রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আশ্রয় নিলেন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর
আমেরিকা সফরে গিয়ে আইনি জটিলতার ফাঁদে পড়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের এক সিদ্ধান্তের ঘটনায় ২০০৬ সালের মামলায় বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আমেরিকার ম্যারিল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে গত সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আসেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত চলার কথা ওই সভা। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী দলে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সাতজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।
একাধিক সূত্রের বরাতে আমেরিকার বাংলাভাষী সংবাদমাধ্যম ঠিকানানিউজ ডটকম জানায়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ৯ কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে একটি হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে তারা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেন। কিন্তু আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কারণে বৃহস্পতিবার তারা নির্ধারিত কোনো সভায় যোগ দিতে পারেননি। বরং গ্রেপ্তার আতংকে তারা হোটেল ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ম্যারিল্যন্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সুরক্ষিত বাসায় অবস্থান করছেন।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূতের বাসা কূটনৈতিক এলাকায় হওয়ায় পূর্বানুমতি ছাড়া সেখান থেকে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ কার্ল জে নিকোলস ২৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এক আদেশে সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুরকে আটক করে আদালতে আনার জন্য ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাওয়ার খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্মিথ কোজেনারেশন কোর্টে ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের একটি সালিশি মামলা করেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা এবং গভর্নর শুক্রবারের কোনো অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। অনুষ্ঠান কাভার করতে বাংলাদেশ থেকে আগত এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা সারাদিন অপেক্ষা করেও কোনো অনুষ্ঠানে তাদের দেখা পাননি।
দূতাবাস সূত্র আরও জানায়, গ্রেপ্তার আদেশের খবর পাওয়ার পর ২৩ অক্টোবর বুধবার রাতে হঠাৎ করেই অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর ওয়াশিংটন ডিসির ১০ নং সড়কে অবস্থিত অ্যাম্বেসি স্টু হোটেল ছেড়ে দেন। দূতাবাসের গাড়িতে করে তারা দুইজনই ম্যারিল্যান্ডের বেথেসদা ৪ নং হাইবোরো কোর্টের বাসায় চলে যান। শুক্রবার সারাদিন তারা বাসা থেকে বের হননি। সেখানে বসেই দূতাবাসের মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
নিউইয়র্কভিত্তিক আইনি সংবাদ প্রকাশক ল-৩৬০ জানিয়েছে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিল। ১৯৯৯ সালে সরকার চুক্তি বাতিল করায় স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে। বৃহস্পতিবার বিকালে ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলাটির দ্রুত আপিল করা হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের নেই। অবিলম্বে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করার অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে, আজ শনিবার সদ্য রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মুশফিকুল ফজল আনসারি এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেছে দেশটির আদালত।
তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক একটি চুক্তি বাতিলের দায়ে স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলা করে। ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারের সাথে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিল সরকার। এই মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট কোর্ট অনেকটা এখতিয়ার বহির্ভূত একটি রায় প্রদান করে, যা আজ শুক্রবার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। যদিও বিষয়টির সাময়িক অবসান ঘটেছে, তবে লুটেরা সরকারের দায় রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিতে পারে না। বাংলাদেশ সরকারের সে সময়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে এবং বিষয়টি বর্তমান সরকারের নজরে না এনে ধামাচাপাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’