গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার কেন সাংবিধানিক পথে, বিপ্লবী নয় কেন
আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা
সব রাজনৈতিক দল মিলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা চিন্তা করেছিল। সংবিধান কোনো সমস্যা কিনা সেই আলোচনা তখন আসেনি। ফলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সে সময় এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়নি।
রাষ্ট্রের নানা রকম সংস্কার প্রয়োজন বলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মতামত আসতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতিকে নিয়েও দেখা দেয় অসন্তোষ। কিন্তু সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করলেও জটিলতা রয়েছে। ভাল হতো সরকার যদি সংবিধান স্থগিত করত এবং বিপ্লবী সরকার গঠন করত।
এমনটা কেন হলো?
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবিধানিক পথে যাত্রাটা যদি ভুল হয়ে থাকে, তা আমাদের সবার ভুল।"
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, "এই প্রশ্নটা অনেকেরই, এটা নিয়ে এর আগে বলিনি। আজকে বলছি।"
তিনি বলেন, "সরকার পতনের পর প্রথম যে মিটিংটা হল, সেখানে আমি গেলাম। আমাকে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে একজন ফোন করল। আমি তো হতবাক। আমি তো বুঝতেই পারছি না, আমাকে কি মারার জন্য ফোন করেছে? আমার স্ত্রী হু হু করে কান্না শুরু করল, বলল 'তুমি যাইও না, তোমাকে মেরে ফেলবে'। তারপর আমি যখন গেলাম, গিয়ে দেখি বাংলাদেশের সকল পলিটিক্যাল পার্টি সেখানে আছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া।"
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, হেফাজত ছিল। এসব উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, "সাংবিধানিক পথে যাত্রা উনারা সবাই মিলে শুরু করেছেন। তাহলে আমি কে? আমাকে উনারা বললেন, আপনি সামনে থাকেন, তাহলে ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হবে না।"
উপদেষ্টা নির্বাচনের কিছু বিষয়ে ছাত্রনেতারা মতামত নিলেও পুরো প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন না বলেও দাবি করেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, "পরে গণতন্ত্র মঞ্চও আসছে। যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, প্রত্যাকটা দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত বড় টেবিল, এক কোণার মধ্যে বসেছিলাম আমি। সেখানে আমি একটা কথায় সবচেয়ে জোর দিয়ে বলেছিলাম, খালেদা জিয়াকে আজই মুক্তি দিতে হবে।"
তিনি বলেন, "পুরো প্রক্রিয়ায় কেউ বলে নাই, কেন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শপথ নেব? এত ছাত্রনেতা ছিল, এতগুলো পলিটিক্যাল দল, নো বডি, কেউ তো বলে নাই। এখন এটা কি দোষের ব্যাপার? না। তখন এমন একটা সিচুয়েশন ছিল, খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে করা হয়নি। আর সাংবিধানিক পথে যাত্রাটা যদি ভুল হয়ে থাকে, তা আমাদের সবার ভুল।"
'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আসিফ নজরুল এ বিষয়ে কথা বলেন।
প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ ও ব্রেইন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।