ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৯৮৬ জন নিহত: এইচআরএসএস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ এএম
২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৯৮৬ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইট্স সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভিকটিমের পরিবার, ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের বিষয়ে পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করেছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোর সূত্র থেকে আমরা এ পর্যন্ত ৯৮৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। এর মধ্যে ৮৬৮ জনের নাম জানা গেলেও ১১৮ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়া গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসকল বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ জন হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১২৭ জন শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এবং ১৩ জন মেয়ে শিশু ও নারী নিহত হয়েছে।
বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ
৯৮৬ জনের মধ্যে ৭৬০ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৪ বছরের আহাদ ও ৬ বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সকল বয়সী মানুষই রয়েছেন। ৭৬০ জনের মধ্যে ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু ১২৭ (১৭%) জন, তরুণ বয়সী ৪১৮ (৫৫%) জন, মধ্যবয়সী ১৮১ (২৪%) জন, এবং বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ৩৪ (৪%) জন । উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো নিহতদের মধ্যে যাদের বয়স জানা গেছে তাদের ৭২% এর বয়স ৩০ এর মধ্যে।
পেশাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ
নিহতদের মধ্যে ৫৫৬ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ২৬৫ (৪৮%) জন, শ্রমজীবী আছেন ১৩৩ (২৪%) জন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ৫১ (৪%) জন, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ৪১ (৭%) জন, অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ৬৬ (১২%) জন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭১% এর বেশি।
নিহতদের ধরণ সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মোট ৮৭৯ জনের মৃত্যুর ধরণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭৯ (৭৭%) জন গুলিতে, ৯১ (১০%) জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৮৪ (১০%) জনকে পিটিয়ে এবং অন্যান্য কারণে মারা গিয়েছেন ২৫ (৩%) জন।
সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর তথ্য বিশ্লেষণ
গণঅভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া বিপ্লবে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর বিষয়ে ৬৬০ জনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুধুমাত্র পুলিশের হামলায় ৫১৮ (৭৮%) জন, অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৫২ জন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ৫২ জন, এবং গণপিটুনিতে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
তারিখ ও মাস ভিত্তিক নিহতদের তথ্য বিশ্লেষণ
আমাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৯৮৬ জনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ জন ও ৪ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র ৭ দিনে (১৮-২০ জুলাই ও ৪-৭ আগস্ট) ৮৫২ নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ ই আগস্ট কমপক্ষে ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ১৬ জুলাই ৫ আগস্ট সারাদেশে কমপক্ষে ৭৭২ জন নিহত হয়েছেন।
৬-৮ আগস্ট যখন দেশে কোন সরকার বিদ্যমান ছিল না তখন কমপক্ষে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ আগস্ট- ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯ জন মারা গেছেন যাদের অধিকাংশই পূর্ববর্তী ঘটনায় আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহত ৯৭৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সংঘর্ষে ৬১৪ জন, চট্টগ্রাম ১০৪ জন, খুলনায় ৮০ জন, রাজশাহীতে ৬৫ জন, ময়মনসিংহে ৪৪ জন, রংপুরে ৩৫ জন, সিলেটে ২৩ জন এবং বরিশালের আছেন ১২ জন। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গিয়েছেন ঢাকা বিভাগে ৬১৪ জন ও সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ১২ জন।