Logo
Logo
×

সংবাদ

দুবাইয়ে আরও ৩০০টির বেশি বাড়ির খোঁজ

লন্ডনে ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

Icon

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

লন্ডনে ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে সাইফুজ্জামানের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য আল-জাজিরার আই-ইউনিটের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। তবে তিনি ইতিমধ্যে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। সোমবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের (আই-ইউনিট) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে লন্ডনে ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাবেক এই ভূমিমন্ত্রী। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন করে আরও ৩০০টির বেশি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে তারা। এই অনুসন্ধান করেছেন আই-ইউনিটের জুলকারনাইন সায়ের খান ও উইল থর্ন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রিটেনে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে। এর মাঝেই আদালত তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। যদিও সাবেক এই মন্ত্রী বর্তমানে লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছেন। সম্প্রতি সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে আল-জাজিজার অনুসন্ধানী টিম। ওই এলাকায় তার ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তি রয়েছে; যা তার যুক্তরাজ্যে গড়ে তোলা সম্পদের সাম্রাজ্যের ছোট একটি অংশ।

এর আগে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর আল জাজিরার প্রকাশিত দ্য মিনিস্টারস মিলিয়নস শিরোনামের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা) খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। সবমিলিয়ে তিনি সাত শতাধিক বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। যা বাংলাদেশি ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

দুবাইয়ে আরও সম্পত্তি

গত সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ‘দ্য মিনিস্টারস মিলিয়নস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা সম্পদের সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। যার বাজার মূল্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাবেক এই মন্ত্রী আল জাজিরার ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের কাছে নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন বলে জানান। ২০১৬ সাল থেকে তিনি কেবল যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টির বেশি বাড়ি কিনেছেন।

দুবাইয়ে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে যা ধারণা করা হয়েছিল, তারচেয়েও বেশি বলে আল জাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে ফাঁস হওয়া ২০২৩ সালের সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরী; যার মূল্য ১৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

আই-ইউনিটের কাছে আসা তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামান দুবাইয়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরও ৫০টি বাড়ির তালিকাভুক্ত মালিক। অর্থপাচারের অভিযোগে রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে তদন্ত চলছে।

২০২০ ও ২০২২ সালের দুবাইয়ে থাকা সম্পত্তির ফাঁস হওয়া ডাটায় এই দম্পতির তালিকাভুক্ত অন্য ৫৪টি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়। আল জাজিরার আন্ডারকভার ফুটেজে মর্যাদাপূর্ণ অপেরা জেলায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করতে দেখা যায় পলাতক এই মন্ত্রীকে। আর জমির রেকর্ডেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক তিনি; যার মূল্য ৫০ লাখ ডলারের বেশি।

ফাঁস হওয়া নতুন তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে এই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬০০টিরও বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

অর্থপাচারের তদন্ত

বাংলাদেশের মুদ্রা আইনে কোনও নাগরিককে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তার অফশোর সম্পদের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশের কর আইন লঙ্ঘন করেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক মন্ত্রীদের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। দেশের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। ব্রিটেনে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত।

তবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী আল জাজিরাকে বলেন, বাংলাদেশের বাইরে নিজের বৈধ ব্যবসা থেকে পাওয়া অর্থে বিদেশি সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহার করেছেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার মালিক। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিকারে পরিণত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও রুখমিলা জামানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন