হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন: আসিফ নজরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আজ সোমবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন-উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা মিথ্যাচার। এটা উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘উনি (রাষ্ট্রপতি) নিজেই ৫ই আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সব সব বিচারপতিরা মিলে ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে মতামত দেন, রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। এর প্রথম লাইন ছিল, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তারপর অন্যান্য কথা।’
তিনি বলেন,‘ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠিয়েছি।’
নোটে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর দেখিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এই মতামতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর উনি নিজে অন্তর্বর্তীকালীন গঠন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘৫ই আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে নিজের মুখে ভাষণে বলেছেন, উনাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং উনি গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে একের পর এক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, উনি পুরো জাতির কাছে বিভিন্নভাবে নিশ্চিত করেছেন, আবারও নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি গ্রহণ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি। এত দিন পরে, প্রায় আড়াই মাস পরে, তাহলে এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়। উনার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এই পদে থাকার যোগ্যতা উনার আর আছে কি না প্রশ্ন আসে। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকলে বা গুরুতর অসদাচরণ করলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকতে পারে কি না সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের দেশের সংবিধানে আছে।’
রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন উনার স্ববিরোধী কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি উনি এই বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে উনার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখা হবে।’